স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চৌধুরী ফজলুল বারী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দেশত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের আগে ২০০৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর এরশাদকে এ আলটিমেটাম দিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার বারী। ওইদিন তিনি এরশাদের বারিধারার বাসায় এসে বলেছিলেন, প্লেনের টিকিট ও বিশ হাজার ডলার রেডি, দ্রুত দেশত্যাগ করেন।
কী পরিস্থিতিতে এক এগারোর সময় ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হয়েছিলেন তার প্রেক্ষাপট বলতে গিয়ে পানি সম্পদমন্ত্রী ওই সময়ে এরশাদকে ঘিরে যা কিছু ঘটেছে তার সবকিছুই তুলে ধরেন।
আনিস বলেন, ‘এক এগারোর আগে ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর ছিল আওয়ামী লীগের জনসভা। তিনদিন আগে ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার বারী আমাদের অবর্তমানে এরশাদের কাছে এসে আলটিমেটাম দেন। বলেন, বিশ হাজার ডলার ও টিকিট রেডি। দ্রুত দেশ ত্যাগ করেন।’
‘আলটিমেটাম দেওয়ার কিছুক্ষণ পর এরশাদ আমাদের ডাকেন। এ সময় আমি, জিয়াউদ্দিন বাবলু, গোলাম মসীহ ও রেজা চারজন তার কাছে গেলাম। উনি বললেন আমাকে দেশত্যাগের আলিটিমেটাম দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমি যেতে চাই না। বিদেশে গেলে আমি মরে যাবো। তখন আমরা বললাম আপনার যাওয়ার দরকার নেই। প্ল্যানমত আমরা তাকে ১৬ ডিসেম্বর জিয়াউদ্দিন বাবলুর বাসায় নিয়ে আসি। তিনি দুইরাত সেখানে কাটান।’
তারপরের ঘটনা বর্ণনা করে জাতীয় পার্টির এ শীর্ষনেতা বলেন, ‘১৮ ডিসেম্বর মহাজোট গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের জনসভা। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জলিলের সঙ্গে তার মার্কেন্টাইল ব্যাংকে আগেই চলে যাই। আর এরশাদ আলাউদ্দিন নাসিম ও বাবলুসহ গাড়ি করে সেখানে পৌঁছান। তার উপস্থিতিতেই দলীয় চুক্তি সম্পাদিত হয়। তারপরই আমরা এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে জনসভায় পৌঁছি। গঠিত হয় মহাজোট।’
‘এর পরপরই দেশে মার্শাল ল আসতে পারে জল্পনা কল্পনা চলছিল। চারদলীয় জোট সরকারের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধে নানা কৌশল নেওয়া হচ্ছিল। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর দেশে প্রত্যাবর্তন দিবসে এরশাদ বক্তব্য রাখেন। ১১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। যদিও আমরা আগ থেকে বিষয়টি জানতাম। যুক্তরাজ্য হাইকমিশনার আগেই এরশাদের বাসার নীচে এসে জরুরি অবস্থার বিষয়টি জানিয়ে দেন। তার কিছুক্ষণ পরেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।’
‘তারপর মাইনাস টু, মাইনাস থ্রি ফর্মুলা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বেগম জিয়া ও এরশাদকে ষড়যন্ত্র করে দলীয় প্রধান থেকে সরানো হবে। এমন প্রশ্ন ঘুরপাকের মধ্যেই প্রথমেই গ্রেফতার করা হয় শেখ হাসিনাকে। তারপর বিএনপি চেয়ারপারসন গ্রেফতার হন। এরপর পালা এরশাদের।’
‘গ্রেফতার এড়াতে এরশাদ নিজেই তাদের সঙ্গে সমঝোতা করলেন। বললেন, প্রয়োজনে দলীয় পদ থেকে তিনি সরে যাবেন, তারপরও গ্রেফতার হবেন না। তাই হলো। সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী প্রথমে কাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের, তিনি রাজী হলেন না। পরে আমাকে প্রস্তাব করা হয়। সঙ্গত কারণে আমি এরশাদের নির্দেশে দায়িত্ব গ্রহণ করি। আর দায়িত্ব নেওয়ার কারণে তিনি মাইনাস হননি। দুই বছর এরশাদকে চেয়ারম্যান রেখেই আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করি। অথচ এখন বলা হচ্ছে আমি নাকি এরশাদের কাছ থেকে জোর করে ক্ষমতা নিয়েছি। একথা সঠিক নয়।’
দুদিন আগে শেরপুরে দলের জেলা সম্মেলনে এরশাদ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে এক এগারোর কুশীলব উল্লেখ করে বিচার দাবি এবং জোর করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন।
এরশাদের ওই বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়েই মঙ্গলবার পানিসম্পদমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তার বক্তব্যে ‘ওয়ান ইলেভেন, ব্রিগেডিয়ার বারীর আলটিমেটাম ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হওয়ার প্রসঙ্গ উঠে আসে।