বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
যানজট সমস্যার ভারে জর্জরিত এখন প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাত শহর নারায়ণগঞ্জ। তার মধ্যে যানজট তৈরিতে নতুন যুক্ত হয়েছে বুড়িগঙ্গা ট্রান্সপোর্টের লেগুনা। এই সার্ভিস চালুর দ্বিতীয় দিনেই শহরে তীব্র যানজটে পরিনত হয়েছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন যানজট নিয়ে নগরবাসীর হাহাকার। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের যানজট নিরসনে ট্রাফিকের ভূমিকায় কাজ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। কিন্তু তারই অনুসারীদের পরিচালনাধীন “বুড়ি গঙ্গা ট্রান্সপোটর্” এর লেগুনা সার্ভিস নগরবাসীর যানজটের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা প্রতিনিয়ত তীব্র যানজটের কারনে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে শহর ও বিপাকে পড়েছে শহরবাসী। জানা যায় চাষাঢ়া থেকে মোক্তারপুর পর্যন্ত এই বুড়িগঙ্গা ট্রান্সপোর্টের লেগুনা সার্ভিস চালু করা হয়েছে। যা নগরবাসীকে আরো ভোগান্তিতে ফেলছে।
সড়ক প্রকোশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদদের পরিকল্পনা বিহিন নগরায়ন নীতিমালা, পর্যাপ্ত ফুটপাত নীতিমালা না থাকায়, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অবৈধ যানবাহন চলাচল ও অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা যানজটের আরেকটি প্রধান কারন। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ এখন ঘর ও কর্মস্থলে যাতায়াতে অনীহা প্রকাশ করছে। মানুষ ৩০০ গজের ভিতর যাতায়াতে আরমদায়ক হিসেবে রিকশার উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়ছে না রাস্তার দৈর্ঘ্য। ফুটপাতে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক হকারদের অবৈধ্য স্থাপনার ফলে নারায়ণগঞ্জের মানুষ হাঁটার সংস্কৃতি থেকে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনে যারা চলাচল করছে তাও রাস্তার উপর দিয়ে। শহরের রাস্তার ৮০ ভাগ আজ রিকশার দখলে।
জানা যায়, এক লাইসেন্স নিয়ে রিক্সা চলছে কমপক্ষে ১০ টা । সবসময় দেখা মিলে রাস্তার পাশে থেমে থাকা শত শত রিকশার লাইন। ফলে রিকশার পরিমান অতিরিক্ত হওয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায় যে, শহরের ব্যস্ততম এলাকা নিতাইগঞ্জ, ডিআইটি, দিগু বাবুর বাজার, উকিলপাড়া , কালীরবাজার ও চাষাঢ়ায় কয়েকটি স্থানে দূর পাল্লার গাড়ি যাত্রীসহ মালামাল বহন করে থাকে। যা সম্পূর্ন রাস্তার উপর ভিত্তি করে মাল লোড আনলোড করে থাকে তাদের কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই বলেই চলে। বিশেষ করে নিতাইগঞ্জ এলাকায় রাস্তার পাশে ঘন্টার পর ঘন্টা চার পাঁচ লাইনে ট্রাক রেখে রাস্তা বন্ধ করে মালামাল লোড আনলোড করতে দেখা যায়। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশী সমস্যার সৃষ্টি করছে শহরের গড়ে উঠা আধুনিক মার্কেট ও হাউজিং ভবনগুলো। তারা নিয়ম নীতি না মেনেই যত্রতত্র পাকিং ব্যবস্থা করে থাকে। শহরের বিভিন্ন মার্কেটগুলোর সামনের রাস্তায় সবসময় গাড়ি থামিয়ে রাখতে দেখা যায়। এদিকে নগরীর মূল দুটি পয়েন্টে ১৬ বার রেল ক্রসিং হয় এবং নারায়ণগঞ্জের মূল সড়কে প্রায়ই একশ এর অধিক গাড়ি চলাচল করে যা যানজট তৈরিতে যথেষ্ট। তার মধ্যে যুক্ত হয়েছে ২০টি লেগুনা চলাচল করলেও সব মিলিয়ে ৩০টি গাড়ি প্রতিদিন ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করবে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের এ ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যোগ নেই বলেই চলে। যানজট তীব্র আকার ধারন করায় নারায়ণগঞ্জের জনসাধারনের মধ্যে চরম ক্ষোভে পরিনত হচ্ছে।
এ বিষয়ে চাষাঢ়া এলাকার এক পথচারী মো. সালাম জানান, এমনিতেই শহরে দীর্ঘ সময় ধরে যানজট লেগে থাকে। যেসব কারনে যানজটের সৃষ্টি হয় তার কোন সমাধান না করে তার মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে চাষাঢ়া থেকে মুক্তারপুর লেগুনা সার্ভিস। যার জন্য আমাদের আরো যানজটের ভুগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া এই লেগুনার বেপোরোয়া চলাচলে যেকোন সময় ঘটতে পারে মৃত্যুর ঘটনা।
অন্যদিকে অতিরিক্ত যানজট দেখে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে অন্ধের ভুমিকা পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ। এমতাবস্থায় নারায়ণগঞ্জবাসীকে যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্ত করতে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংসদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন নগরবাসী।