স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করে দলটির রাজনীতিকে স্তব্ধ করতে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে এর দর্শনকে ধ্বংস করতে ১/১১ তে অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল বলে দাবি করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের যে দর্শনে বিশ্বাস করে মানুষ তার ওপর আস্থা রেখে পথে এগিয়ে চলেছিল, সেটাকে রোধ করার চেষ্টা হয়েছিল।’
যেভাবে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল, সেভাবে এক-এগারোতে একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শুধু তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়নি, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের যে নেতৃত্ব, তা শূন্য করে দিতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, মূল বিষয়টি ছিল বাংলাদেশের পক্ষে যারা কথা বলেন, দেশের স্বার্থে যারা রাজনীতি করেন, দেশের পক্ষে যারা অকুতোভয় থাকেন; রাজনীতি থেকে তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া।
দেশের গণতান্ত্রিক মৌলিক কাঠামো ভেঙে দিতে ১/১১-র পেছনে একটি গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছিল মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করা। সেই কারণেই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারক তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে দেশনেত্রীকেও (খালেদা জিয়া) গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরপর জাতীয়তাবাদের রাজনীতি যারা করেন সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। দেশের রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
তারেক রহমানের ‘দশম কারাবরণ দিবস’ উপলক্ষে যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্রফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম।
সাম্প্রতিক সময়ে এক-এগারোর কুশীলবদের বিচারের দাবিতে ক্ষমতাসীনদের সোচ্চার হওয়ার বিষয়টিরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আজকে যারা ১/১১-র বিপক্ষে কথা বলছেন, তারাই কিন্তু সে সময় ওই সরকারকে বৈধতা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তারা বলেছিলেন, ওই সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। এখন যখন আঁতে ঘা লেগেছে, তারা আক্রান্ত হয়েছেন; তখন ১/১১-র কথা বলছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের কোনো বিচার না করে আজকে তারা কথা বলছেন। বারবার ১/১১-এর কুশীলবদের বিচার দাবি করা হয়েছে। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা) এ নিয়ে মামলাও করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের প্রতীক। তাকে যদি স্তব্ধ করা যায়, রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়; তাদের পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। ১/১১ তে তারেক রহমান শুধু গ্রেফতার হননি, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। এখন তিনি নির্বাসিত হয়ে আছেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘এখন তার (তারেক রহমান) বক্তব্য দেশে প্রচার করতে দেওয়া হয় না। কেন? যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তো এত ভয় কেন। ভিন্নমতকে কেন এত ভয়? কেন বিরোধী দলের মতামতকে প্রকাশ করতে দেন না?’
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় রাষ্ট্রদ্রোহের কথা নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রদ্রোহ কাকে বলে? যা রাষ্ট্রের মূল কনসেপ্টের বিরুদ্ধে যায় অথবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এটি স্পষ্ট যে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে মামলা দায়ের হয়েছে।’
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাতে ১/১১ থেকেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে অত্যন্ত কৌশলে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে। আজ পর্যন্ত একটি দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। যেটার রায় হয়েছে সেটায় তিনি খালাস পেয়ে গেছেন। উদ্দেশ্য, তাকে জনগণের সামনে হেয় করা।’
তিনি বলেন, ‘হত্যা-গুম-নির্যাতন করে বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে না।’ গণতান্ত্রিক মৌলিক কাঠামো রক্ষা এবং ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে তরুণদের প্রতি অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, ‘ফেলানীর লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা, দেশকে মরুভূমি বানানোর বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা বলতে না পারেন সে জন্য জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিতে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছে।’
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতাসীনদের হামলায় ১৭৮টি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন দিয়ে অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়।’ এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, সরকার বিভিন্নভাবে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল আয়োজনে বাধা দিচ্ছে।
১/১১-এর ঘটনাকে ‘সামরিক অভ্যুত্থান’ আখ্যা দিয়ে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘অভ্যুত্থান শুধু সামরিক বাহিনী করে না, প্রচুরসংখ্যক রাজনীতিবিদ এর প্রেক্ষাপট প্রস্তুতে সহায়তা করে। যেমনটি ঘটেছিল ১/১১-তে।’
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল মাহমুদ টুকু, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, ছাত্রদলের সহসভাপতি নাজমুল হাসান।