স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যাকাণ্ডকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ উল্লেখ করে এজন্য এই ধর্মগুরুর স্বজনদের দায়ী করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
শুক্রবার রাতে মন্দিরে ধ্যানরত অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করা হয় চাকপাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ মং শৈ উ (৭০)কে। সকালে তার রক্তাক্ত লাশ দেখে স্থানীয়রা পুলিশে জানায়।
উত্তরাঞ্চলে সম্প্রতি খ্রিস্টান যাজক ও হিন্দু পুরোহিতের উপর যেভাবে হামলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের ধরনও তেমনি। তবে পার্বত্যাঞ্চলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড এটাই প্রথম।
যাজক ও পুরোহিতের উপর হামলায় বিভিন্ন সন্দেহভাজন জঙ্গিদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিললেও ভিক্ষু হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত- তাৎক্ষণিকভাবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।
শনিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা ভিক্ষু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। এর সঙ্গে তার (ভিক্ষু) আত্মীয়-স্বজন জড়িত রয়েছে বলে মনে করছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত শিক্ষক-ছাত্র-সুধী সমাবেশের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মন্ত্রী।
অধ্যাপক রেজাউল করিমকে গত মাসে রাজশাহীতে তার বাড়ির কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এতে জঙ্গিরা জড়িত বলে পুলিশের ধারণা।
এরআগে, শিক্ষক-ছাত্র-সুধী সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের খুব শিগগিরই সামনে আনা হবে এবং বিচারেরর কাঠগড়ায় দাঁড় করবো। আমরা খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা রাজশাহীতে পুলিশের দৃশ্যমান টহল বাড়ানো হবে। যাতে আপনারা নিরাপদ বোধ করতে পারেন। হত্যাকাণ্ডের দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আপনারা শিক্ষক রেজাউল হত্যার বিচার দাবির আন্দোলন পরিত্যাগ করে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখুন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশি ও বিদেশি চক্রান্তের অংশ হিসেবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। এই হত্যাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমরা খুব শিগগিরই অপরাধীদের খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলব না।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজমের সঞ্চালনায় শিক্ষক হত্যার বিচার দাবির আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে আরো বক্তব্য দেন- শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাকসুদ কামাল প্রমুখ।
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভাগের সভাপতি ড. এএফএম মাসউদ আখতার ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নিহত শিক্ষকের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি বক্তব্য দেন। এর আগে সমাবেশের শুরুতে নিহত শিক্ষকের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
দেশের শিক্ষা পরিবার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ উল্লেখ করে সমাবেশে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশের শিক্ষা পরিবার অত্যন্ত মর্মাহত। একজন স্বার্থক শিক্ষকের এ রকম হত্যাকাণ্ড মানা যায় না। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে হলে আগে শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দ্রুত সমাপ্তি চাই। আমরা চাই অপরাধীদের দ্রুত বিচার করা হোক।
এ ধরনের হত্যকাণ্ড প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও তিনজন শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। পুলিশের দায়িত্ব একজন অপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া পর্যন্ত। তারপর যারা দায়িত্ব পালন করেন আপনাদের দাবি যেন তাদের কাছেও পৌঁছে আপনারা সেই উদ্যোগ নেবেন। আপনাদের ভীত হওয়া চলবে না। আপনারা ভীত হলে তারা সুযোগ পাবে, তারা বিজয়ী হবে। তারা ভীতি তৈরি করার জন্যই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। সব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হবো না।
সমাবেশে পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, আমরা তদন্তে স্বার্থে অনেক কিছু বলতে পারি না। পুলিশ নীরব নেই, তারা কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশের প্রতি আপনাদের আস্থা রাখতে হবে। আমাদের তদন্তে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। আপনারা শিগগিরই তা দেখতে পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস একটু ভিন্নভাবে উপলব্ধি করা দরকার। দীর্ঘকাল ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে চক্রান্ত হয়ে আসছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করার সব ধরনের কর্মপ্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এই কর্মপ্রয়াসের সঙ্গে বাইরের শক্তির সঙ্গে ভেতরের শক্তিও জড়িত আছে। দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য মন্ত্রীদের আহ্বান জানান।
অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও পিতৃহারা। তাই আমি বিশ্বাস করি আমি তার কাছ থেকে বিচার পাব। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি বিচার পাবো। আমি চাই, সব অপরাধীদের সত্যিকার অর্থে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহস্রাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রাজশাহীর সর্বস্তরের নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।