স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
রিজার্ভ চুরি ঘটনার সঙ্গে সন্দেহভাজন জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি।
এরা ডিলিং রুম শাখা ও আইটি শাখায় কর্মরত। এরমধ্যে একজন ডেপুটি গভর্নরও আছেন। তথ্য জানে- এ রকম সন্দেহভাজন আরও কয়েকজনকে বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে মামলার তদারকি কর্মকর্তা ও পুলিশের ডিআইজি শাহ আলম জানান, ব্যাংক থেকে তথ্য-প্রমাণ শেষ করা হয়েছে। এখন এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয়। যারা টাকা যাওয়ার ঘটনার ব্যাপারে জানেন। কেননা, তাদের ব্যবহৃত কমিম্পউটারে নানা তথ্যের অসামঞ্জস্যতা দেখা যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের পরই তাদের ব্যাপারে সংস্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে তাদের নাম বলা যাচ্ছে না।
এক প্রশ্নে সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। তদন্তে কি ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে, কাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তথ্য নেয়া শেষ হলেও প্রয়োজনে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে।’
সিআইডির একটি সূত্র বলছে, ‘ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছর অক্টোবরে সুইফট কম্পিউটারে তথ্য পাচার হয়। লেনদেন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি সফটওয়্যার ইনস্টল (সংযোজন) করা হয়। যারা সফটওয়্যার সংযোজন করেছে তাদের নামও বেড়িয়ে এসেছে। এই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন কিছু তথ্য পাচার হয়। এই সিস্টেমের মাধ্যমে চেক জমা দিলে ১ মিনিটের মধ্যে অ্যাকাউন্টে টাকা ক্রেডিট হয়। তবে রিজার্ভ সংরক্ষণের জন্য যে কম্পিউটারের মাধ্যমে সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) লেনদেন হতো, সেই কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগও ছিল না। সুইফট পরিচালনার জন্য বেলজিয়ামে সুইফটের ওই প্রতিষ্ঠানের মূল সার্ভারের সঙ্গে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক টেকনোলজি ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারের সংযোগ ছিল। কিন্তু সফটওয়্যার ইনস্টল করার পর সুইফটের কম্পিউটারেও ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়। এ পদ্ধতি চালুর সময় বিভিন্ন পর্যায়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা কাজ করেন। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট শাখাতেও এসব বিশেষজ্ঞ ঢুকে পড়েন। সিস্টেমে কাজ করতে গিয়ে সুইফট শাখার তথ্য খোয়া গেছে। ডিজিটাল আপগ্রেডেশনের কাজ যারা করেছেন এদের মধ্যে চারজনকে গোপনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সফটওয়্যার ইনস্টল করার সময় কারা এসেছিল। তারা কী কী তথ্য নিয়েছে। কোন কোম্পানি এই সফটওয়্যার দিয়েছে। আর এসব করা হয়েছে ওই দুটি শাখার বিভিন্ন কম্পিউটার থেকে। এ রকম প্রায় ২০ টি কমিম্পউটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এগুলো যারা পরিচালনা করেছেন তাদের মধ্যে একজন ডেপুটি গভর্নরসহ ১২ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এর মধ্যে ডেপুটি গভর্নরসহ আরেকজনকে ব্যাংকে এবং বাকিদের মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে তার আগে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেত লাগবে। ওই সংকেত পাওয়ার পরই সন্দেহভাজন এসব কর্মকর্তাদের মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হবে। এরপরই পুরো ঘটনা বেড়িয়ে আসবে বলে আশা করা যায়। একই সঙ্গে তারা যেন দেশের বাইরে না যান তাও বলা হয়েছে।
ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। এ প্রচেষ্টায় দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করলেও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার পাচারে ব্যর্থ হয় তারা। এতে আরও জানানো হয়, সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করা অর্থ ফিলিপিন্স ও শ্রীলংকার ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। এর মধ্যে ফিলিপিন্সের অ্যাকাউন্টে নেয়া ৮ কোটি ডলার ক্যাসিনোর মাধ্যমে হংকংয়ে পাচার করা হয়েছে।
এ ঘটনা প্রায় এক মাস চাপা দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ঘটনা জানাজানি হলে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। তবে এ মামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।