স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছে মালয়েশিয়া। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আহমাদ জাহিদ হামিদি জানান, মন্ত্রিসভা নতুন বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শনিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান উপপ্রধানমন্ত্রী।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিদেশি শ্রমিক নেয়া পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামা বিদেশি শ্রমিক নেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এর আগে দেশটি বিদেশি শ্রমিক নেওয়া স্থগিত করলেও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি নতুন শ্রমিকদের যাওয়ার বিষয়ে ঢাকার কর্মকর্তারা আশাবাদী ছিলেন।
জাহিদ হামিদি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ থেকে যে ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার কথা ছিল, তাও ‘বন্ধ’ বলে বিবেচিত হবে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত শ্রমিকদের মধ্যে যাদের কাজের অনুমতি নেই অথবা মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের বৈধতার জন্য আবেদন করতে হবে। বৈধতার আবেদনের শেষ সময় ৩০ জুন পর্যন্ত থাকলেও এখন তা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছে।
এ সময় আহমাদ জাহিদ হামিদি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিকারী সমালোচকদের নিয়ে ব্যাঙ্গ করে বলেন, যদি তারা কোনো বিদেশি শ্রমিক ভাড়া না করে, তাহলে তাদের (সমালোচকদের) মালয়েশিয়ান এমপ্লয়ারস ফেডারেশন, ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারারস ও মালয়েশিয়ান ট্রেড ইউনিয়নে যাওয়া উচিত। যারা স্থানীয় শ্রমিকদের খুঁজে বের করে কাজে নিয়োগ দেবে।
তিনি বলেন, শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা ও অ্যাজেন্টদের আরো কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।
এর আগে, ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য ১৫ লাখ শ্রমিক নিতে সমঝোতা স্মারকে সই করার পরদিন বিদেশি শ্রমিক নেওয়া স্থগিত করে মালয়শিয়া সরকার।
ওই দিন আহমেদ জাহিদ হামিদি বলেন, কতো শ্রমিক আমাদের প্রয়োজন সে বিষয়ে সন্তোষজনক তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত সরকার বিদেশি কর্মী নেওয়া স্থগিত রাখবে।
বিদেশি শ্রমিক ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তি লেভি আরোপের নিয়মও এই সময় স্থগিত থাকবে বলে জাহিদ হামিদি জানান।
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দুটি বিষয় নিয়েই আপত্তি তোলা হাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে ‘জি টু জি’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। সে অনুযায়ী শুধু সরকারিভাবে মালয়েশিয়ার ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছিল।
কিন্তু ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় ওই উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।পরে মালয়েশিয়ার জনশক্তির জন্য বাংলাদেশ ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকায় এলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু তার পরদিনই দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধের কথা জানান।
মন্ত্রিসভায় সমঝোতা স্মারকের খসড়া অনুমোদন এবং বুধবার তা সই হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক পাঠানোর কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, চুক্তিতে কোনো সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়নি।