বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে শনিবার রাতে পুলিশ ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে আশিকুর রহমান নামের এক যুবক নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে রবিবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ বিষয়টি গোপন রাখলেও রবিবার সকালে লাশ উদ্ধার করে দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। পুলিশের দাবী, মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার করার পর আসামীপক্ষের লোকজন তাদেরকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বন্দর থানা পুলিশের একটি দল উপজেলার মদনপুরের চাঁনপুর এলাকায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার করতে অভিযান চালায়। এসময় পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান সমর্থক দিপু ও সুজন নামের দুই আসামীকে আটক করে। খবর পেয়ে দিপু ও সুজনের সহযোগীরাসহ এলাকার লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামীদের ছিনিয়ে নেয়। এসময় পুলিশের সাথে সন্ত্রাসীদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় পুলিশের দুইটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও আত্মরক্ষার্থে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। পুলিশের গুলিতে আশিকুর রহমান নামের এক গার্মেন্টস কর্মী নিহত ও বাবুল নামের এক গুলিবিদ্ধ যুবককে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলী, কনস্টেবল দেবাশীষ, কনস্টেল মনোয়ার, মোহনসহ উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়। এসময় পুরো এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় আধ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠায় এবং রিফাত ও নুরনবী নামের দুইজনকে গ্রেফতার করে।
নিহত আশিক লালমনিরহাট জেলার শহীদুল ইসলামের ছেলে। সে বন্দর উপজেলার চাঁনপুর এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। গুলিবিদ্ধ আহত বাবুল কুমিল্লার বাইতোলা গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মদনপুর পরিবহন স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ নভেম্বর স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান ও আমির হোসেনের বিরোধকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। ওই মামলার বিষয়ে পুলিশ একটি পক্ষের হয়ে এবং তাদের লোকজনকে সাথে নিয়ে আসামী গ্রেফতার করতে গেলে অপরপক্ষের সাথে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে এলাকাবাসী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় পুলিশের উপর হামলা করে গাড়ি ভাংচুর ও সর্টগান ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বন্দর থানার এস আই মো: আলী বাদি হয়ে ২৪ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরো দুই/তিনশ’ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া একজন নিহতের ঘটনায় পৃথক আরেকটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি জানান, এ ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত চলছে। সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় কোন পুলিশ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, সংঘর্ষে গামের্ন্টসকর্মী আশিক নিহত হওয়ায় এবং দায়িত্ব অবহেলার কারনে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।