বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাং সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জেও এক বড় আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বৃহৎ সমস্যা আরো বৃহদাকারে দেখা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে। মাদকাসক্ত ও বখাটে ওইসব কিশোরদের গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বন্দরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও একাধিক মামলার আসামি রাজু। অপরাধ জগতে ‘স্ট্যান্ড রাজু’ নামে বহুল পরিচিত ওই রাজু এসব কিশোরদের দ্বারা বন্দরে কায়েম করেছে সন্ত্রাসের রামরাজত্ব৷ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে এই রাজু। সরকার দলীয় একেক সময় একেক নেতার হাত ধরে চলে এলেন এই ‘স্ট্যান্ড রাজু’।
এলাকাবাসী ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, রাজুর অপকর্ম বন্দরের সকলের মুখে মুখেই উচ্চারিত হচ্ছে দীর্ঘ বছর ধরে। প্রশাসনও তার অপরাধসমূহের বিষয়ে ওয়াকিবহাল, অথচ কিশোর গ্যাং নিয়ে সশস্ত্র মহড়া, হত্যা চেষ্টা, নিরহ মানুষকে রক্তাত্ব জখম, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ অপরাধের সকল শাখা-প্রশাখাতেই রাজুর অবাধ চলাফেরা থাকলেও রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার ভূমিকায়। এমনকি অদৃশ্য মহলের প্রচ্ছন্ন শেল্টারে রাজু কিশোর গ্যাং নিয়ে এলাকায় প্রতিনিয়ত অস্ত্রশস্ত্র সহকারে মহড়া দিয়েই যাচ্ছে।
অতি সম্প্রতি কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে এলাকায় মহড়া করে ফের এবারের শোক দিবস উপলক্ষে সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং নিয়ে মহড়া দিয়েছে রাজু। সূত্র জানায়, দলীয় কোনো পদ না থাকলেও নিজের সীমাহীন অপকর্মে ভীতসন্ত্রস্ত হয়েই সরকার দলীয় ব্যানার ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাজু।
একাধিক সূত্র জানায়, রাজু বন্দরের ক্ষমতাসীন দলের লোক হিসেবে পরিচিত দিয়ে দাবড়িয়ে বেড়ায়৷ কখনো যুবলীগ আবার কখনো অন্য সংগঠনের নাম ব্যবহার করে এই রাজু। তার আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদধারী নেতাদেরও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যানার- ফেস্টুনে রাজু বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদের ছবি ও নাম ব্যবহার করে থাকে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খান মাসুদের হাত ধরেও তাকে চলতে দেখা গেছে এক সময়। এতে করে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি ও প্রভাব বিস্তার করাটা রাজুর জন্য অনেকটাই সহজ হয়৷ সাধারণ মানুষও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
বন্দরের মেরাজ হত্যাকাণ্ডের পরে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলো সে৷ হত্যা চেষ্টা, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, জমি জবরদখলসহ বন্দর থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা ও অভিযোগের স্তুপ। তার অপকর্মে কেউ বাধা দিলে বা সায় না দিলেই নেমে আসে লোমহর্ষক নির্যাতনের খড়গ। ইতোমধ্যে রাজুর অত্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন।
একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, রাজুর বিরুদ্ধে বন্দরের আইনশৃংখলা সংক্রান্ত সভায় স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ রশিদ, বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির উপস্থিতিতেই একাধিকিবার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তবুও থামানো যাচ্ছে না রাজুকে। এমনকি এমপি, চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের নাম ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ রশিদের ছবি ব্যবহার করেই তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী শোডাউন দিচ্ছে থানার তালিকাভূক্ত ওই শীর্ষ সন্ত্রাসী৷ যদিও ‘রাজুকে চেনেন না’ বলে বারংবার সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন চেয়ারম্যান রশিদ৷
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ রশিদ বলেন, ‘আমি তাকে চিনিই না। তার অপকর্মের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েছি। তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা তারাই ভালো বলতে পারবে।’ নিজের নাম ও ছবি ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেক্ষেত্রে আমি কীইবা করতে পারি! বন্দরে হাজার হাজার নেতাকর্মী আছে, তারা আমার নাম- ছবি ব্যবহার করে ব্যানার- ফেস্টুনে। রাজুর বিষয়টিতে আমি নিজেও বিরক্ত। একের পর এক সাংবাদিকেরা ফোন দিয়ে তার অপকর্মের বিষয়ে আমার মন্তব্য জানতে চাইছেন৷
যুবলীগ নেতা খান মাসুদ বলেন, এই স্ট্যান্ড রাজু অতিতে আমার সাথে ছিল। যখন দেখেছি তার দ্ধারা মানুষের জুলুম অত্যাচার হয় আমি তাকে বিগত এক বছর যাবৎ চিরতরে আমার কাছ থেকে বিদায় করে দিয়েছি। এই রাজু আসলে দলের কোন পদ পদবীতে নেই। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে এসে সিনিয়র নেতাদের পিছনে দাড়িয়ে ছবি তুলে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করে। যারা দলের নাম বিক্রি করে অপকর্ম তাদের দলে কোন স্থান নেই এবং কেউ অপকর্ম করলে প্রয়োজনে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, মাদক ও কিশোর গ্যাং নির্মূলে আমাদের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং তা নির্মূলে প্রতিনিয়তই আমাদের অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে আমরা কিশোর অপরাধের সাথে জড়িত অনেককেই আইনের আওতায় এনেছি। কিশোর অপরাধের সাথে যারা জড়িত অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা নারায়ণগঞ্জে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব সময় কাজ করছি।
এ বিষয়ে জানতে স্ট্যান্ড রাজুকে তার ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলে তার দুইটি নাম্বারই বন্ধ পাওয়া যায়।