বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
পল্টিবাজীর রাজনীতিতে ওস্তাদ মনিরুল আলম সেন্টু ক্ষমতার স্বাদ নিতে পলকেই গুরু পাল্টে নেন। ফলে দক্ষ পল্টিবাজ নেতা হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে গেছে কুতুবপুরের চেয়ারম্যান সেন্টু। ধারাবাহিক পল্টিবাজিতে বাঘা বাঘা নেতাকে পেছনে ফেলে গেছেন অবলীলায়। ক্ষমতার দম্ভে এক সময় বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নারায়নগঞ্জ-৪ আসনের এমপি নির্বাচন করার ঘোষনাও দিয়েছিলেন সেন্টু। আবার চামচামি করতে গিয়ে এমপি শামীম ওসমানকে পীর আখ্যা দেয়ার পরদিনই এমন এক সাক্ষাতকারে সুর পাল্টে বলেছিলেন,এ মুহুর্তে নির্বাচন হলে নারায়নগঞ্জ-৪ আসনে সে নিজেই জয়ী হবে।
এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কতিপয় নেতাসহ তৎকালীন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদকে উপঢৌকন দিয়ে ২০১৪ সনের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন লাভেরও ব্যর্থ চেষ্টা করেন সেন্টু। এমনকি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতার ঘোষনা দিয়েছিলেন তিনি। এ জন্যে আওযামীলীগ বিরোধী শওকত মাহমুদের সভায় সাংবাদিকের উপস্থিতি কম থাকায় তার দলীয় লোকজনদের পাঠাতেন ফতুল্লা থেকে। তবে নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন না করায় আওয়ামীলীগ আবারো ক্ষমতায় আসলে ধীরে ধীরে বোল পাল্টে ফেলেন সেন্টু।
পেছনে ফিরে দেখা যায়,কুতুবপুরে শফিকুর রহমান মেছেরের রাজনীতির বিপরীতে পাল্টা প্লাটফর্ম তৈরী করতে গিয়ে তৎকালীন বারেক চেয়ারম্যানের ছেলে শিবলীর গ্রুপে ভিড়েন মনিরুল আলম সেন্টু। যুবদল নেতা শিবলীর সাথে ঘুরে ঘুরে যুবদলের রাজনীতিতে তার পরিচিতি শুরু হলে বিএনপি নেতা মতিন চৌধুরীর আমলেই হঠাৎ করেই থানা যুবদলের সভাপতির পদ পেয়ে যান তিনি।
তবে আওয়ামীলীগের শেষদিকে কুতুবপুরের প্রভাবশালীদের আতঙ্ক মেছের নিহত হলে সেই মামলায় ফেঁেস যান সেন্টু। এ ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার কয়েকমাসের মধ্যেই ২০০১ সনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে মুক্ত হয়ে কুতুবপুরের স¤্রাট বনে যান তিনি। তৎকালীন এমপি গিয়াসউদ্দিনের ছত্রচ্ছায়ায় ২০০৩ সনে কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যানসহ থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে যান সেন্টু। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তবে এবারে গিয়াসউদ্দিনের সাথে পল্টি দিয়ে সেন্টু তৎকালীন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ফতুল্লার অভিভাবক হিসাবে পরিচিত ব্যবসায়ী নেতা মোহাম্মদ আলীর ছাতার নীচে চলে আসেন। এ সময় পাগলা নয়ামাটি এলাকায় তার নেতৃত্বে টর্চারসেলসহ হাওয়াভবন থেকে কুতুবপুরের মিল-কারখানার চাঁদাবাজি এমনকি মাদকব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। তার ছত্রচ্ছায়ায় বিএনপির শাসনামলসহ ২০০৮ সনে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বোল পাল্টে রাজনীতির বিরুদ্ধে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে চুটিয়ে মাঠ দাবড়িয়ে বেড়ান তিনি। তখন থেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যায় চেয়ারম্যান সেন্টু।
তার রাজনেতিক সহযোগিরা জানান,স্বার্থ হাসিলে যেকোন সময় পল্টি দিতে ভুল করেন না চতুর সেন্টু। ক্ষমতার দম্ভে নিজ দলের নেতাদেরও শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করতেও দ্বিধাবোধ করেন না তিনি। বিএনপির শেষদিকে এমপি গিয়াসউদ্দিনের সাথে পল্টি দেয়ার পর তার মতে বিরোধী বিএনপি নেতাকর্মীদের রীতিমত হুমকীর মুখে রাখতেন সেন্টু।
পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে এমপি কবরীর আমলে ক্ষমতাসীন দলের দ্বন্ধের জেরে দুর্বল প্রার্থীর বিপরীতে দ্বিতীয়বারের মত চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন সেন্টু। তৎকালীন সময়ে অ-রাজনেতিক এমপি কবরী ও তার আলোচিত পিএস সেন্টুকে ম্যানেজ করে আখের গুছিয়ে নেন তিনি। এ সময় বিএনপির রাজনীতিতে নবাগত হলেও প্রভাবশালী শিল্পপতি শাহ আলমকে টেক্কা দিতে গিয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপিসহ থানা বিএনপির কমিটিও তার নিয়ন্ত্রনে নেয়ার চেস্টা চালান সেন্টু।
সারা বছর বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে মনিরুল আলম সেন্টু শাহ আলমের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা চালিয়ে এলেও ইউপি নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এমপি শামীম ওসমানের সান্নিধ্য লাভের ছক কষেন তিনি। এক পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী আর শাহ আলম এবং গিয়াসউদ্দিনসহ বিএনপিপন্থি গুরুদের পেছনে ফেলে শামীম ওসমানকে পীর সম্বোধন করে দলীয় সমালোচনার মুখে পড়লেও পরবর্তীতে ইউপি নির্বাচনে স্বার্থ হাসিলে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে বহিস্কার হন তিনি। তবে নির্বাচনের বৈতরনী পেরিয়ে এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্টতা জানান দিতে কুতুবপুর আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ও প্রতিবাদের মুখে পড়েন। এখন সময়ই বলতে পারে আলোচিত-সমালোচিত মনিরুল আলম সেন্টুর ভবিষ্যত অবস্থান কি হতে পারে ?