বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
৬ দফা দাবিতে নগর ভবনে পরিচ্ছনতাকর্মীদের বিক্ষোভে নাসিক মেয়র আইভী তাদের চাকরী খাওয়ার হুমকি ও খারাপ আচরণের জন্য হাত জোর করে ক্ষমা চেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান।
বুধবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যায় ফতু্ল্লার বক্তাবলী কানাইনগর সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের নবীণবরন ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
এমপি শামীম ওসমান বলেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাকে প্রশ্ন করে আপনাদের নৌকা মার্কার একজন মেয়রের কাছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা গিয়েছিল।
আমাদের যে পরিচ্ছিন্নতাকর্মী তারা তাদের কষ্টের কথা বলতে ওই জনপ্রতিনিধির কাছে গেছিলো। আমাকে প্রশ্নটা এমন করা হলো যে, ভোটের আগে তো সবাইকে বাপ-মা বলে অভিহিত করেন, ভোটের পরে তুইতুকারী করলেন কেন। তাদের বলা হয়েছে যে, ‘ভাত খাইতে ভাত পাছ না, তুই ফোন পাছ কইথেকা।’ আমি লজ্জা পেয়েছি। তারা তাদের দাবী নিয়ে গেল সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরাও মানুষ। সেখানে পুলিশ দিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হলো। আমাদের একজন যার জন্য আমরা নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছিলাম। আপনারা সকলে ভোট দিয়ে পাশ করিয়েছেন। এখন তিনি আপনাদের চাকরি খাওয়ার হুমকি দেয়। তুই তুকারি আল্লাহ পছন্দ করে না। আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। এটার উত্তর আমি দেব না, আমি উত্তর দেই, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশে কোথাও কেউ ভাত না খেয়ে নেই শেখ হাসিনার আমলে। ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে টাকা নেই, এত বাড়ি কোথা থেকে হলো সে প্রশ্ন কে করবে। আমরা বঙ্গবন্ধুকে চিনেছি তার আদর্শকে চিনেছি। আমি এজন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে সকলের কাছে ক্ষমা চাই। হাতজোড় করে ক্ষমা চাই।
তিনি আরো বলেন, শামীম ওসমান বলেন, যখনই গরিব মানুষের উপর আঘাত হয় আমি সেটার প্রতিবাদ করি, সে যেই দলেরই হোক না কেন। একটি রাজনীতিবিদকে যখন পুলিশের পাহাড়ায় থাকতে হয়, তখন আমার মনে হয় সে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে সড়ে যাচ্ছেন। পুলিশকে গালি দেন যারা তাদের পুলিশের পাহাড়ায় থাকতে হয়। অনেকেই বলে যে ওসমানীয় সাম্রাজ্য। কেন, আমরা নাকি গুম-খুন করে সাম্রাজ্য কায়েম করেছি। আমরা দখল করে সাম্রাজ্য করি নাই, আমরা সাম্রাজ্য করেছি মানুষের মনের ভেতর জায়গা করে। আমি কোন ওলি আউলিয়ার ছেলে না। আমার বাবা কোন ওলি-আউলিয়া ছিলেন না, খেলাফতও পান নাই; সাধারণ মানুষ ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন। খান সাহেব ওসমান আলীর ছেলে শামসুজ্জোহা। আমার পিতা দুই বারের এমপি ছিলেন। আমরা তিন ভাই এমপি হয়েছি। আমরা সম্রাজ্য কায়েম করেছি সত্যি। তা দেবোত্তর সম্পত্তি কিংবা কারো জমি দখল করে করিনি। মানুষের মনে জায়গা করে সম্রাজ্য গড়েছি।
কিন্তু আমাদের বাবা ভাই-বোনেদের জন্য এক টাকাও রেখে যান নাই। টাকার অভাবে পরীক্ষার ফর্ম ফিল-আপ করতে পারি নাই। আমার বাবা চাইলে নারায়ণগঞ্জের অর্ধেক কিনতে পারতেন কিন্তু আমার বাবা কোন জমি দখল করেন নাই, ভূমিদাস্যুতা করেন নাই। স্বাধীনতার পরে আমার বাবা কোন কিছু লুট করে নাই, হিন্দুদের দেবত্তর সম্পত্তি লুট করেন নাই। মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়ে গিয়েছেন। সেটা নিয়েই বেঁচে আছি।
তিনি আরো বলেন, আমাকে বিভিন্নভাবে গালাগালি করা হয়। ত্রিশ বছর আগে হলে জবাব দিলে শহরে থাকত না। যারা গালাগালি করে আমার তাদের প্রতি মায়া লাগে। আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের হেদায়েত করে। ৯৬ সালে এমপি হওয়ার পর প্রথম আমি এই বক্তাবলী ও আলীরটেকের কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম এই আলোর নিচের অন্ধকারকে আলো বানাবো। আজ সকল এলাকা থেকে লোকজন এখান দিয়েই আসে। করোনা ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারনে কিছুটা সমস্যা চলছে। আল্লাহ যদি আবার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনে, আজ যে বক্তাবলীকে উপশহর বলা হয়েছে এই বক্তাবলী ও আলীরটেককে নারায়ণগঞ্জের চেয়ে সুন্দর শহর বানাবো।
এসময় নারায়ণগঞ্জ বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছোবহানীয়া উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সভাপতি এম সওকত আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দন শীল। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।