বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নির্বাচনী হাওয়ায় সরগরম হয়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জের তৃণমূল রাজনীতি। যতই ঘনিয়ে আসছে একাদশ সাংসদ নির্বাচন ততই সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরা স্ব স্ব এলাকার স্থাণীয় নেতৃবৃন্দ এবং সাধারন মানুষদের সাথে মত বিনিময় সভা করে যাচ্ছে। ভোটের চিন্তা মাথায় রেখে মিত্র বাড়ানোর পথে হাঁটছে সব দলই। নানা কারণে দীর্ঘদিন দূরে থাকা নেতাদের দলে টানা হচ্ছে। তবে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনী মাঠে এখন পর্যন্ত বিএনপি আওয়ামীলীগ থেকে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। ২০১৮ সালের শেষভাগে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচন ব্যাপক প্রতিযোগিতামূলক হবে এমনটা ধরে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে গেছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দলগুলো। নিজ নিজ কৌশলে ঘর গোছানোর পাশাপাশি জোর প্রস্তুতি চলছে ভোটযুদ্ধের। ভোটারদের কাছে টানতে নেওয়া হচ্ছে নানা কর্মসূচি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও এগিয়ে চলছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৃণমূলে তীক্ষ্ম নজর রাখছেন দলীয় নীতিনির্ধারণী মহল। সব মিলিয়ে সবাই এখন নির্বাচনমুখী।
সূত্রে জানা যায়, বাতাসে নির্বাচনের গন্ধ। সর্বত্রই আলোচনা-বিরোধ, তর্ক-বিতর্কের বিষয়বস্তু ভোট। সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর বাকী; অথচ চারদিকে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নৌকা, ধানের শীর্ষ প্রতীকের সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই ছুটে যাচ্ছে সাধারন মানুষের কাছে, যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে। আর এবারের নির্বাচনকে ঘিরে পাল্টে গেছে রাজনীতির দৃশ্যপট। আগে রাজনৈতিক দলগুলো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তে জেলা উপজেলার নেতৃবৃন্দের মতামত পাত্তা দিতেন না; সিদ্ধান্ত এবং প্রার্থী দিতেন চাপিয়ে। এবার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বড় দু’দলই। দুই দলের নেতারা নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং সদস্যপদ নবায়নের নামে তৃণমূলে ছুঁটছেন। শুধু তাই নয়, দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বার্তা দিচ্ছেন পদ-পদবি নয় তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই এবার দলীয় নমিনেশন দেয়া হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সাংসদ গোলাম দস্তসীর গাজী (বীর প্রতীক) আগামি জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় সমর্থন প্রার্থী। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি তার নির্বাচনী এলাকাতেই অবস্থান করছেন। যোগাযোগ বজায় রাখছেন দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে সাধারন মানুষের কাছে আওয়ামীলীগের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি আগামি নির্বাচনে নেীকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন। অপরদিকে সাবেক সাংসদ অবসারপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামও আগামি নির্বাচনের লক্ষ্যে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছেন। এ সকল সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরাও রূপগঞ্জের বিভিন্নস্থানে গন সংযোগসহ উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এড.তৈমুর আলম খন্দকার, জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনির এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় যুবদলের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু বিএনপির দলীয় সমর্থন নিয়ে এ আসনে নির্বাচন করবে বলে শুনা যাচ্ছে। প্রত্যেক প্রার্থী তাদের নীজ নীজ কর্মী সমর্থকদের সাথে সাথে যোগযোগ রক্ষাসহ স্থাণীয় সাধারন মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছেন এবং আওয়ামীলীগ সরকারের বিভিন্ন ইস্যুকে পুজি করে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে আসছেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বর্তমান সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু আওয়ামীলীগের সম্ভ্যাব্য প্রার্থী। এ আসনে সাংসদ বাবু ছাড়া অণ্য কোন প্রার্থীর খবর পাওয়া না গেলেও। অপরদিকে এ আসনে বিএনপির দলীয় সমর্থন নিয়ে সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর, কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এএমএ বদরুজ্জামান খান খসরু নির্বাচন করবেন বলে জোড় লবিং চালিয়ে যাচ্ছে। আপন দুই ভাই হলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মনোভাব তাদের মধ্যে একটুও নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে সহোদর দুই ভাই নীজ বলয়ের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ এলাকায় প্রচারনা চালিয়ে আসছে।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বর্তমান সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা। জাতীয় পার্টি থেকে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে দলীয় সমর্থন পাওয়ার বিষয়টি। আওয়ামীলীগ দলীয় সমর্থন নিয়ে সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ইতিমধ্যে কোমড় বেধে মাঠে নেমে পড়েছেন। দলীয় সকল শ্রেনীর নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনসহ সোনারগাঁয়ের সাধারন মানুষের সাথে উঠান বৈঠকসহ নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে আসছেন। অপরদিকে এ আসন থেকে বিএনপির দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষন করেছেন মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এটিএম কামাল । তবে তিনি এখনো মাঠে নামেননি।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ হচ্ছেন একেএম শামীম ওসমান। তবে প্রভাবশালী এ এমপি এখনো নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করেননি। মূলত জেলা ও মহানগর যুব মহিলালীগের পাল্টাপাল্টি কমিটিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে দলীয় কোন্দলের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আশায় এখনো প্রচারনা চালাতে পারছেন না। তবে আগামি রোববার স্থাণীয় আওয়ামীলীগের তৃনমূল নেতৃবৃন্দের সাথে সাংসদ শামীম ওসমানের বৈঠক করার কথা রয়েছে। এ বৈঠকের মাধ্যমে আগামি নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আর অপরদিকে এ আসনে সাবেক সাংসদ আলহাজ¦ মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলহাজ¦ মোহাম্মদ শাহ আলম দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার জন্য দলীয় হাই কমান্ডের সাথে জোড় লবিং চালিয়ে যাচ্ছে। সে সাথে স্থাণীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষাসহ একাধিক সভা করেছেন এবং সাধারন মানুষের কাছে আওয়ামীলীগের নীতিবাচক বিষয়ে প্রচারনা চালাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে একেএম সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির সমর্থন পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। উন্নয়নও করেছেন ব্যাপক। আগামি জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিও দলীয় সমর্থন মোটামোটি নিশ্চিত বলাই চলে। ইতিমধ্যে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার দলমত নির্বাশেষে সকল শ্রেনীর সাধারন মানুষদের সাথে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে আওয়ামীলীগের দলীয় সমর্থন পেতে আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী মরিয়া হয়ে উঠেছে। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড.খোকন সাহা, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আরজু ভূইয়া, কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগ নেতা শুকুর মাহমুদ, জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির কেন্দ্রে লবিং চালিয়ে আসলেও এ আসনে নির্বাচনী প্রচারনায় আরজু ভুইয়া ছাড়া এখনো কাউকে দেখা যায়নি। আর বিএনপি থেকে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এড.তৈমুর আলম খন্দকার এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনাসহ প্রচার প্রচারনা চালিয়ে আসছে।