বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্থানীয় সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। এর পরিষেবাগুলো জনগণের কাছে যথাযথ ভাবে পৌঁছে দেয়ার কাজটি আমলাতন্ত্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিচালনা করা এবং স্থানীয় ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন, তদারক ও বাস্তবায়ন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠারই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সকল ক্ষমতা আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন যন্ত্রের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে বলেই জবাবদিহিতা ও সচ্ছতা এখানে উপেক্ষিত।
নাগরিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করাই নগর কর্তৃপক্ষের অন্যতম প্রধান কাজ। একজন নাগরিককে নগর যখন তার আবশ্যক প্রাপ্য অধিকার বিনা হয়রানিতে বুঝিয়ে দেয়, তখন নগরের প্রতিও তার কিছু দায়িত্ব কর্তব্য বর্তায়। অধিকার আর কর্তব্যের এই পারস্পরিক লেনদেনের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে নাগরিক মর্যাদার বোধ; গড়ে ওঠে একটা বাসযোগ্য নগর। দুঃখজনক হলেও সত্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও অধুনা বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দারা দীর্ঘ ১২৯ বছর ধরেই সেই নাগরিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। আর তাই এই নগরীকে নারায়ণগঞ্জবাসি আপন হিসাবে ভাবতে পারেনি কখনো এমনকি আজও আপন ভাবতে পারছেন না।
সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও আদর্শ ও নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি ও রাজনীতিকদের দুর্বলতার কারণে গোটা নারায়ণগঞ্জ জুড়ে আজ রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও রাজনৈতিক মাফিয়াদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজনীতি এখানে জনসেবা আর দেশসেবার পরিবর্তে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে। জনগণকে দেবার পরিবর্তে রাজনীতিকদের বড় অংশ এখন নেবার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে কেন্দ্র করে ব্যতিক্রম ছাড়া নগর প্রধানদের অযোগ্যতা, ক্ষমতাসীনদের দুই পরিবার কেন্দ্রিক সংঘাত, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের খবরদারি এবং সরকারের রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কার্যতঃ দুর্বল, পঙ্গু ও অকার্যকরি হয়ে আছে। প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত এই নারায়ণগঞ্জ শহর দেশবাসীর নিকট যেন এক আতংকের শহর। হত্যা, খুন, রাহাজানী, আইন শৃংখলার অবনতি, লুটপাট, দূর্নীতি, কালো টাকা, মাদক ব্যবসা এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মাস্তান যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার তেমনি যানজট, জলাবদ্ধতা, শহর জুড়ে ময়লা আবর্জনা, শব্দ দূষন, বায়ূ দুষন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, বিশুদ্ধ পানির সংকট এমন কি নগরবাসীর একমাত্র পরিচ্ছন্ন পানির আধার শীতলক্ষ্যার পানি দূষণের ফলে নগর জীবন বিপর্যস্থ।
স্বাধীনতার পূর্ব থেকে আজ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি না থাকার কারণে নগরবাসীর কাঙ্খিত উন্নয়ন এবং পরিবর্তন হয়ে উঠেনি। যারাই যখন ক্ষমতায় এসেছেন নিজেদের নিয়ে তাদের সীমাহীন ব্যস্ততা এবং দলবাজী আর টেন্ডারবাজীর কারণে নগর বাসী বারবার প্রতারিত হয়েছেন। বর্তমানের চিত্র আরও বেশী ভয়াবহ। বুর্জোয়া রাজনীতির পালাবদলে ব্যাতিক্রম ছাড়া বছরের পর বছর দুই পরিবার কেন্দ্রীক শাসন প্রতিষ্ঠার কারণে নগর জীবনের উন্নতি সাধিত না হলেও তাদের সম্পদ পাহাড়সম হয়ে উঠেছে। এই দুই পরিবারের বাহিরে এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান পদে সাধারণ জনগনের বিজয়ী হওয়ার কোন সুযোগ হয়নি, অথবা সুযোগই দেয়া হয়নি। নিজেদের সম্পদ কুক্ষিগত ও ক্ষমতার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ক্ষমতাসীনরা তাদের পরিবার কেন্দ্রিক হানাহানি কৌশলে নগরবাসীর মধ্যেও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে নানাভাবে।
অথচ, রাজধানীর পাশ্ববর্তি এই নগরে শিশুদের শৈশব চুরি হয়ে যাচ্ছে চার দেয়ালের মাঝে, বিনোদনের জন্য নাই কোন খেলার মাঠ কিংবা শিশু পার্ক। এমন কি ইতোপূর্বে যে কয়টি খেলার মাঠ ছিল ক্ষেত্র বিশেষে অধিকাংশই আজ ক্ষমতাসীনদের লালসায় বিনষ্ট হয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থ আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একর পর এক শিশু হত্যা আজ যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। নারীর জন্য নিরাপদ ও ইজ্জত-সম্মান, মর্যাদাপূর্ণ জীবনের পরিবর্তে আছে অবমাননা, অবহেলা আর আতঙ্ক। কর্মজীবী নারী বিশেষ করে গার্মেন্টস কর্মীদের ইজ্জত সম্মান নিয়ে এখানে জীবনযাপন প্রায় অসাধ্য।পত্রিকার পাতা খুললে প্রতি দিনই চোখে পরে ইভটিজিংসহ ধর্সণের মতো বিবৎস্য ঘটনা। গরীবের বউ যেন সকলের ভাবী। দরিদ্র মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসনসহ কর্মসংস্থানের দিকে কোন প্রকার মনোযোগ না দিয়ে বরং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়কে করা হয়েছে বড় লোকদের আড্ডাস্থল এবং আওয়ামী টেন্ডারবাজদের ক্লাবে। আর তাই স্বভাবতই গতিহীন হয়ে পড়েছে নাগরিক জীবনযাপন।
অথচ নাগরিক অধিকার গুলো ভোগ এবং পরষ্পরের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে একটা সুখী, সুন্দর ও গণমানুষের বাসযোগ্য একটি আধুনিক জনপদ, এতে নাগরবাসী অর্জন করেন তার সম্মান, মর্যাদা। আর এই নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে একটা মানবিক, প্রকৃতিবান্ধব, শিশুর প্রতি দায়িত্বশীল, নারীর জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক, তরুণ প্রজন্মের কর্মোদ্দীপনার উপযোগী প্রাণচঞ্চল সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
দুর্নীতিমুক্ত, একটি সুখি সমৃদ্ধ এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক নগর প্রশাসন পরিচালনা হোক এটাই মানুষের কাম্য। কিন্তু কেবল মাত্র দলবাজি আর রাজনৈতিক রেশারেশির কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে প্রায় সম্পূর্ণ অকার্যকর করে রাখা হয়েছে, পরিণত করা হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত এবং সরকারী দলের আজ্ঞাবহ একটা সংস্থায়, এবং সরকার দলীয় কার্যালয়ে।
ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনের মোট ব্যয়ের বড়জোড় ৬০/৭০ শতাংশ নিজস্ব আয় থেকে আসে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনও এর ব্যতিক্রম নয়। এর ফলে একদিকে যে কোন উন্নয়নমূলক কাজ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আমলাতান্ত্রিকতার জালে আটকা পরছে, দুর্নীতি আর জবাবদিহিতাহীন পরিবেশ তৈরি হচেছ; অন্যদিকে নগর পরিচালনার জন্য নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধিরাও নামমাত্র আলঙ্কারিক ব্যক্তিতে পরিণত হচ্ছেন। সব কিছু মিলিয়েই আজ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীর চোখে লুটপাত আর ঠিকাদারির ভাগ-বাটোয়ারার অন্যতম প্রধান আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণ নগরবাসীর উপর নতুন করে করের বোঝা না চাপিয়ে নতুন নতুন কর ক্ষেত্র তৈরীতে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসমন্বিত করে জনগণের বাসযোগ্য করা এবং অপরাপর পরিষেবাসমূহ সুষ্ঠুভাবে প্রদান করাই সময়ের দাবী। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পদ হলো এর তরুণ জনগোষ্ঠী। উৎপাদনশীলতার সর্বোচ্চ বিকাশের অনুকূল একটি পরিবেশ তৈরী করে তরুণদের কর্মোদ্দীপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রযুক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা আধুনিক নগর নির্মাণের অত্যাবশ্যকিয় কর্তব্য।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার দায়িতসহ সিটি কর্পোরেশনের আয়ে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন নতুন বিদ্যালয় নির্মান করে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটানোর দায়িত্বও নিতে হবে সিটি কর্পোরেশনকেই। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা যে শুধু সুলভেই পাওয়া যাবে, তাই না, সেগুলোর পড়াশোনা-সংস্কৃতি চর্চা-সামাজিকতাবোধের মান এসন ভালো করতে হবে যে, মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তরাও যেন তাদের সন্তানদের পড়াতে আকৃষ্ট হন।
নারায়ণগঞ্জের স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা যা ইচ্ছে তাই। পরিস্কার পরিচ্ছনার সীমাহীন অভাব, সংস্কার হয়না বহু বছর ধরে। যে কারণেই শহরের প্রধান প্রধান সড়ক সমূহে একটু বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় চরম জলাবদ্ধতা। এসবের নিয়মিত মেরামত ও রক্ষাণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া অনেক বেশী জরুরী। ঢাকা ওয়াসার হাত থেকে ওয়াসাকে সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে সুপেয় পানির অভাব পূরণ করা এখন নারায়নগঞ্জ বাসীর এক নম্বর দাবী। যা দীর্ঘ দিন ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করে আটকে রাখা হয়োছে। বস্তিবাসীসহ প্রতিটি ঘরে ঘরে ওয়াসার পাইপ লাইনের মাধ্যমে সুলভে নিরাপদ পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করাও নগরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী। এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠি ও পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে এবং জনবহুল সড়কগুলোতে নিরাপদ পানি প্রাপ্তির ব্যবস্থা নারায়নগঞ্জ পৌরসভা কালীন সময়েও ছিল যা আজ কেবলই স্মৃতি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন যেন শুধু টাকা ওয়ালাদেরই স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত।
শুধু প্রধান সড়ক নয়, সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলের অলিগলি নিয়মিত মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ করা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বর্ষা মৌসুমে রাস্তা কাটাকাটি বন্ধ করা, পানি কিংবা গ্যাস সংযোগকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা, ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারের বিপদ থেকে নগরবাসীকে রক্ষার ব্যবস্থা করা, বাসা-বাড়ীর ছাদে অব্যবহৃত স্থানে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনে নগরবাসীকে উৎসাহিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করা, রাস্তা আলোকিত করাসহ অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যাপক ভিত্তিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া দরকার।
শীতলক্ষ্যা নদীর দখল ও দূষণমুক্ত হলে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমবে, ভূপৃষ্ঠের পানি পরিশোধনের মাধ্যমেই ঘরে ঘরে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বৃষ্টির পানিও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া জরুরী। যে সকল স্থানে ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নেই সে সকল স্থানে পাইপ লাইন পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। বহুস্থানের পানির লাইন ফেটে গেছে, স্যুয়ারেজ লাইনের সাথে মিশে গেছে। ওয়াসার পানিতে থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ, পানির নল দিয়ে বের হয়ে আসছে পোকা মাকড়, কেঁচোসহ আরও কতকি। ফলে পানি বাহিত রোগ-বালাই এখন নগরবাসীর নিত্য সঙ্গি। জরুরি ভিত্তিতে এগুলো মেরামত ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।
এই নগরে বসবাসকারী বস্তিবাসীরা উচ্চমূল্য দিয়ে ভাড়া-বাসায় থাকলেও ভাড়াটে হিসেবে তাদের ন্যূনতম কোন অধিকার নেই। নিরাপদ আবাস, পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন ও সাস্থ্যসেবা তাদের ভাগ্যে জোটে না। তাদেরকে অবৈধ দখলদার হিসেবে প্রায়ই উচ্ছেদ করা হয়, ভেঙ্গে দেয়া হয় বসবাসের একমাত্র আবাসস্থল। স্থানীয় সরকারদলীয় কেডার মাস্তান, সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কর্তৃক তাদের প্রতি হয়রানি, জুলুম, নিপিড়ন যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার। যে কোন নির্বাচনে তারা কেবল মাত্র ক্ষমতাসীনদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বস্তিগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নিয়ে সেখানে থাকার বৈধ অধিকার প্রদান করা তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠারই অংশ। প্রতিটি পরিবারের জন্য ন্যূনতম আকারের থাকার ঘরের ব্যবস্থা করা, বস্তিগুলোতে নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, স্যানিটেশন ও সাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা নগর কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব। এমন কি পথে-ঘাটে, রেল ষ্টেশন কিংবা বাস ষ্টেশনে গৃহহীন খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী ভাসমান মানুষ গুলোর জন্যও নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া সিটি কর্পোরেশন-এর একান্ত কর্তব্য।
নারায়ণগঞ্জে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এক রকম নেই বললেও চলে। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটসহ হাতে গোনা কয়েকটি সংগঠন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামান্য কিছু সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এখানে হলেও নাগরিকদের জীবন সংস্কৃতিময় হয়ে উঠেনি কখনও। নেই কোন বিনোদন পার্ক, নাট্য মঞ্চ-নাট্যশালা যেন নগরবাসী বিনোদনের অধিকারহীন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষ সকলের জন্য পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রাণবন্ত ও বৈচিত্রময় সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার কাজটি যদি নগর কর্তৃপক্ষ না করেন তবে এ দায়িত্ব নিশ্চয় আকাশ থেকে নেমে এসে অন্য কেউ করে দিবে না। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে সিটি কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সংস্কার সাধন করতে না পারলে বাস্তবে এই প্রতিষ্ঠানটি তৃণমুল পর্যায়ে উন্নয়ন-অগ্রগতির নেতৃত্ব দানকারী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারবে না।
এত কিছুর পরও আশার কথা হলো, বহু ঐতিহ্য আর শিক্ষা-দিক্ষা, জ্ঞান-গরিমায় সমৃদ্ধ এ নারায়ণগঞ্জ বাসী। ৫২’এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের যেকোন ক্রান্তিলগ্নে বুক চিতিয়ে সাহসিকতার সাথে জীবনপন লড়াইয়ে অবতির্ণ হতেও এরা কখনোই পিছ পা হয়ননি। এছাড়াও ইতোমধ্যে এডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭ খুনের ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ, ও ত্বকী হত্যাসহ বহু ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে তাদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে রুখে দাড়ানোর স্পর্ধা দেখাতে পেরেছে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ। এই মানুষদের উপর থেকে ভরসা হাড়ালে চলবে না।