বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সারা দেশে মানবিক ডিসি হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এবার জেলার কৃষিজমি রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিলেন। দেশে খাদ্য ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে জেলার সব দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রুপান্তরিত করতে সম্প্রতি স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করলেন আড়াইহাজার উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের সরাবদী গ্রামে অনুষ্ঠিত এক কৃষক সমাবেশে।
মাত্র দুইটি ফসল ফলানোর পরে অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকা জমিগুলোতে আরেকটি ফসল ফলানোর জন্য নতুন পাইলট প্রকল্প চালু করলেন নবাগত জেলা প্রশাসক।
স্থানীয় সরাবদী আইএফএম কৃষক সংগঠনের সভাপতি সফল কৃষক শরীফুল ইসলাম বলেন, আমরা বেশিরভাগ জমিতেই দুই ফসল চাষ করতাম। এরপর অনাবাদি থাকতো। কিন্তু ডিসি স্যার আজ আমাদের গ্রামে এসে সারা বিশ্বে কৃষি জমি ক্রমাগত কমে যাওয়ার ভয়াবহ প্রভাবে ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের কথা জানালেন। উনার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি আমার পুরো জমিতে এখন সবজি চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
একই এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে হৃদয় হোসেন বলেন, ডিসি স্যার আমাদের উন্নতমানে সবজি বীজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বীজগুলো পেলেই আমি অনাবাদি জমিতে সবজি চাষ করবো। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রিও করতে পারবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তরুণ এই কৃষক বলেন, আগে কোনো ডিসি আমাদের এভাবে দরদ দিয়ে বুঝিয়ে বলেন নাই। নইলে আরো আগে থেকেই আমি সবজি চাষাবাদ করে লাভবান হতে পারতাম।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সরাবদী গ্রামের দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরের পাইলট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তিন ফসলি জমি সাধারণত অধিগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই তিন ফসলি জমি হিসেবে রুপান্তরিত করায় কৃষকদের কৃষি জমিগুলো নিরাপদ থাকবে।
স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক আয়োজিত এই কৃষক সমাবেশে কৃষিজ খাদ্য পণ্য উৎপাদনে বিপ্লব সাধনে এই উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। অনুষ্ঠান স্থানীয় কৃষকবৃন্দ জেলা প্রশাসককে গামছা ও কৃষকের ঐতিহ্যবাহী মাথাল পরিয়ে বরণ করে নেন এবং তাদের উৎপাদিত রাসায়নিক সারমুক্ত সবজি উপহার দেন।
বাংলার ঊর্বর মাটিকে সৃষ্টিকর্তার এক অশেষ উপহার বলে অভিহিত করে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম তার পূর্বের কর্মস্থল রাজবাড়ী জেলার পলি মাটি পড়ে ফসলি জমি ক্রমে ঊর্বর হয়ে চার ফসলি জমিতে রূপান্তরের বর্ণনা দেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন আগামী দিনে খাদ্যে আমদানি নির্ভরতা কমাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার দুই ফসলি জমিকে পর্যায়ক্রমে তিন ফসলিতে রূপান্তর করার। এ চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের জন্য কৃষক সমাজকে নতুন প্রযুক্তিকে সাদরে গ্রহণের আহ্বান জানান।
কৃষক সমাবেশে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ), উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি),উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন কৃষি ব্লকের কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ।
নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে আড়াইহাজার উপজেলার আবাদি জমির পরিমাণ ১১৮১২ হেক্টর। যা নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলায় এক ফসলি জমির পরিমাণ ১৬৭৫ হেক্টর। দুই ফসলি জমির পরিমাণ ৮৪৩৭ হেক্টর এবং তিন ফসলি জমির পরিমাণ ১৫৬০ হেক্টর। ফসলের নিবিড়তা ২.০৫। চলমান বোরো মৌসুমে ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯১৬০ হেক্টর এবং ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪০১৫৭.৭৭ মেট্রিক টন। এই লক্ষমাত্রা অর্জিত হলে শুধু বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধানের সম্ভাব্য বাজার মূল্য হবে প্রায় ৫,০১৯ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। এছাড়া আউশ ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২০৬২ হেক্টর, আমন ধান উৎপাদন লক্ষমাত্রা প্রায় ৩০৫৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও এই উপজেলায় চাষাবাদকৃত অন্যান্য ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সবজি ১৬৬০ হেক্টর। ফসল বৈচিত্র্যের আরো আছে আলু, মিষ্টি আলু, মরিচ, ধনিয়া, মাশকলাই, চিনা বাদাম ইত্যাদি।