বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
কোন্দল নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। তৃণমূলকে চাঙ্গা, তহবিল গঠন ও ডাটাবেজ তৈরির জন্য সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করলেও দলীয় কোন্দলে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে দলের তৃনমূল নেতাকর্মীর অভিযোগ। জেলা বিএনপি থেকে শুরু করে মহানগর এমনকি প্রতিটি থানা পর্যায়ে নেতৃত্বদানকারী সিনিয়র নেতাসহ সর্বস্তরে কোন্দলের কারণে সেই প্রক্রিয়া এগোচ্ছে ধীরগতিতে। আর এর বিরূপ প্রভাব তৃণমূলের ওপর পড়ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। যার খেসারত দিতে হতে পারে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ও জাতীয় নির্বাচনে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত ১ জুলাই সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। কর্মসূচি সফল করতে নানামুখী পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের জেলায় জেলায় পাঠানো হয়। দুই মাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে প্রায় লক্ষাধিক সদস্য সংগ্রহের টার্গেট নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি দলটি। এরই মধ্যে দলের অনেক নেতা অন্তদ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে পদ-পদবির দ্বন্ধে সংঘর্ষ-সংঘাত ও রক্তারক্তিতে পন্ড হয়েছে সদস্য সংগ্রহ অভিযান।
বিএনপি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে রুবেল, আকাশসহ কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়। সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান খাঁনের উপস্থিতিতে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি আবুল কালামের ছেলে মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাউসার আশার সমর্থকরা তাকে ঘিরে রাখে এবং জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব সমর্থিত নেতাকর্মীদের ভেতরে প্রবেশের সময় তাদের ধাক্কা দেয় কাউসার সমর্থকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে রাজীবের সমর্থকরা। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় মারামারি। তখন সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রধান অতিথি দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালসহ সিনিয়র নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতারা নির্দেশনা দিলেও তারা থামেনি। তবে পরে সাময়িকভাবে শান্ত হয় এ পরিস্থিতি। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে নেতাকর্মীরা বের হওয়ার সময় আবারও জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব সমর্থিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আবুল কাউসার আশার লোকজনদের মধ্যে বাকবিত-ার পর ফের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় নেতারা সামনে থাকলেও কেউ কোন প্রতিবাদ করেননি। পরে ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায় ছাত্রদলের দু’গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এতে আহত হন রুবেল, আকাশসহ ৪জন। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব এবং মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাউসার আশা একে অপরকে দোষারোপ করে গণমধ্যমে বিবৃতি প্রদান করেন। তাছাড়া জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দ্বন্ধতো রয়েছেই।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহ্ আলম বলেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে কিছু বাধা তো আছেই। তবে এটা অচিরেই দূর হবে। এ নিয়ে হতাশার কিছু নেই। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে অচিরেই নেতাদের মধ্যে দূরত্ব কমে আসবে এবং দলের মধ্যে সকল কোন্দল দ্রুত নিরসন করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
এদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক তৃনমূল নেতা ক্ষোভের সাথে জানান, দলীয় প্রভাব দেখাতে গিয়ে নেতায় নেতায় তৈরি হচ্ছে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। নেতারা নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠছেন। আগামীতে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় তৃণমূলকে নিজের আয়ত্তে রাখতে চাইছেন সিনিয়র নেতারা। নিজ নিজ স্বার্থ হাছিল করার আপ্রাণ চেষ্টার ফলেই সৃষ্টি হচ্ছে এমন বিরোধ। তাছাড়া সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকায়, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সংস্কারপন্থি ও খালেদা জিয়াপন্থি এবং তৃণমূলে প্রকৃত ও অপ্রকৃত বিএনপি নেতা নিয়ে বিতর্কের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি চেয়ারপারসনের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন না হওয়া এবং তৃণমূলের কাজের সমন্বয়হীনতাকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে দ্বন্ধের কারণে পুনর্গঠনের কাজ ঠিকভাবে এগোচ্ছে না। কোন্দলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান।