ইউপি নির্বাচন সমাগত ॥ নারায়ণগঞ্জের মাঠ পর্যায়ে প্রার্থীদের হালচাল
ধানের শীষ মানে জেনে শুনে বিষ নৌকা মার্কা সোনার হরিণ
বিশেষ প্রতিনিধি,বিজয় বার্তা ২৪
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে ভীষণ বেকায়দায় এখন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এই তিনটি দল দেশ-জনতার কাছে উল্লেখযোগ্য বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিগণিত হলেও বর্তমান সময়ের চলমান পরিস্থিতিতে সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক যেন অগ্রগণ্য। যে কারনে যারা এক সময় বিএনপি অথবা জাতীয় পার্টি’র সমর্থক ছিলেন, তারাও এখন কোন না কোন উছিলায় বা কৌশলে নিজেদেরকে আওয়ামীলীগ দাবী করছেন। উদ্দেশ্য একটাই নৌকা প্রতীকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন করাই বৃথা। নৌকার প্রতীকে প্রার্থীদের এহেন দূর্বলতার কারণ জানতে চাইলে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কেউ কোন প্রকার মন্তব্য করতে নারাজ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক প্রার্থী বলেন, বৃহত্তর দল হলেও বিএনপি এখন রয়েছে চরম দূর্বিপাকে। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও কিন্তু প্রকাশ্যে নয় তা কেবল অন্তরালে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় এবং নির্বাচনের সঠিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়, তাহলে নৌকার পাশাপাশি ধানের শীষের জয়ের সম্ভাবনাও কোন অংশে কম নয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের দেয়া একের পর এক রাজনৈতিক মামলায় ধরাশায়ী এখন বিএনপি’র প্রতিটি নেতা কর্মী। তারা মাঠে নেমে যেমন হরতাল পিকেটিং আন্দোলন করতে পারছেনা তেমনি নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেই কেউ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সারা দেশের পৌর নির্বাচনে এমনটাই ছিল লক্ষ্যনীয় বিষয়। অপরদিকে নৌকা প্রতীকধারীকে যে কোন ভাবে জয়ী করে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমানে ব্যস্ত এখন সরকারি দল আওয়ামীলীগ। তৃণমূল থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি জনপ্রতিনিধির আসনে নিজ দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করে চেয়ার দখল করার মহোৎসবে মেতে উঠেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। ইউনিয়ন থেকে সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি চেয়ারের ক্ষমতায় যখন থাকছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি, তখন দেখা যাবে বিএনপি কিভাবে ক্ষমতায় যায়। যে কারণে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জেনে শুনে ফেল করতে চায়না তারা। ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করা আর জেনে শুনে বিষ পান করা বা ফেল করা এমনটাই মন্তব্য তাদের। নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইউপি নির্বাচনের অধিকাংশ প্রার্থী’র মন্তব্য নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া সবাই এ কারনে যে তারা সবাই জানে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। সে ক্ষেত্রে সরকার দলীয় মনোনয়ন এবং নৌকা প্রতীকই এখন প্রার্থীদের জন্য নিশ্চিত বিজয়ের ভরষা।
প্রার্থীদের মতে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়া মানে নির্বাচনে জয় এবং চেয়ারম্যানের চেয়ার দখল করা। আর এ কারনেই নদীতে চলমান কাঠের নৌকা বানাতে বা কিনে নিতে মাত্র এক দেড় লাখ টাকা লাগলেও এখন এই নির্বাচনী মৌশুমে কাগজের বুকে নৌকার প্রতীক পেতে খরচ করতে হচ্ছে কম করে হলেও ৫০ লাখ টাকা। এটা তাদের নির্বাচনী কমন বাজেট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থী তার নিজেকে প্রার্থী নয় নির্বাচনী বলির পাঠা দাবী করে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে প্রতীক বা মনোনয়ন যুদ্ধ অনেক আওয়ামী নেতার ভাগ্য খুলে দিয়েছে। কেননা যে ইউনিয়ন থেকে যে প্রার্থী নৌকা পাবে তার পক্ষে স্থানীয় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সুপারিশ লাগবে। যা আদায় করতে এখন প্রার্থীরা যাচ্ছেন উল্লেখিত ভাইটাল পদের নেতৃবৃন্দের কাছে। আর মওকা পেয়ে উল্লেখিতদের অনেকেই করছেন সেই সুপারিশ বানিজ্য। জেলা কমিটির নাম করে থানা বা ইউনিয়ন কমিটি’র কেউ কেউ এই মনোনয়ন পক্ষে আনার ঠিকাদারী করছে। আর এ জন্যই লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিতে হচ্ছে আমাদের মত প্রার্থী নামের বলি’র পাঠাদের। ফলে নির্বাচনী এ মৌশুমে নৌকা মার্কা যেন সোনর হরিণ। নৌকার চেয়ে প্রতীকের দাম শতগুণ বেশী। বলা চলে আকাশচুম্বী আর ধানের শীষ জেনে শুনে পান করা বিষ। তবে জাতীয় পার্টি’র লাঙ্গল প্রতীকের এবার কোথাও কোথাও কদর বাড়ছে। তাও যেখানে যেখানে বিজয়ের চেয়ার ভাগাভাগি হচ্ছে।