নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
বিচারের আশায় প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ২ বছর পার হয়ে গেল। ফতুল্লার আলোচিত সোয়েব হত্যাকান্ডের ২ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৪ সালের ২১মার্চ কাশীপুর খিলমার্কেট হোসাইনীনগর এনেটি আবাসিক প্রকল্পের জলাশয় থেকে ব্যবসায়ী যুবক সোয়েবের (২২) লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুত্র হত্যার বিচারের আশায় চোখের জলে বুক ভাসায় সোয়েবের মা সুরাইয়া। ছেলের ছবিটি বুকে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। পুত্রের স্মৃতি মনে করে চোখের পানি দিয়ে বার বার ছবিটি মুছতে থাকলেও দুই বছরে সে পানি আর থামেনি। আলোচিত এ হত্যা মামলার দুই বছরেও পুলিশ অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেয়নি। ফলে বিচারের শঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে নিহতের পরিবার। শুধু তাই নয়, আসামীদের অব্যাহত হুমকির মুখে পরিবারটি যেন অসহায় হয়ে পড়েছে।
পরিবারটির দাবি, দুই দফায় তদন্ত কর্মকর্তা বদল হলেও বদলায়নি পুলিশের বক্তব্য। পুলিশ তদন্তের নামে শুধু সময়ই ক্ষেপন করেনি, আসামীদের পক্ষ নিয়ে গুরুত্বপূর্ন অনেক তথ্য উদ্ধারে গড়িমসি করে দায়সারাভাবে এগুচ্ছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে নানা তথ্য উপাত্ত দেয়া হলেও পুলিশ তাতে কোন কর্ণপাত করেনি। বরং এসব তথ্য নিয়ে আসামীদেরভ য় দেখিয়ে উল্টো সুবিধা আদায় করেছে।
পরিবারটির আরো অভিযোগ, এ মামলার অন্যতম আসামী সানী রিমা-ে থাকা অবস্থায় পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে গেলেও এ নিয়ে মামলা করেনি পুলিশ। এমনকি এসব বিষয় চার্জশীটে অর্ন্তভুক্ত করা হবে কী না তা নিয়ে সন্দিহান তারা। মামলার এক নম্বর আসামী শাহীন মুন্সিগঞ্জের একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলার আসামী। মামলার আরেক আসামী হৃদয় মাদকদ্রব্যসহ বেশ কয়েকবার নারায়ণগঞ্জ সদর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এছাড়াও এ মামলার আরো দুইজন আসামী দুই সহোদর টিটু ও মিঠু পেশাদার মাদক বিক্রেতা। পুলিশের কাছে এসব তথ্য থাকা স্বত্তেও তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
পরিবারটি জানায়, আসামীরা জামিনে বেরিয়ে এসে নিহতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে নানা-ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। পরিবারের পক্ষে নিহত সোয়েবের বাবা মনির হোসেন ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন (জিডি নং-৭৬১) পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
নিহতের পিতা মনির হোসেন অভিযোগ করেন, পুলিশের আচরণ ছিল বরাবরই রহস্যজনক। গ্রেপ্তারের পর মামলার অন্যতম আসামী সানীর রিমা-ে দেয়া তথ্যও চেপে গিয়েছিল তখনকার মামলার সেসময়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই খাইরুল। রিমান্ডে আনার পর দিন নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি দৈনিকে সংবাদ বেরোয়-‘দুই হাজার টাকার জন্য খুন হয় সোয়েব’। তদন্ত কর্মকর্তার উদ্ধতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনের বলা হয়-পুলিশের কাছে দেয়া সানীর তথ্যে জানা গেছে মাত্র দুই হাজার টাকার জন্য সোয়েবকে হত্যা করে ওই আসামীরা। বিস্তারিত পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলন করে জানাবেন এবং রিমান্ড শেষে যে কোন দিন সানীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি রেকর্ড করা হবে। বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, এখন এসব না বলাই ভাল। পত্রিকায় এসব এসে গেলে ১৬৪ করানো কঠিন হয়ে যাবে’-বলেও তদন্ত কর্মকর্তা নিহত সোয়েবের পরিবারকে জানিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এর কিছু করেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
২০১৪ সালের ২১ মার্চ কাশীপুর খিলমার্কেট হোসাইনীনগর এনেটি আবাসিক প্রকল্পের জলাশয় থেকে ব্যবসায়ী যুবক সোয়েবের (২২) লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাকে অজ্ঞাত লাশ দেখিয়ে এসআই আবুল বাশার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরদিন সকালে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে লাশটি নিজের ছেলে বলে সনাক্ত করেন সোয়েবের বাবা মনির হোসেন। পুলিশ ওইদিন দুপুরে জানাজার আগেই এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে দুই সহোদর টিটু, মিঠু, হৃদয় ও রাব্বী নামের ৪ যুবককে গ্রেপ্তার করে। এরা প্রত্যেকেই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে। এরপর রাতে সোয়েবের বাবা মনির হোসেন বাদী হয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ৪ জনসহ ৬জনের নাম উল্লেখ করে আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাত করে ওই মামলায় একটি সম্পুরক এজাহার দাখিল করেন।
২০১৪ সালের ২৪ মার্চ এ মামলায় এনেটি আবাসিক প্রকল্পের নৈশপ্রহরী শুক্কুর আলী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে শুক্কুর আলী ওই ৬জনসহ আরো কয়েকজনকে রাতে বস্তায় লাশ ভরে পুকুরের পানিতে ফেলতে দেখেছে এবং এই ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য তাদের দেয়া হুমকির কথা স্বীকার করে। এ মামলাটি এসআই খাইরুল ইসলাম, এসআই মুসলিম আলী শেখ তদন্ত করছেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুমন কুমার আইচ।
এ প্রসঙ্গে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামালউদ্দিন জানান, আমি এ থানায় নতুন এসেছি। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।