বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
মেধাবী কিশোর তানভীর মাহমুদ ত্বকী হত্যার বিচার নারায়ণগঞ্জের মানুষই একদিন করবে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
সোমবার (৬ মার্চ) বিকালে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে (আর্ট কলেজ) প্রাঙ্গণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিশু সমাবেশ, আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের সন্তানের বিচার চাই। সেই বিচার টাই পাচ্ছি না। এখানে যারা আছেন তারা বুঝতে পাড়েন যে কি বেদনার এই দিনটি। আমরা দশ বছর যাবৎ আমরা আমাদের সন্তানের বিচার চেয়ে চাচ্ছি। আমি জানিনা আর কতদিন বিচার চাইতে হবে। আমরা ঘাতককে জানি। ঘাতকের বাড়ি ও গুষ্টির সবাইকে চিনি। এমন কেউ নাই এই শহরের ছোট্ট একটি বাঁচ্চা এই শহরের ও বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত চিনে। কিন্তু চিনেনা কে এটাই এখন প্রশ্ন। কেন তাদের বিচার হবে না। কি কারনে হবে না।
তিনি আরো বলেন, এই শহরের হত্যাকান্ড আজ থেকে তো শুরু হয়নি। ৭১ এর পর থেকে এই শহরে হত্যার রাজনীতি দেখে আসছি। এই হত্যাকান্ডগুলো কাদের দ্ধারা কিভাবে, কখন এবং কেন সংগঠিত হয়েছে সেটা এই শহরের সকল মানুষ জানে। এই শহরকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য, মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এবং আরো বেশী নিজেদের ঝুলুম প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। ত্বকীর মত বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালে আমার শ্লোগান ছিল “নয় শংকা নয় ভয় শহর হবে শান্তিময়”। আমি এই শ্লোগান কতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি আমি ঠিক জানিনা। তবে এটা সত্য এই শহরের মানুষ জেগে উঠেছে। কথা বলে প্রতিবাদ করতে পাড়ে। এখন নিজের জিনিষ চাইতে পাড়ে। খুনিকে খুনি বলতে পাড়ে। যেই সাহসটা হরণ করা হয়েছিল। ভুতের রাজ্য বানানো হয়েছিল। সন্ত্রাসের রাজ্য বানানো হয়েছিল। ভীতিকর একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল এই শহরে।
তিনি আরো বলেন, কিন্তু ত্বকীকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ত্বকী আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয়। প্রতিবাদ করে টিকে থাকতে হবে সেটা শিখিয়ে দিয়ে গেছে। দশ বছর ত্বকী মঞ্চ একাধারে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। প্রতিমাসের আট তারিখে মোমবাতি প্রজ্জলন করা হচ্ছে। ইতিহাসের বিরল এই কর্মসূচি। মফিদুল ভাই শেখ রাসেল উদ্দান্যে দাঁড়িয়ে এখানে বলেছে , শেখ রাসেলের হত্যাকান্ডের কথা বলেছে। তাদের দুই বোন বিচার চেয়েছে এবং বিচার সংগঠিত হয়েছে। সেই বিচারও হয়েছে বাংলার মানুষ দেখেছে। আমারাও দৃঢ় বিশ্বাস। আমি হতাশাবাদী কেউ নই। হতাশ হতে চাইনা। আমি আশাবাদী। ত্বকী একজন মানুষ সুতরাং আমি মনে করি এই ত্বকী হত্যার বিচার নারায়ণগঞ্জের মানুষই একদিন করবে।
অনুষ্ঠানে মফিদুল হক বলেন, যারা ত্বকী মঞ্চের বিচার বাধাগ্রস্থ করতে চায় তাদের জন্য একটি বার্তা নারায়ণগঞ্জের শিশুরা দিচ্ছে। যারা ত্বকীকে দেখেনি তারা ত্বকীর ছবি আঁকছে। নারায়ণগঞ্জবাসির হৃদয়ে ত্বকীর ছবি আাঁকা হয়ে গেছে। যারা দূর্নীতি করে, লুটপাট করে, যারা হত্যা করে তারা আওয়ামীলীগের দল হিসেবে দাবী করতে পারেনা। দলের নাম করে ত্বকী হত্যাকারিরা পার পেয়ে যেতে পারেনা। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যাক্তির জন্য এ দলের ঐতিহ্য পদদলিত হচ্ছে। দলের নাম নিলেই কেউ দলের প্রবক্তা হয়ে যায় না। মুক্তিযুদ্ধের বার্তা বাহকদের সামনে নিয়ে আসার যে তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে সে তাগিদ থেকেই ত্বকী হত্যার বিচার আপন পথে চলতে দেয়া উচিৎ।
এর আগে দিনব্যাপী কর্মসূচির হিসেবে সোমবার (৬ মার্চ) সকালে নারায়ণগঞ্জের বন্দর, সিরাজ শাহর আস্তানা কবরস্থানে ত্বকীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সুজন’র আয়োজনে মানবববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে (আর্ট কলেজ) চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিশু সমাবেশ, আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। আগামী ২৩ মার্চ পর্যন্ত ২১ দিন ব্যাপী ত্বকী হত্যাকান্ড দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি পালন করা হবে।
বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দ্রুত এই ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি লেখক গবেষক মফিদুল হক নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম, কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ, সুজন’র সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর, সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল ও প্রদীপ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ, খেলাঘরের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক মহসিন, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন প্রমুখ।