বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তিবর্গ যে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিমাসে প্রতি বছরে তারা যে কর্মসূচি অব্যাহতি রেখেছেন। নতুন প্রজম্মকে যুক্ত করছেন এর সাথে। এটা সারা বাংলাদেশের জন্য বিশাল অনুপ্রেরণা এবং বিশাল শক্তি। কারন আরো বহু হত্যাকান্ড হচ্ছে সারাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে । ক্রসফায়ারে যেমন অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছে। বিভিন্ন জায়াগায় সরকার দলীয় কিংবা বিভিন্ন ধরনের খুনি,গুন্ডা বাহিনী,দখলদার ও মাফিয়াদের আক্রমনে বহু মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু বহু জায়াগায় সে আন্দোলনটা ধরে রাখা যায়নাই। ভয়ে কিংবা সংগঠনের অভাবে এবং উদ্যোগের অভাবে। সেটা অব্যাহত রাখা যায় নাই। সেখানে খুবই আনন্দের সঙ্গে খুনিরা ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১০ বছর উপলক্ষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকেলে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আয়োজনে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে এই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরো বলেন, কিন্তু নারায়ণগঞ্জে সেটা হতে দেন নাই। আপনারা ত্বকী হত্যার আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। খুনি যারা এখনো সরকারের পৃষ্টপোষকতায় সাধ নিয়ে যাচ্ছে। তারা উল্টো হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু তারা খুব সাচ্ছন্দ্যে কিংবা নিশ্চিন্তে থাকতে পাড়েছেন না। কারন তারা প্রতিনিয়ত শুনছে জনতার কন্ঠস্বর ও জনগনের ঘৃনা। জনগনের প্রতিবাদ প্রতিনিয়তই তারা শুনছে। তাদের মধ্যে ভয়, আতংক ও দুশ্চিন্তা এগুলো কিন্তু কোন অংশে কম নাই। প্রতিনিয়তই তাদের মনে করিয়ে দেওয়া তারা খুনি এবং তাদের কি অপরাধ। ত্বকী হত্যার আন্দোলনের মাধ্যমে আপনারা দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সাথে আমরাও এটার দায়িত্ব পালন করতে পেড়ে আমারাও গর্বিত।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ, র্যাব, আদালত, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন সহ আমাদের সকল প্রতিষ্ঠান ধুমড়ে মুচড়ে ফেলা হয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠানই এখন কাজ করেনা। যদি কাজ করতে তাহলে ত্বকী হত্যার বিচার হতো। সকল হত্যারকান্ডের ভিতর ত্বকী হত্যার তদন্ত কিছুটা হয়েছিল। তদন্তের পরে আসামীদের শনাক্তও করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াকে কাজ করতে দেওয়া হয় নাই এবং হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, একটা প্রশ্নই বারবার আসছে। কি কারনে প্রধানমন্ত্রী যেভাবেই তিনি হয়ে থাকুক । কি কারনে সে খুনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কি কারনে ত্বকী হত্যার বিচার তিনি নিজে থামিয়েছেন। তিনি যে নিজে থামিয়েছেন এটা আমরা সবাই জানি। তিনি যে বলেছেন আমি সব জানি। সেটাও আমরা সবাই জানি। সংসদে তার বক্তব্যের পরেই বিচার প্রক্রিয়া পুরো থেমে গেছে সেটাও আমরা জানি। কি কারনে তিনি এটা করলেন। তার কি স্বার্থ। ত্বকী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একজন খুবই শক্তিশালী নাগরিকে পরিনত হচ্ছিল। এত অল্প বয়সে সে কবিতা লিখতো, গল্প লিখতো। বুঝাই গিয়েছিল বাংলাদেশ যে ধরণের নাগরিক চায় এবং যে মানুষ চায় ত্বকী সেটাই হচ্ছিল। সেই ত্বকীকে যারা হত্যা করলো তাদেরকে আমরা চিনি।
তিনি আরো বলেন, ত্বকী হত্যা নিয়েই আমাদের সেই আওয়াজকে আবার বলতে হবে দূর হ দুশাসন। ত্বকী হত্যার বিচার করতেই হবে এবং হতেই হবে। ত্বকীতে যারা খুন করেছে তাদের বিচার হবে। খুনিদের যারা রক্ষা করছে বছরের বছর তাদেরকেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। সেজন্যই এই আন্দোলন অব্যাহত রাখা। এই অঞ্চলের জন্য যেমন দরকার সারা বাংলাদেশের জন্য দরকার এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজম্মের জন্য দরকার। আপনারা সেই কাজ করছেন এই ধারা এই আন্দোলন আরো শক্তিশালী হোক। আমি নিশ্চিত আজ হোক বা কাল , কাল না হোক পরশো এই বিচার অবশ্যই হবে। এই খুনিদের বিচারের কাঠগড়ায় অবশ্যই দাঁড়াতে হবে।
সমাবেশে মানবাধিকার কর্মী খুশি বলেন, ত্বকীকে যারা হত্যার করেছে তাদের রিপোর্টও বিভিন্ন গনমাধ্যমে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। এখন এই দশ বছরেও কোন কিছু হচ্ছেনা কোন কিছু এগুচ্ছেনা এবং এর বিচার তো একদমই হচ্ছেনা। ত্বকী হত্যার বিচার শুধু নারায়ণগঞ্জেই না সারাদেশের হত্যার অবিচার সংস্কৃতি চলে আসছে। এটার উপর প্রভাব ফেলছে। আমরা খুব শক্তভাবেই মনে করি এর বিচার হওয়া উচিত। এই বিচার বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। এই ধরনের হত্যাকান্ড বন্ধে খুব শক্ত একটা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পঁচাত্তরে আপনার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যার বিচারের জন্য আপনি ইনডেমনিটি বাতিলের দাবী করেছিলেন। পরে ইনডেমনিটি বাতিল করে যে বিচার হয়েছে সেটি শুধু আপনার পরিবারের হত্যাকারিদের বিচার নয়, ন্যায়নীতিকে আপনি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু এখন বাংলাদেশে একটা বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, দশ বছর আগে ৬ মার্চ বিকেলে ত্বকী বাসা থেকে সূধীজন পাঠাগারের জন্য বের হওয়ার পর তাকে অপহরন করা হয়। প্রথমে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর অফিসে সায়েম প্লাজায় নেওয়া হয়। পরে তাকে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে নেয়ার আগে শ্রম কল্যান কেন্দ্রে নেয়া হয়। অপহরনের পর থেকে রাত নয়টায় আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে নেয়ার আগ পর্যন্ত ত্বকীর অবস্থানের তদন্ত প্রয়োজন। আমরা অবশ্যই নারায়ণগঞ্জকে খুনিমুক্ত করবো। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ঘাতকদের বাংলাদেশ হতে পারে না।
‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’ আয়োজিত সমাবেশে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচীব কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এডভোকেট এ বি সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, জেলা বাসদ সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, জেলা কমিউনিষ্ট পার্টি সভাপতি হাফিজুল ইসলাম জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে নেতৃবৃন্দ চাষাঢ়া থেকে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে ২ নং রেল গেইট এলাকায় শেষ হয়।