বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
তাজরীন ফ্যাশন হত্যাকান্ড দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত শোক সমাবেশে শ্রমিকনেতৃবৃন্দ বলেছেন, গার্মেন্টস মালিকদের অধিক লালসার কারণে একের পর এক সৃষ্টি হচ্ছে গার্মেন্টস ট্রাজেডি। কখনো আগুনে পুড়ছে কখনো ভবন ধ্বসে শতশত তরুন তাজা প্রাণ মৃত্যুর মিছিলে যায়গা করে নিচ্ছে। নেতৃবৃন্দ বলেন কারখানা আইনের চরম লঙ্ঘন করে এমনকি অগ্নিকান্ডের সময় কলাপসিবল গেট ভিতর থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে তাজরীন হত্যাকান্ড সংগঠিত হলেও দেশের প্রচলিত আইনী ব্যবস্থা ঐ হত্যাকারীদের ষ্পর্শ পর্যন্ত করতে পারছেনা। হত্যাকান্ডের ৫বছর পূর্ন হলেও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিতো দুরের কথা বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার করণে আসামীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাংলাদেশে গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক হত্যাকান্ডের ইতিহাস নিশ্চয় ছোট নয়, কিন্তু শ্রমিক হত্যকান্ডের বিচারের আজ পর্যন্ত কোন নজির নাই। ১৯৯০ সালে সারাকা গার্মেন্টসে আগুনের ঘটনা থেকে শুরু করে তাজরীন অগ্নিকা- এই সকল ক্ষেত্রেই কারখানা মালিকসহ সকল দোষী ব্যক্তিবর্গ প্রচলিত বিচার প্রক্রিয়ায় কালক্ষেপনকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে বিচার ব্যবস্থার বাইরে থেকে গিয়েছে। আর যে কারণেই প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন ও বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে তাজরীন হত্যাকান্ডসহ সকল অপরাপর হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, কারখানা আইনের লঙ্ঘন ও অবহেলা করে মানুষ হত্যার অপরাধে তাজরীন ফ্যাশনের মালিককে গ্রেফতার করা হলেও তাকে কৌশলে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে তাজরীনের নিহত-আহত কিছু পরিবারকে কিছু ক্ষতিপুরণ দেওয়া হলেও বেশি সংখ্যক শ্রমিক এখনো ক্ষতিপূরণ পায় নাই। অল্প সংখ্যক আহতদের ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কিন্তু বেশির ভাগ শ্রমিক এখনো কোন ক্ষতিপূরণ পায় নাই। এসব শ্রমিক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছে না –ফলে স্থায়ী পঙ্গুত্তের দিকে যাচ্ছে। বক্তারা বলেন, তাজরীনের অগ্নিকান্ড একটি নিছক দূঘটনা নয়, এটি একটি অবহেলা জনিত শ্রমিক হত্যার শামিল। বাংলাদেশে এ যাবত শতাধিক কারখানা-অগ্নিকান্ডে কয়েক হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরো অনেক বেশি। শত সহস্ত্র শ্রমিক পঙ্গুত্ত বরন করেছে। কিন্তু এই শ্রমিক হত্যার দায়ে আজ পর্যন্ত একজন মালিকেরও বিচার হয়নি। সরকারের ধনিক এবং মালিক শ্রেণীর প্রতি বিশেষ দূর্বলতার কারনেই শ্রমিকেরা সঠিক বিচার পাচ্ছে না। এমনকি তাদের ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরনও পাচ্ছে না। ফলে এ ধরনের অপরাধ ও দায়িত্বহীনতা দিনের পর দিন আরও বেড়ে চলছে, শ্রমিকেরা আরও বেশি অবহেলিত এবং বঞ্চিত হচ্ছে।
সমাবেশে অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রমিকনেতা এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, এবং প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা আবু হাসান টিপু।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি শ্রমিকনেতা মাহমুদ হোসেন-এর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখবেন রাশিদা বেগম, শহীদুল আলম নাননু, সাইফুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান আঙ্গুর, নাজমুল হাসান নাননু, আইয়ুব আলী, আল আমিন. হেলিম সরদার, সুমন মিয়া প্রমূখ।