নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
রেলওয়ের একটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এক ঠিকাদারকে গ্রেফতার করেছে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ।
বুধবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে ঠিকাদার জাকিরকে শহরের কালিরবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে ঠিকাদার জাকিরকে গ্রেফতার করার কিছুক্ষণ পরেই সদর মডেল থানায় গিয়ে হাজির হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
এসময় সদর মডেল থানার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মেয়র ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ যুবলীগে নেতাকর্মীদের তুমুল বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) উদ্যোগে শহরের জিমখানায় লেক ও বিনোদন পার্ক নির্মিত হচ্ছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা মনে করছেন, এটি হবে ‘দ্বিতীয় হাতিরঝিল’। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থাকতেই মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জিমখানা বিনোদন কেন্দ্র ও লেক নির্মাণের পরিকল্পনা নেন এবং উপযুক্ত স্থানের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লেখালেখি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ২০১১ সালের ২৭ জুন মেয়রকে এক চিঠিতে জানায়, নারায়ণগঞ্জের জিমখানা মৌজার প্রস্তাবিত ১৬ একর জায়গা রাজউক প্রণীত ঢাকা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (উঅচ) অন্তর্ভুক্ত এবং এটি খেলাধুলা ও বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ সাপেক্ষে পার্ক নির্মাণের ব্যাপারে অনাপত্তিও দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এর অনুকূলে বরাদ্দ বা ব্যবহারের সুযোগ দিতে নাসিকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ৩৫ বার চিঠি দেয়া হয়; কিন্তু উত্তর মেলেনি। এর আগে সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ২০০৯ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রীকে জিমখানার অব্যবহৃত ১৬ একর জমি হস্তান্তর বা ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার অনুরোধ করেন। রেলওয়ে সেই অনুরোধও উপেক্ষা করে। গত বছরের ৯ আগস্ট নাসিক জিমখানা লেক উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনে মেসার্স রত্না এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি করে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে প্রকল্পটির অনেকখানি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে, অর্থাৎ আগামী ৯ আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। উন্নয়নকাজের মধ্যে থাকবে চারপাশে হাঁটা পথ, তিনটি ঘাটলা, দুটি বসার প্যাভিলিয়ন, দুটি অবলোকন ডেক, একটি পদচারী সেতু, শিশুপার্ক, পাবলিক টয়লেট ইত্যাদি। স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেড এর নকশা করেছে। এটি সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে করলেও দ্বিতীয় ধাপে বাবুরাইল সংযোগ খালটির ওয়াকওয়ে, দুই পাড়ে বাঁধাই, ড্রেজিং এবং সৌন্দর্যবর্ধন ও পাতালপথ নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায়। সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। জিমখানার বাবুরাইল খালটির সংস্কারকাজ শেষ হলে শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর মধ্যকার সংযোগ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। একসময় এই খাল দিয়ে পণ্যবাহী নৌকা চলাচল করত।
এদিকে গত ২৭ জানুয়ারি রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা লেক ও পার্ক নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁদের ধাওয়া করে।
বুধবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যায় রেলওয়ের কানুনগো ইকবাল মাহমুদ বাদি হয়ে নাসিকের ঠিকাদার আবু সুফিয়ানকে প্রধান আসামী করে রতœা এন্টারপ্রাইজের মালিক জাকির হোসেনসহ ৭-৮ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে রেলওয়ের জায়গা লিজ না নিয়ে জোরপূর্বক নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে।
রাত পৌনে ১০ টার দিকে ঠিকাদার জাকিরকে কালিরবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সদর মডেল থানা পুলিশ। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সদর মডেল থানায় হাজির হন মেয়র আইভীসহ আওয়ামীলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
এসময় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মালেক পিপিএমকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমি থানার ভেতর থেকে এক পাও নড়বোনা। কার নির্দেশে এই মামলা হয়েছে সেটা জানতে চাই। কালকে থেকে আর উন্নয়ন কাজ চলবেনা। উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকলে প্রয়োজনে পদত্যাগ করবো। এই শহর শামীম ওসমানের শহর। শামীম ওসমানই থাকুক। মেয়র আইভীর সঙ্গে যাওয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির বলেন, প্রয়োজন হলে আমাদের সবাইকে গ্রেফতার করুন। আমরা এক পাও নড়বোনা।
এসময় তাদের সঙ্গে থানার উর্ধ্বতনদের তুমুল বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। পরে মেয়র আইভী সাংবাদিকদের বলেন, কোন অপরাধ ছাড়া আমাদের ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। ঠিকাদার জাকিরকে কাজ আমি দিয়েছি। মামলা করলে আমার বিরুদ্ধে করেন। গ্রেফতার করতে হলে আমাকে করেন। একটি বিশেষ মহলের নির্দেশে মামলা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে আমি সারারাত থানায় থাকবো। সকালে প্রয়োজনে আমাকেও আদালতে চালান করা হোক। নির্দোষ ব্যাক্তিদের থানায় রেখে বাড়ি যাবনা। একের পর এক আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। এর আগে আমার ভাই উজ্জল, ভাগ্নে, ঠিকাদার সুফিয়ানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমার অপরাধ আমি ত্বকী হত্যার বিচার চেয়েছি। সেভেন মার্ডারের বিচার চেয়েছি। নাট্যকার চঞ্চল হত্যার বিচার চেয়েছি। এজন্য বিশেষ মহলটি আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।
এদিকে বুধবার দিনগত রাত ১০ টা থেকে ২ টা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সদর মডেল থানায় ওসির কক্ষে অবস্থান করছিলেন মেয়র আইভীসহ অন্যরা।
সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মালেক জানান, বুধবার সন্ধ্যায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করেছে। মামলার আসামী ঠিকাদার জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।