নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
আগামী জুন মাসের মধ্যে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নির্মানাধীন ৭ স্কুল মহোৎসবের মাধ্যমে উদ্বোধন করার ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসতদ সদস্য সেলিম ওসমান।
বুধবার(২ মার্চ) বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নে শামসুজ্জোহা এমবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, ধামগড়ে শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়, মদনপুরে নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মানাধীন নতুন ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের অনুষ্ঠান গুলোতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সময় তিনি স্কুলের নির্মান কাজের জন্য শামসুজ্জোহা এমবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ২৫ লাখ, নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ১৫ লাখ এবং শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ১৫ টাকা সহ মোট ৬৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
বন্দরবাসীর উদ্দেশ্যে সেলিম ওসমান বলেন, বন্দরে উপজেলা সহ ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যারা আছেন আমার সাথে কাজ করে অভ্যস্ত। আমি তাদের কাজের জন্য কৃতজ্ঞ। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাদেরকে জয়ী করলে আমার কাজ করতে সুবিধা হবে। তবে নির্বাচন নিয়ে আমি কোন কথা বলবো না। যে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। যাকেই আপনারা জয়ী করে এনে দিবেন আমি তার সাথেই কাজ করতে পারবো। তবে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে নির্বাচনকে ঘিরে বন্দরে যেন কোন অশান্তি সৃষ্টি না হয়। উন্নয়ন কাজ করতে গেলে একটি সংঘবদ্ধ দল প্রয়োজন হয়। বন্দরে কোন রাজনৈতিক দল আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। বন্দরের আমি যেখানেই যাই সেখানেই আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সবাই একসাথে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী মে মাসে শীতলক্ষ্যা সেতুর কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। নবীগঞ্জ দিয়েও একটি সেতু নির্মানের জন্য আমি আবেদন করেছি। ইতোমধ্যে জায়গা পরিদর্শন করে গেছেন পর্যবেক্ষন দল। মদনগঞ্জের শান্তিরচরে নীটপল্লীর জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ২০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১০০ একর জমির মধ্যে আপনাদের জন্য একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। নীটপল্লী স্থাপন হলে সেখানে ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এখন শুধু কাজ ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। ভবিষ্যত প্রজন্মকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে হবে। তাহলে সারাদেশে বন্দর একটি উপার্জনশীল উপজেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
নারীদের সাবলম্বী হওয়ার আহবান রেখে তিনি বলেন, আমরা ৫০০ নারীকে সাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহন করেছি। তারা যদি সফল হতে পারেন তাহলে নারায়ণগঞ্জ, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, ও ফতুল্লা থানা এলাকায় আমরা আরও ২০ হাজার নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবো। এছাড়াও আমরা ৩০০ যুবককে সাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছি। নারীদের মত ২০ হাজার যুবককেও সাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলবো।
বন্দরের মায়েদের প্রতি আহবান রেখে তিনি বলেন, আপনারা বাড়িতে গরু ছাগল, হাঁস, মুরগি পালন করেন। আপনাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়ান। মায়েরা সাবলম্বী হলে আপনাদের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করেন। যাতে করে বাচ্চাদের স্কুলের বেতনে জন্য কারো কাছে হাত পাততে না হয়। আর সালাম পাওয়ার জন্য কোন স্কুলের কর্তৃপক্ষ যেন কাউকে বেতন ফ্রি করে না দেন। তাহলে স্কুলের উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না।
অবৈধ গ্যাস সম্পর্কে তিনি বলেন, বন্দরে গ্যাস নিয়ে অনেকের অনেক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সরকারীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নতুন করে আর কোন বাসা বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হবে না। বিশ্বের কোন দেশেই পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয় না। যদি বন্দরের প্রতিটি বাড়িতে একটি গরু ১০ টি ছাগল ৫০টি মুরগি পালন করেন তাহলে ওই বাড়িতে আর গ্যাসের জন্য সমস্যা ভোগ করতে হবে না। এতে করে ওই পরিবারটি যেমন নিজে আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন তেমনি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারবেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাড়ি একটি খামার গড়ার স্বপ্নকেও বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে বিশ্বে দরবারে মাথা উচু করে দাড় করানোর গৌরবের অংশীদার হতে পারবেন।
বন্দরবাসীর প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, রাস্তার দুই পাশে জমি গুলো খালি পড়ে আছে কিন্তু কেউ চাষাবাদ করেন না। আমি সেলিম ওসমান যদি কৃষক হতে পারি। তাহলে আপনারা কেন পারবেন না। বন্দরের এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। যেখানে মাটি পাবেন সেখানেই চাষাবাদ করবেন। সামনে বন্দর সমরক্ষেত্র মাঠে বৃহৎ আকারে বৃক্ষ মেলার আয়োজন করা হবে। যদি বন্দরের প্রতিটি মানুষ প্রতি বছর ১ লাখ করে গাছের চারা লাগাতে পারেন তাহলে ১৫ থেকে ২০ বছর পর প্রতি বছরেই বন্দরের উন্নয়নের জন্য ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে আর তা দিয়ে বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
স্কুল গুলোর ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) কালাম, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, আনোয়ার হোসেন আনু, বন্দর উপজেলার সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান আলেয়া বেগম, মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাপ হোসেন, শামসুজ্জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুহিদ উদ্দিন, শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাসুম আহম্মেদ, বোরহান উদ্দিন, জিএম সরদার জিলানী প্রমুখ।
উল্লেখ্য ইতোমধ্যে সেলিম ওসমানের ঘোষণা অনুযায়ী তার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন ৭টি ইউনিয়নে নির্মানাধীন স্কুল গুলোর মধ্যে মুছাপুরে শামসুজ্জোহা এমবি ইউনিয়ন হাই স্কুলে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার, বন্দর ইউনিয়নে নাসিম ওসমান মডেল হাইস্কুলে ২ কোটি ৪০ লাখ, কলাগাছিয়া ইউনিয়নে আলহাজ্ব খোরশেদুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, গোগনগর ইউনিয়নে পুরান সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ কোটি ৭৫ লাখ, মদনপুর ইউনিয়নে নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০ লাখ, ধামগড় ইউনিয়নে শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ কোটি টাকা ৪০ লাখ টাকা, শেখ রাসেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।