স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন পেয়েছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। আজ বুধবার বেলা দুইটার দিকে ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম এ আদেশ দেন।
প্রবীর সিকদারের পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন আইন ও সালিস কেন্দ্রের দুই আইনজীবী আবদুর রশিদ ও মিজানুর রহমান।
আইনজীবী আবদুর রশিদ বলেন, আদালতকে জানানো হয়, এ মামলাটি ফরিদপুরে চলার সময় আদালত প্রবীর সিকদারকে জমিন মঞ্জুর করেন। পরবর্তী সময়ে আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকেও অব্যাহতি দেন। এ জন্য এ মামলায় প্রবীর সিকদারকে জমিন দেওয়া হোক। আদালত প্রবীর সিকদারকে স্থায়ী জামিন দেন এবং মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন আগামী ২৯ জুন। ওই দিন প্রবীর সিকদারের বিষয়ে দেওয়া অভিযোগপত্রের শুনানি হওয়ার কথা।
প্রবীর সিকদার বর্তমানে দৈনিক বাংলা ৭১, উত্তরাধিকার-৭১ নিউজ অনলাইন পত্রিকা ও উত্তরাধিকার নামের একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদক।
জামিন পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সাংবাদিক প্রবীর সিকদার এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আইনি লড়াই করে প্রমাণ করব আমার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা এ মামলাটি ভিত্তিহীন।’
গত বছরের ১৬ আগস্ট প্রবীর সিকদারকে একমাত্র আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করা হয়। মামলাটি করেন জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির উপদেষ্টা স্বপন পাল। সেই রাতেই প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ১৯ আগস্ট তিনি জামিনে মুক্তি পান।
মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, প্রবীর সিকদার গত ১০ আগস্ট তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। যার শিরোনাম ছিল ‘আমার জীবনের শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’। শিরোনামের নিচে তার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন—এমন তিনজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন। এঁদের মধ্যে এক নম্বরে আছে এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম। স্ট্যাটাসটি পড়ে বাদীর দৃঢ়বিশ্বাস হয়েছে, প্রবীর সিকদার ইচ্ছাকৃতভাবে মোশাররফ হোসেন সম্পর্কে অসত্য লেখা লিখে মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। লেখাটি জনসমক্ষে প্রকাশের মাধ্যমে উসকানি প্রদান করে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে মন্ত্রীকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রীর মানহানি ঘটেছে। যা একটি ফৌজদারি অপরাধ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রবীর সিকদারের বাবাসহ তার পরিবারের ১৪ জনকে হত্যা করে। ২০০১ সালে জনকণ্ঠ পত্রিকার ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকাকালে রাজাকারদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন লেখার পর সন্ত্রাসীদের হামলায় তাকে একটি পা হারাতে হয়। এরপর থেকে তিনি কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাফেরা করছেন।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনির হোসেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গত ১৬ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত ১৯ এপ্রিল ফরিদপুরের ১ নম্বর আমলি আদালতে এটি উপস্থাপন করা হয়। অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম মো. মাসুদ আলী তাৎক্ষণিকভাবে মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন।