বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
জাতীয় পার্টিতে কোন বিভেদ নাই, বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদিরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে এবং ভবিষ্যতেও এ ঐক্য বজায় থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তাঁর এ বক্তব্যের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবন্দরাও। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি সব সময় দেশের উন্নয়নে কাজ করে গেছে। যারা দেশের উন্নয়ন সহ্য করতে পারেন না, যারা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে চায়, তারাই জাতীয় পার্টিতে বিভেদ খুঁজে বেড়ায়।
৩০ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড় বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন ময়মনসিংহপট্টিতে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনের এমপি সেলিম ওসমানের উদ্যোগে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চেহলাম উপলক্ষে দোয়া-মাহফিলের পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় এমপি সেলিম ওসমান এ কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকার সঞ্চালনায়, সভাপতির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ১৫ আগস্টে পরিবারের নিহত সকল সদস্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ শহীদ, দাদা প্রয়াত এমপি খান সাহেব ওসমান আলী, বাবা প্রয়াত এমপি এ.কেএম শামসুজ্জোহা, বড় ভাই প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমান, বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি জালাল হাজী সহ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে অতীতে জনগনের সেবা করে যাওয়া রাজনীতিবিদ সকলের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ এর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
এদিকে দোয়া অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহপট্টি মাঠে নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তর থেকে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। দলমত নির্বিশেষে সেখানে আনুমানিক ৫০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। দোয়া স্থল ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ, দোয়া স্থল ছাড়াও আশপাশের জায়গা এবং রাস্তার দুপাশ সকলের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পরিপূর্ন হয়ে উঠে। আশেপাশের বাড়ির ছাদ গুলোতে লোকজনের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। এমপি সেলিম ওসমানের উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত মাহফিলটি আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, মুক্তিযুদ্ধো সংসদ, বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ মানুষের সবর উপস্থিতি দোয়া মাহফিলটি সর্বদলীয় দোয়া মাহফিলের রূপ নেয়।
দোয়া অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর সহধর্মিনী মিসেস রওশন এরশাদ এমপি বলেন, আমি আপনাদের কাছে শুধু তার জন্য দোয়া চাই আর কিছুই চাইনা। এরশাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন। বঙ্গবন্ধু দেশের উন্নয়ন শুরু করেছিলেন আর তার মৃত্যুর পর উন্নয়নের এই ধারা রক্ষা করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
রওশন এরশাদ এমপি আরো বক্তব্যের শুরুতেই এমপি সেলিম ওসমানকে ছেলে সম্বোধন করে দোয়ার আয়োজন করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, উনি বাংলাদেশে শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করে ছিলেন। মসজিদ মাদ্রাসার বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফের ব্যবস্থা করেছেন। উনি এতিমদের জন্য জাকাত ফান্ড চালু করেছেন। উনার এসব কর্মকান্ডের সুফল বাংলাদেশের মানুষ এখনো ভোগ করছেন। উনার জানাজায় মানুষের ঢল নেমেছে। আমি নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছেও কৃতজ্ঞ আজকে আপনারা এখানে উনার জন্য আসছেন আপনারা সবাই উনাকে দোয়া করবেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, জীবিত এরশাদের চেয়ে মৃত এরশাদ অনেক বেশি শক্তিশালী। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসংখ্য কাজ করেছেন। তিনি অনেক স্বপ্নই পূরণ করতে পারেননি। আমরা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাজনীতি করছি। আমরা তার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত ও অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবো। অসীম জনপ্রিয়তা নিয়েই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। উনি উপজেলা ব্যবস্থা চালু করেছেন। উনার ৩৭ বছর রাজনৈতিক জীবনে মাত্র ৯ বছরের মত ক্ষমতায় ছিলেন। যা রাজনীতিক জীবনের মাত্র চার ভাগের একভাগ সময়। বাকি তিন ভাগ সময় উনি ক্ষমতার বাইরে থেকেই দেশে এবং জনগনের সেবা করে গেছেন। দেশ এবং জনগনের এ সেবার ধারাকে আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি বলেছেন, অনেক জাতীয় পার্টিতে বিভেদ দেখেন। উনারা জাতীয় পার্টিকে দুই ভাগে বিভক্ত দেখতে পায়। কিন্তু সেটা শুধু পত্রিকায় পাতাতেই। আজকে এখানে রওশন এরশাদ, জিএম কাদের দুজনই উপস্থিত আছেন। আমি সহ আমরা সবাই উনাদের নেতৃত্বেই আছি।
দোয়া-মাহফিল ও আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপাতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফকরুল ইমাম এমপি, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ওমর, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু,ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ স্বপন, মিজানুর রহমান মিজান, সোলায়ামন সামি।
স্থানীয়দের মধ্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম এ রশিদ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানা উল্লাহ সানু সহ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওতাধীন সিটি কপোরেশনের কাউন্সিলর ও ৭টি ইউনিয়নের সকল চেয়ারম্যানবৃন্দ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।