বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১তম ‘এশিয়া- ইউরোপ মিটিং’ (আসেম) সম্মেলন উপলক্ষে ১৪ থেকে ১৬ জুলাই মঙ্গোলিয়া সফর করেন। এই সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আসেম সম্মেলনেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচিত বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়ে গেছে। দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জঙ্গি প্রতিরোধে গণকমিটি গঠন করা হচ্ছে। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে, আগুন-বোমা সন্ত্রাস করছে, যুদ্ধাপরাধী- তারা কী বলছে তাদের কথা আলাদা। কিন্তু দেশের যেসব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে সত্যিকার অর্থেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে তাদের ঐক্য গড়ে উঠেছে। যারা ‘সর্প হইয়া দংশন করে আর ওঝা হয়ে ঝাড়ে’ তাদের কথা আলাদা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আগে মানুষ মনে করত দরিদ্র পরিবারের মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই বোধ হয় জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান, যারা ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেছে। তারা কেন এসব করছে? এসব করলে নাকি বেহেস্তের দরজা খোলে যাবে! কিন্তু মানুষ খুন করলে বেহেস্তের দরজা খোলে না।
গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেম শীর্ষ সম্মেলনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। যারা ধর্মের নামে তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়াতে উসকানি দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কারা তাদের পেছন থেকে উসকাচ্ছে? এই যুবকদের কারা অস্ত্র দিচ্ছে, কারা অর্থ যোগাচ্ছে, তাদের তথ্য সম্মিলিতভাবে খুঁজে বের করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সময় অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে। তুরস্কের জনগণ সেনা অভ্যুত্থান মোকাবেলা করে প্রমাণ করেছে জনগণই ক্ষমতার উৎস।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন আসেম সম্মেলনে তখনই ফ্রান্সে হামলার ঘটনার খবর আসে। আমি তখনও নিন্দা জানিয়েছি, এখনও নিন্দা জানাচ্ছি। এরপরই তুরস্কের সেনা অভ্যুত্থানের খবর আসে।
তিনি বলেন, আসেম সম্মেলনে আমি আমার বক্তব্যে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা তুলে ধরি। পাশাপাশি জঙ্গিবাদের মদদদাতা, অর্থদাতা, অস্ত্রদাতাদের খুঁজে বের করতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসেম সম্মেলনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি আমি বাংলাদেশের গুলশানে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে জাপানের প্রধানমন্ত্রী, ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতিকে সরকারের চলমান তদন্ত সম্পর্কে জানাই।
শনিবার সন্ধ্যায় উলানবাটোর থেকে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। এর আগেও বিদেশ সফরের পর বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে বিদেশ সফরের বাইরেও দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে গুলশানে দেশের নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেও এই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো ধরনের হামলার ঘটনায় বিশ্ব নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে বাংলাদেশের কোনো ঘটনা ঘটলে তা নেতিবাচকভাবে দেশের মিডিয়াই আগে তুলে ধরে। তারাই আগে সেই ঘটনার লাইভ করে দেখায় কোথায় লাশ পড়ে আছে, কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ফলে বিশ্ব মিডিয়াগুলো সেগুলো প্রকাশ করে। এতে দোষটা কার সেটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে।
সাংবাদিকদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই ক্ষমতায় এসে দেশকে এগিয়ে নেয়ার চিন্তা করেছে। আর অন্যরা নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে কাজ করেছে। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মানুষের জন্য পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে। সাংবাদিকরা সেটা কখনও লেখেননি। কিন্তু আমি তখন থেকেই এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। কারণ আমি চ্যালেঞ্জ নিতে জানি। আমরা এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। যা তারা কখনও চিন্তা করেনি।