বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জের গিয়াস উদ্দিন ইসলামি মডেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মোসাদ্দেকের বিরুদ্ধে ছাত্র অধিকার নিয়ে কথা বলায় মহানগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক দ্বীন ইসলামকে গুলি করে মারার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে ওই ছাত্রলীগ নেতা। এই কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র তানভীন ইসলাম। তাকে নানা অজুহাতে ও ব্যক্তিগত আক্রোশে পরীক্ষার ফরম ফিলাপে বাধা প্রদান করছেন কলেজের ভাইস প্রিন্সপাল ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বিএনপির সক্রিয় কর্মী মোসাদ্দেক। এমনই অভিযোগ উঠেছে সর্বত্র। এই মোসাদ্দেক বিএনপির মিটিং মিছিলে নিয়মিত অংশগ্রহন করেন। শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার কারিগড় সেই শিক্ষকই এখন ছাত্রের ভবিষ্যৎ নষ্টে উঠে পরে লেগেছে। এমনই অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী তানভীন ও এলাকাবাসী। এই ছাত্রের ফরম ফিলাম না করতে দেওয়ার সমস্যার বিষয়টি মহানগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক দ্বীন ইসলামকে সহযোগীতার জন্য জানান তিনি। ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করে ছাত্রলীগ সেই আদর্শ নীতি অনুসরন করে দ্বীন ইসলাম কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেককে ছাত্র তানভীণকে ফরম ফিলাপ করে পরীক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। উল্টো খেপে গিয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে তার লোকজন দিয়ে প্রহার করে কলেজ থেকে বের করেন। এ নিয়ে একটি ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মোসাদ্দেক রাগান্বিত অবস্থায় তার অফিস কক্ষে কয়েকজন লোক নিয়ে আঙ্গুল তুলে দ্বীন ইসলামকে হুমকি দিচ্ছেন। হুমকির বিষয়টি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন দ্বীন ইসলাম।
দ্বীন ইসলাম অভিযোগে উল্লেখ্য করেন, গত ২৫/০৮/২০২১ইং তারিখ দুপুর আনুমানিক ২.১৫ টায় গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের শিক্ষার্থী তানভীন ইসলাম এর সাথে আমার হিরাঝিল এলাকায় দেখা। তখন তানভীন ইসলাম কান্না করিতেছিল। আমি কান্নার বিষয় জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন আমি এইচএসসির-২০২১ এর ফরম ফিলাপ করতে পারছি না। গিয়াস উদ্দিন ইসলামি মডেল কলেজ এর ভাইস প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক স্যার আমাকে কিছুক্ষণ আগে জানান আমি এ বছর পরীক্ষা দিতে পারবাে না। কিন্তু আমার কলেজের বেতন, ল্যাবরেটরী ফি সহযাবতীয় ফি আমার পরিশােধ করা আছে। আমার কাছে কলেজের কোন বকেয়া নাই। আমি নিয়মিত কলেজের নিয়মানুযায়ী সকল এ্যাসাইমেন্ট জমা দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, বুধবার (২৫/০৮/২০২১ইং) বিকেল ৫টায় ফরম ফিলাপ এর টাকা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। কিন্তু কিছুক্ষণ পূর্বে তিনি আমাকে অবহিত করেন। তানভীন আমার পূর্ব পরিচিত এবং সে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। আমি তার কথা শুনে মানবিক দিক বিবেচনা করে স্যারকে প্রথমে ফোন দেই, কথা বলতে চাই। পরে স্যার আমাকে কলেজে আসতে বলে। প্রথমে আমি স্যারের অনুমতি নিয়ে অফিসে প্রবেশ করি। স্যার আমাকে বসতে বলে আমার পরিচয় জানতে চায়। তারপর আমি আমার স্থানীয়, পারিবারিক এবং রাজনৈতিক পরিচয় স্যারকে পেশ করি। আমি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। তিনি আমার পরিচয় শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকে। তারপরও আমি স্যারকে বারবার অনুরােধ করি, যাতে সে তানভীনকে এইচএসসির ফরম ফিলাপ করতে দেন। তখন তিনি আমাকে বলেন এই কলেজ আমার নিয়মে চলে; এটা তােলারাম কলেজ না। ছাত্রলীগ সভাপতি এসে আমিরি সাথে বসে থাকে। তুই আসছিস আমার সাথে কথা বলতে। এখনি আমার রুম থেকে বের হয়ে যা। তখন আমি স্যারকে বিনয়ের সাথে বলি, আপনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারেন না। তিনি আমার ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রুমে অবস্থানরত অন্যান্য শিক্ষকসহ ছাত্রদল নেতা মােঃ শাকিল ও অন্যান্য বহিরাগত যারা তার আশপাশে বসা ছিল তাদেরকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে আমাকে মারার জন্য বলে এবং গালাগালি করতে থাকে এবং বলে তুই কার অনুমতি নিয়া কলেজে আসছিস। তখন তাদের মধ্যে আমি যাদের চিনতে পেরেছি তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযােগ্য হলাে ছাত্র দলের নেতা- মােঃ শাকিল, কলেজের শিক্ষক নিলয়, আবু তাহের তারা আমার হাত ধরে ফেলে এবং আমাকে প্রহার করতে উদ্ধত হয়।
তিনি আরো বলেন, এক পর্যায়ে আমি তাদেরকে বােঝানোর চেষ্টা করি এখানে তাে আমার দোষ নাই, আপনারা এমন করতেছেন কেন? কিন্তু তখনও মােসাদ্দেক স্যার বলতেছেন, ওরে মার ওরে বুঝাইয়া দে আমি কে? তারপর আমি কোনমতে মােসাদ্দেক স্যার এর রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আমার রাস্তা আটকাইয়া দেয় এবং আমার পেছনে অসিতে থাকে এবং শাকিলকে বলে আমি যেন কোনমতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে না পারি এবং আমাকে গুলি করে মেরে পুকুরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় আমি কোন উপায় না পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) মোঃ রিপন স্যারকে ফোন দেই এবং আমাকে উদ্ধার করতে বলি। ফোন দিতে দেখে তখন তারা অফিসে ঢুকে যায়, এই সুযােগে আমি কোন রকম নিজের জীবন বাচিয়ে বের হয়ে চলে আসি। এইদিকে এই ঘটনার খন্ডিত ভিডিও ফুটেজ কাঁটা-ছেড়া করে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অতএব, জনাবের নিকট আকুল আবেদন উক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে সাধারণ ডাইরীতে তালিকাভুক্ত করে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আকুল আবেদন করছি।
এদিকে এই কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মোসাদ্দেক উল্টো হুমকির অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। মোসাদ্দেক গনমাধ্যমকে জানান, কলেজের প্রিন্সিপাল কখনো এ ধরনের হুমকি দেয় না।’
এ ব্যাপারে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, আমরা জানি এই কলেজটি বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের। এই কলেজে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এখানে বিএনপি জামাতের বিভিন্ন নাশকতার গোপন মিটিং করা হয়। কোন ছাত্রলীগ নেতা যদি স্যারদের সাথে খারাপ আচরণ করে তাহলে আমরা অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। কিন্তু বিএনপি জামাতের লোকজন যদি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যাচার করে তাহলে সেটাতো আমরা মেনে নিতে পারিনা। ছাত্রলীগ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের কথা বলে। মেধাবী ছাত্র তানভীনের ছাত্র অধিকার নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা দ্বীন ইসলাম কথা বলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছে। উদ্দেশ্য প্রনোদীতভাবে যড়যন্ত্র করে দ্বীন ইসলামকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। একটা ছাত্রকে কেন পরীক্ষার জন্য ফরম ফিলাপ করতে দেয়া হবেনা। আমি মনে করি তানভীনের ছাত্র অধিকার আদায়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সকল ছাত্রের প্রতিবাদ করা উচিত।
ভুক্তভোগী ছাত্র তানভীন জানান, নানা অজুহাতে আমাদের কলেজের মোসাদ্দেক স্যার আমাকে পরীক্ষার ফরম ফিলাম করতে দিচ্ছে না। আমি সবগুলো এ্যাসাইমেন্ট পূরন করেছি। দু একটা এসাইনমেন্ট আমার শারীরিক সমস্যার কারনে করতে পারিনি। আমার অসুস্থ্যতার সকল কাগজ পত্র আমার অভিভাবক নিয়ে গেলে মোসাদ্দেক স্যার রেগে গিয়ে আমার বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে এবং ছুড়ে ফেলে দেয়। এরপর থেকে তিনি আমার সাথে খারাপ আচরণ করছেন এবং শেষ দিনে আমাকে ফরম ফিলাপ করতে দিচ্ছেন না। বিষয়টি আমি কান্নারত অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা দ্বীন ইসলাম ভাইয়ের কাছে সহযোগীতার জন্য যাই। তিনি আমাদের কলেজের মোসাদ্দেক স্যারকে একা অনুরোধ করতে যান কিন্তু স্যার তাকে হয়রানী করেন। দ্বীন ইসলাম ভাই আমি যাতে পরীক্ষা দিতে পারি এবং আমার একটা বছর যাতে এভাবে নষ্ট না হয় সেজন্য সহযোগীতায় গিয়েছিলেন। তিনি একজন ভাল মানুষ। স্যার য়ে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা।
মহানগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নাসিম মাহমুদ তপন বলেন, গিয়াস উদ্দিন ইসলাম স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র মুরছালিন হত্যা হয়েছিলো এই কলেজে যার লাশ পাওয়া গেছে কলেজের পুকুরে। এখনো এটার বিচার হয় নাই। ছাত্রলীগ নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করছে বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক স্কুল এন্ড কলেজ কর্ন্যধাররা। এই কলেজের মোসাদ্দেক স্যার ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং বিএনপির সক্রিয় কর্মী। এই কলেজে নিয়মিত জামাত বিএনপি গোপন মিটিং করা হয়। তারাতো স্বাধীনতা পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেই। ভাইস প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক ওনি তার পদের অপব্যবহার করছে। একজনের ছাত্রের জীবন নিয়ে এভাবে তিনি খেলতে পারেন না। আমরা সিদ্ধিরগঞ্জ বাসি মুরছালিন হত্যার বিচার চাই এবং ছাত্রলীগ নেতা দ্বীন ইসলামকে ষড়যন্ত্রমূলক হয়রানীর বিচার চাই।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নিবো।