বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
চীনের বিখ্যাত একটি প্রবাদ বাক্যের উদ্ধৃতি টেনে নারাণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন ‘চেঞ্জ অর ডাই, পরিবর্তন করো অথবা মরো। তিনি বলেছেন, আমি কেমন যেন সবার কাছে মুরুব্বি হয়ে গেছি। আমাদের মাঝে দেখা যায়, আইনজীবী-আইনজীবীদের মাঝে ঝগড়া, রাজনীতিদের মাঝে ঝগড়া এমনকি নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের মাঝেও ঝগড়া। কিন্তু আমার সাথে কারো সাথে ঝগড়া হয় না। কোন সংসদ সদস্যের সাথে ঝগড়া হয় না। সবাই আমাকে মুরুব্বি মনে করে দায়িত্ব দেন। কিন্তু আমাদেরকে এ অবস্থার পরিবর্তন আনতেই হবে। কবে এই ঝগড়া বন্ধ হবে? চীনে একটি প্রবাদ আছে ‘চেঞ্জ অর ডাই’। আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়তে আমাদেরকে পরিবর্তন আনতে হবে। সামনে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আসছে। বার বার ক্ষমতা আসলে নিজের মাঝে কেমন যেন একটা ক্ষমতার দম্ভোক্তি চলে আসে। এই দম্ভোক্তির পরিবর্তন করতে হবে।
শনিবার ৫ নভেম্বর বিকেল ৫টায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের গ্রীণলন গ্রাউন্ডে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘একজন শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগীতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর উপর আয়োজিত রচনা প্রতিযোগীতা সম্পর্কে তিনি বলেন, একটা সময় ছিল আমরা জয় বাংলা স্লোগান দিতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১টি বছর আমাদের কলা টিপে ধরে হয়েছিল। আমরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করতাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যাদের বাবা মায়ের বিয়ে হয়নি তাদেরকেও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিতে দেখেছি। রাজাকারদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে মন্ত্রীত্ব দিয়ে পবিত্র সংসদে বসানো হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই অবস্থার পরিবর্তন আনতে পেরেছি। এবছর নারায়ণগঞ্জ এবং বন্দরের মানুষ বুঝতে পারবে বিজয়ের আনন্দ কাকে বলে স্বাধীনতার আনন্দ কাকে বলে।
নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে নারায়ণগঞ্জের মানুষ পাট ছাড়া কিছুই চিনতো না। কিন্তু একটা সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে পাটকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এখন পাটের উপর সিআইপি পায় খুলনার মানুষেরা। মেট্টো পলিটিন চেম্বারকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। জুট অ্যাসোসিয়েশনকে ডাক্তারের চেম্বারে পরিণত করা হয়েছে। আমি এ জন্য কোন সরকারের দোষ দেব না। এই দোষ আমাদের নিজেদের। এরপর আমরা নারায়ণগঞ্জের ৭০ জন মানুষ বিকেএমইএ গঠন করেছি। আজকে বিকেএমইএ এর মাধ্যমে নীট পন্য রপ্তানিতে আমরা বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছি। তারপরও আমি বলবো আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষ অবহেলিত বঞ্চিত। আমি নারায়ণগঞ্জে যারা ইতিহাসের ছাত্র আছেন বিশেষ করে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাহনেওয়াজ চৌধুরীকে অনুরোধ করবো নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস তুলে ধরেন। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস লেখার মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন আমরা কি হারিয়েছি।
ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বন্দরের শাহী মসজিদটি একটি ঐহিত্য এটি সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জে কেল্লা এবং বন্দরে সোনাকান্দা কেল্লা রয়েছে। যেখানে একটি ফুলের গাছ নেই। অথচ শহরে ছেলেমেয়েদের বসার কোন স্থান নেই। কোন অনুষ্ঠান করতে আমাদের নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে আসতে হয়। কিন্তু সবার পক্ষে ক্লাবে অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। তাই এই কেল্লা দুটি রক্ষনাবেক্ষন প্রয়োজন। আমি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।
মাদক দূরীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু মাদক মাদক বলে বক্তব্য দিলেই মাদক দূর করা যাবে না। হতাশা নিয়ে মাদক দূর করা সম্ভব নয়। আগে আমাদেরকে তরুণ সমাজের মাঝ থেকে হতাশা দূর করতে হবে। হতাশা দূর করতে তাদের কর্মসংস্থান দিতে হবে, তাদেরকে সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যে আনতে হবে। বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগীতার আয়োজন করে তাদেরকে সম্মানিত করতে হবে। তরুণ সমাজের মধ্য থেকে হতাশা দূর করতে পারলে সমাজ থেকে মাদক দূর হয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক। মূখ্য বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাহনেওয়াজ চৌধুরী। আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) শাহীন আরা বেগম, বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিব, সদর উপজেলা বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভূমি কর্মকর্তা নাহিদা বারী।