বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের দাবিতে তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাও ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে “আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী” সংগঠন। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারী) দুপুরে শহরের
চাষাঢ়া বালুরমাঠ এলাকায় তিতাস গ্যাস অফিসের সামনে সর্বস্তরের মানুষদের নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসময় বিভিন্ন এলাকার নারী পুরুষ ঝাড়ু মিছিল নিয়ে তিতাস গ্যাস অফিসের সামনে মিলিত হয়। ঘেরাও ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আন্দোলনরত জনগন বিভিন্ন শ্লোগান দেন। ‘গ্যাস নাই গ্যাস দে, দুর্নীতি ছাইড়া দে। গ্যাসের চুলায় গ্যাস নাই, মা-বোনদের ঘুম নাই’ এসব স্লোগান দেন তারা। আবাসিক চুলায় পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা না করলে এবং তাদের দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারী প্রদান করেন আন্দোলনরত জনগন।
গ্যাসের সংকটের কারনে তাদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে কয়েকজন নারী পুরুষ তারা বলেন, গ্যাসে কারনে আমরা ঠিকমত রান্না করতে পারিনা। ছেলেমেয়ে স্কুল কলেজ এবং কাজে না খেয়ে যায়। সারাদিনই গ্যাস থাকেনা। এর মধ্যে গ্যাস বিল বাড়াইছে। তারমধ্যে পাইনা গ্যাস। বিল তো মাসে মাসে আমাদের দিতে হয়।
গ্যাসের জন্য আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। গ্যাস নাই অথচ বিল নিতাছে। বিল না দিলে লাইন কেটে দেয়। নারায়ণগঞ্জের মত গ্যাসের সংকট আর কোথাও নাই। জেলায় অবৈধ গ্যাস লাইন দিচ্ছে দুর্নীতিবাজরা। যার কারনে গ্যাস কম। তিতাসের অসাধূ কর্মকর্তাদের চিহ্ণিত করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা গ্যাস চাই আর কিছু চাইনা। সরকার যাতে এই বিষয়টা দ্রুত সমাধান করে দেন। আমাদের দাবি না মানলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবে।
সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেন, গ্যাসের এই তীব্র সংকট সমাধানের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে আবাসিক চুলায় নিরবিচ্ছিন্ন পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের দাবী জানান এবং নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করনে গোদনাইল-পঞ্চবটি নবমির্মিত ১২ ইঞ্চি লাইনের চাষাড়া পয়েন্ট হতে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি ৬ ইঞ্চি সরবরাহ পাইপ লাইন স্থাপন ও পুরোনো সার্ভিস পাইপ লাইন সংস্কার করে নতুন অধিক ব্যাসের পাইপ স্থাপন করার জোর দাবী জানান। অন্যথায় ভুক্তভোগী সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে।
সংগঠনটির উপদেষ্টা এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, গ্যাসের জন্য মানুষ ঠিক মতো রান্না করতে পারে না। ছেলে-মেয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় নাস্তা দিতে পারে না। রাত্রী জেগেও গ্যাসের অভাবে রান্না করতে পারে না। তাই তিতাস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি, আপনাদের জটিল সমস্যা যদি থাকে অন্ততপক্ষে ভোর ৬ টা থেকে বেলা ২ পর্যন্ত আমাদের গ্যাস দেন। তারপরে রাত ৮ টার পর থেকে আবার গ্যাস দেন। তিনি আরো বলেন, যদি গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা না হয় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে হরতালের কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে।
আজকের এই ঘেরাও কর্মসূচীতে বিভিন্ন এলাকা তথা খানপুর, গলাচিপা, মাসদাইর, ভূইয়ারবাগ, আদর্শগ্রাম, নাগবাড়ি, বাবুরাইল, জল্লারপাড়, পাইকপাড়া, শহীদ নগর সহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে ব্যানার ও মিছিল সহকারে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ যুবকদের খন্ড খন্ড মিছিল ঝাড়– এবং প্লেকার্ড নিয়ে এসে ঘেরাও কর্মসূচী সফল করেন এবং ঘেরাও শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বঙ্গবন্ধু সড়ক-চাষাড়া গোল চত্তর প্রদক্ষিন করে আবার তিতাস গ্যাস অফিসের সম্মুখে এসে শেষ হয়। অতঃপর মহা-ব্যবস্থাপক বরাবরে স্থানীয় উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মাধ্যমে তাঁর কাছে একটি স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।
সংগঠনটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নূর উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, অনতিবিলম্বে আবাসিক চুলায় পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা না হলে এই তিতাস গ্যাস অফিসের সম্মুখে ভুক্তভুগী মা-বোনদের নিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। যতদিন পর্যন্ত পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা না হয় এখানেই ততদিন পর্যন্ত মাটির চুলায় রান্না করবো, অবস্থান করবো এবং দাবী আদায় করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। তিনি তার বক্তব্যে বিগত দিনের বিভিন্ন কর্মসূচির প্রেক্ষাপট বর্ননা করে বলেন যে, আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষ অবহেলিত, পুনঃপুনঃ সংগ্রাম ও আন্দোলন করেও গ্যাস পাচ্ছি না। এমকি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও এক্ষেত্রে নির্বিকার, অবিলম্বে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস না পেলে ভোক্তভুগীরা বিল পরিশোধে বাধ্য থাকবে না। সোজা কথা “গ্যাস দিন বিল নিন- গ্যাস নাই বিল নাই।” তিনি উপস্থিত ভুক্তভুগী মা-বোনদের প্রতি সমবেদনা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আগামী দিনের সংগ্রাম ও আন্দোলনে অংশগ্রহনের আহ্বান জানান।
“আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী” সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম, এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিন মন্টু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোরশেদ, সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ বদরুল হক, সিপিবি নেতা বিমল কান্তি দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা অলি উদ্দিন ভূইয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নেত্রী রাশিদা বেগম, আলহাজ্ব আঃ মান্নান পটু, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পপি রানী সরকারসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় জনগন।