নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
নির্বাচনে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে দুই প্রার্থী নিজেদের মাঝে আলোচনা করে গোগনগর ইউনিয়নে সংসদ সদস্য ও দুই প্রার্থী তিন ভাইয়ের মত এলাকার উন্নয়ন করার আশা প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
তিনি বলেছেন, স্থানীয় নির্বাচন এলে সংসদ সদস্যদের মুখে স্কস্টেপ লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাই নির্বাচন নিয়ে কোন কথা বলা উচিত নয়। আমি নির্বাচনে কোন প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে কিছু বলবো না। শুধু এই টুকুই বলবো নির্বাচন নিয়ে যাতে এলাকায় কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। এলাকার যুব সমাজ ও মুরুব্বিরা যেন বিভক্ত না হয়ে যায়। এলাকায় যেন সংঘর্ষপূর্ন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। সবাই যেন শান্তিপূর্ন পরিবেশ বজায় রাখে। গোগনগর ইউনিয়ন থেকে দুইজন প্রার্থী হয়েছেন। উনারা নিজেরা চাইলে একত্রে বসে আলোচনা করলে আজকে সন্ধ্যার আগেই নির্বাচন শেষ যেতে পারে। আর যদি উনারা নির্বাচন করতে চান তাহলে আমার কোন আপত্তি নাই। গোপন ব্যালটে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হতে হবে। যিনিই নির্বাচিত হবেন তিনিই সংসদ সদস্যের সাথে কাজ করবেন। তবে নির্বাচনে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচিত হতে চান বা হয়ে যান তাহলে এই এলাকার উন্নয়নে আমার কোন চেয়ারম্যান লাগবে না। আমি সংসদ সদস্য একাই এই এলাকার উন্নয়ন করবো আর এলাকার প্রতিটি সাধারণ মানুষই হবেন আমার এক একজন চেয়ারম্যান। আর যদি উনারা ইচ্ছা করে যে উনারা দুই ভাই মিলে আলোচনায় বসে মনে করেন নির্বাচনে অপব্যয় না করে এলাকার উন্নয়ন করবেন তাহলে আমি ঘোষণা দিচ্ছি আমরা তিন ভাই ছিলাম নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান, ও শামীম ওসমান। এই গোগনগরেও আমি সেলিম ওসমান, নওশেদ হোসেন ও জসিম উদ্দিন মিলে তিন ভাই মিলে এলাকার উন্নয়ন করবো।
বৃহস্পতিবার ৩১ মার্চ সকাল ১১টায় সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের পুরান সৈয়দ বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগীতার পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় মঞ্চে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের দুই পাশেই বসা ছিলেন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিন এবং মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া নওশেদ আলী। যিনি বর্তমানে গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নির্মানাধীন বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন বহুতল ভবনের নির্মানের কাজের জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যদের হাতে ১০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। এখন পর্যন্ত স্কুলটির জন্য তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করলেন।
নির্মানাধীন নতুন ভবনটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেলিম ওসমান বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকার ৭টি ইউনিয়নের ৭টি নতুন স্কুল বানাচ্ছি। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজ সব থেকে বেশি দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। চেয়ারম্যান নওশেদ হোসেন দায়িত্ব নিয়ে স্কুলের নির্মানকাজ তদারকি করে যাচ্ছেন। আর স্কুল গুলো নির্মানের পরামর্শটাও চেয়ারম্যান নওশেদ হোসেনই আমাকে দিয়ে ছিলেন। উনি আমাকে বলে ছিলেন, ভাই আমি সব করতে পারি। কঠোর পরিশ্রম করে অনেক টাকা রোজগার করতে পারবো। কিন্তু আমি লেখাপড়া করার সুযোগ পাই না। আপনি আপনার নির্বাচনী এলাকার ইউনিয়ন গুলোতে ১টি করে স্কুল বানিয়ে দেন। যেখানে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সন্তানেরা পড়ালেখা করার সুযোগ পাবে। এই বঙ্গবন্ধু স্কুল দিয়েই আমি স্কুল গুলোর নির্মান কাজ শুরু করি। নওশেদ সারাদিন আমাকে টেলিফোন করে ভাই এই রাস্তাটা করতে হবে, ওই রাস্তা দিয়ে মানুষ চলতে পারে না সংস্কার করতে হবে। আমাকে দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্কুলের সামনের রাস্তার জন্য ৫ লাখ টাকার ডিও করিয়েছে। গতকালও একটি রাস্তার জন্য ৫০ লাখ টাকার ডিও করিয়েছেন। প্রথম যখন বঙ্গবন্ধু স্কুলে এসে ছিলাম স্কুলের বাচ্চারা অভিযোগ করে ছিলো তারা স্কুলে এসে পানি খেতে পারে না। আমি নওশেদ চেয়ারম্যানকে মাত্র ১ মাসের জন্য দিয়ে ছিলাম বাচ্চারা এখন আর খাবার পানির অভিযোগ করে না।
তিনি বলেন আমি নির্বাচনে কারো পক্ষ নিতে পারবো না। তবে আমি বলবো আমি যাদের নিয়ে কাজ করেছি তাদের নিয়ে কাজ করে যেতে পারলে এলাকার উন্নয়ন হবেই। ক্ষমতাটাই বড় কথা নয় এলাকার উন্নয়নটাই বড় কথা। আমি অতীত নিয়ে ভাবি না, বর্তমান নিয়েও ভাবি না আমি কাজ করি ভবিষ্যতের জন্য। আমি কোন দল দেখি না। আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। আমি যেখানেই যাই সেখানে সকল দলের নেতারা থাকেন। গত ২১ বছর মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা বলতে পারেন নাই। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করেছেন। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য সহযোগীতা চেয়েছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধা সহকর্মীরাও আমাকে সহযোগীতা করছেন। আজকে এই এলাকার সকল মুক্তিযোদ্ধারা অনুষ্ঠানের মঞ্চে এবং অনুষ্ঠান স্থলে এসে উপস্থিত হয়েছেন। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে এই এলাকার উন্নয়ন করবো প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী গোগনগরে প্রতিটি বাড়িতে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ বাস্তবায়ন করবো। যাতে করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। ততদিন পর্যন্ত আমরা সবাই জীবিত থাকবো এই কথা চিন্তা করাও আমাদের ভুল হবে তাই আমাদেরকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কাজ করতে হবে।
নির্বাচনে প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোন প্রার্থী অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে পত্রিকার মাধ্যমে অপপ্রচার করাবেন না। আর সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি কোন পত্রিকা অপপ্রচার করে তাহলে আপনারা সেই পত্রিকা পড়বেন না।
সব শেষে তিনি আবারও সকলের প্রতি অনুরোধ রেখে বলেন, নির্বাচন নিয়ে এলাকায় যেন কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, মারামারি সৃষ্টি না হয়। এলাকায় যেন শান্তি বজায় থাকে। যুব সমাজ যেন নিজেদের কারো কাছে বিলিয়ে না দেয়।
স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আলী আকবর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আজহারুল ইসলাম, গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওশেদ আলী, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিন, জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার সালাউদ্দিন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহম্মেদ, মুক্তিযুদ্ধা নাজির হোসেন, সামিউল্লাহ মিলন, স্কুলের অভিভাবক সদস্য কবিরুল ইসলাম প্রমুখ।
শিক্ষার্থীদের সাথে বৃষ্টিতে ভিজে সেলফি বন্দী অতপর রাস্তায় এককাপ গরম চা
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের পুরান সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগীতার পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে হয়ে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সাথে সাথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির পানি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে যে যার মত স্কুলের বারান্দা, কেউ অফিস কক্ষ কেউ অডিটরিয়াম কেউ বা আবার শিক্ষক মিলনায়তনে গিয়ে অবস্থান নেন। আর সংসদ সদস্য তার গাড়িতে চড়ে স্কুল ত্যাগ করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। স্কুলের মাঝ মাঠে আসা মাত্রই তিনি দেখতে পান স্কুলের বৃষ্টি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বারান্দায় গাদাগাদি করে জড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে ছাত্র-ছাত্রীরা। তখন ঘড়িতে দুপুর সোয়া ১২টায়।
সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান তার গাড়িটি স্কুলেও ওই ভবনের কাছে নিয়ে গাড়ির জানালা খুলে হাত ইশারায় শিক্ষার্থীদের ডাকেন। সবার মধ্য থেকে একজন ছাত্রী এগিয়ে আসলে সংসদ সদস্য ওই ছাত্রীকে বলেন তোমরা এই ভাবে গাদাগাদি করে দাড়িয়ে আছো কেন? আমরা যখন ছোট ছিলাম যখন স্কুলে পড়তাম তখন বৃষ্টি নামলেই ভিজতাম।
সংসদ সদস্যকে ওই ছাত্রীর সাথে কথা বলতে দেখে ততক্ষনে আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রÑছাত্রী তার গাড়ির কাছে এসে হাজির হয়। তখনই সবাই মিলে সংসদ সদস্যকে উত্তর দেন তাহলে আসেন আজকে সবাই মিলে বৃষ্টিতে ভিজবো। যদি আপনি আমাদের সাথে ভিজেন তাহলে আমরাও ভিজবো। তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান তার গাড়ির থেকে বের হয়ে স্কুলের মাঠে দাড়িয়ে যান।
শিক্ষার্থীদের অনুরোধে সংসদ সদস্য গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজছে আর স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভিজবে না তা কি আর হয়। সাথে বারান্দা থেকে এক ঝাঁক ছাত্র-ছাত্রী সংসদ সদস্যের সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে নেমে পড়েন। একজন সংসদ সদস্যের সাথে বৃষ্টি ভেজার আনন্দটাকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে বৃষ্টির মধ্যে তারা সেলফি বন্দি হোন। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীদের সাথে সেলফি বন্দী হয়ে বিদায় নেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
স্কুল থেকে বেরিয়ে নারায়ণগঞ্জ-মুক্তারপুর-মুন্সিগঞ্জ সড়কে উঠে চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা দেখে হয়তো বা মনে হলো বৃষ্টিতে ভেজার পর এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ। পেছনে গিয়ে সেই চায়ের দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে দোকান থেকে চা পান করলেন। রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে সংসদ সদস্যকে চা খেতে দেখে অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল।
এর আগে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে দুইজন ছাত্র ও দুই জন ছাত্রীকে ডেকে মঞ্চে তুলে আনেন। তারপর তাদের মুখ থেকে স্কুলে পড়া লেখা করতে গিয়ে তাদের সমস্যা এবং প্রয়োজন সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলের সামনের চলাচলের রাস্তা সংস্কার, স্কুলে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সুবিধার জন্য নতুন ভবনে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, প্রতিটি ক্লাসে কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম, স্কুলের ভেতরে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন, স্কুলের মাঠটিকে খেলাধূলার উপযোগী করা, সহ নির্মানাধীন নতুন ভবনটি ৬তলায় উন্নীত করনের দাবি রাখেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম ওসমান ঘোষণা দেন, নির্মানাধীন নতুন ভবনের ৩ তলা সম্পন্ন হতে কিছু আনুসাঙ্গিক কাজ বাকি রয়েছে। সেই কাজ গুলো সম্পূন্ন হতে যে সময় লাগবে ওই সময়ে একসাথে চতুর্থ তলার নির্মান কাজ ধরতে বলেন। পাশাপাশি তিনি স্কুলের মাঠটিকে খেলাধূলার উপযোগী করা সহ, প্রতিটি শ্রেনী কক্ষ সহ পুরো স্কুলকে সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, প্রত্যেক শ্রেনীকে মাল্টিমিডিয়ার ক্লাস রুম, অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, উন্নত মানের লাইব্রেরি করার ঘোষণা দেন।
তিনি আরও বলেন, সারা বাংলাদেশে একমাত্র এই স্কুলটি সরাসরি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুমোদন দিয়ে ছিলেন এবং উনি জীবিত থাকা অবস্থায় এই স্কুলটি উদ্বোধন হয়েছে। তাই এই স্কুলটির প্রতি অবশ্যই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন করবো।