বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
বসন্ত বরণের পহেলা ফাল্গুনের দিনটিকে নারায়ণগঞ্জ কলেজের প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে স্মরণীয় করে রাখলেন কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। নারায়ণগঞ্জে প্রথমবারের মত কোন কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠান কলেজের ভেতরের গন্ডি পার করে নিয়ে এসেছে বিশাল ময়দান শামসুজ্জোহা স্টেডিয়ামে। বিশাল মাঠ, সাজসজ্জা, লাকী কুপনের পুরস্কার, প্রশ্নত্তোর পর্ব, এবং জনপ্রিয় ব্যান্ড দল সোলস্ এর মত মাতানো গানে পুরো দিনটি হাসি, আনন্দ, নাচগানের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছে কলেজের শিক্ষার্থীরা। নেচেছেন কলেজের অধ্যক্ষ কাজ চাঁদ সুলতানা সহ কলেজের অন্যান্য শিক্ষিকারা। সবকিছুর সমন্বয়ে কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠান রীতিমত স্মরণীয় হয়ে থাকার মত উৎসবে পরিণত হয়েছে।
রোববার ১৩ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরের জামতলা এলাকায় অবস্থিত শামসুজ্জোহা স্টেডিয়ামে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উইজডম অ্যাটায়ার্স লিমিটেড এর সার্বিক অর্থায়নে কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের প্রথম ধাপে কোরআন তেলোয়াত, গীতা পাঠ, ও জাতীয় সংঙ্গীতের মধ্য শুরু হয়। পরে কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে দলীয়, সংঙ্গীত, নৃত্য পরিবেশনা, সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে দুপুর পর্যন্ত। দুপুরে খাবারের পর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠান। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওই সময় পুলিশ, রোভারস্কাউট ও সেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে কলেজের শিক্ষার্থী বাদে বহিরাগত কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় পর্বের সোলস্ এর সংঙ্গীতানুষ্ঠানের সময় প্রবেশের প্রধান ফটক সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ কলেজের এ নবীনবরণ অনুষ্ঠান গত কয়েকদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জে সর্বস্তরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে ছিল। প্রথম দুই একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ভুল সংবাদ প্রকাশের কারনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ সর্বত্র আলোচনায় ছিল নারায়ণগঞ্জ কলেজের নবীনবরণে গান গাইতে আসছেন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা তাহসান। পরে আরেকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল তাদের প্রকাশিত সংবাদে তাহসান আসছে না নিশ্চিত করেন সেই সাথে সঙ্গীত তারকা হিসেবে কার আগমন ঘটতে যাচ্ছে সেটি সেলিম ওসমান চমক দিবেন বলে জানানো হয়।
দুপুরের পরে অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে উপস্থিত হোন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সেলিম ওসমান। অনুষ্ঠান স্থলে পৌছেই তিনি একের পর এক চমক দিতে থাকেন কলেজের শিক্ষার্থীদের। প্রথমেই তিনি মঞ্চে উঠে সংঙ্গীত শিল্পী হিসেবে কে অতিথি হয়ে আসছে সেই চমকটি শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত করা হবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা একত্রে আওয়াজ তুলেন। এরপর তিনি মঞ্চে থাকা ৩টি বেজ গিটারের মধ্য থেকে ১টি নিজের গলায় ঝুলিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলেন আমিই হচ্ছি আজকের সেই চমক। আমি নিজেই গান গাইবো। এ সময় সকল শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। তখন তিনি ঘোষণা দেন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশ করবেন জনপ্রিয় ব্যান্ডদল সোল্স এর পার্থ বড়–য়া।
এরপর তিনি মঞ্চে উঠে শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে আয়োজন করেন প্রশ্নত্তোর প্রতিযোগীতার। মোট ৩টি প্রশ্নের জন্য নবীন ও প্রবীন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে ৪ ধাপে মোট ১২জনকে মঞ্চে তুলে নিয়ে আসেন। এরপর এক এক করে প্রশ্ন উপস্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ৩টি ছিল নারায়ণগঞ্জের কোন ব্যক্তি ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদক পেয়ে ছিলেন। ৪জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম প্রশ্নের সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারেনি। যার শিক্ষর্থীদের মধ্য ২জন তাদের উত্তরে নাগিনা জোহার নাম উল্লেখ করেন। কিন্তু সঠিক উত্তরটি ছিল সাংসদ সেলিম ওসমানের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী। ২০১১ সালের ২০মার্চ তৎকালীণন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খান সাহেব ওসমান আলীকে ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদক প্রদান করেন।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল নারায়ণগঞ্জের কোন ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মরনোত্তর স্বাধীনতা পদক লাভ করেন, ৪জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে ১জন সঠিক উত্তর দিয়ে বলেন এ.কে.এম শামসুজ্জোহা। সাথে সাথে তিনি ওই শিক্ষার্থীকে একটি ল্যাপটব উপহার দেন।
তৃতীয় প্রশ্নটি ছিল খুবই সহজ। তৃতীয় প্রশ্নে বাংলায় ক্রমানুসারে ১২ মাসের নাম এবং ৬টি ঋতুর নাম বলতে বলা হয়। তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আরো একটি ল্যাপটব উপহার হিসেবে গ্রহণ করে অপর একজন শিক্ষার্থী।
প্রশ্নত্তোর পর্বের পরে উঠেন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা পার্থ বড়–য়া। পার্থ বড়–য়া ৩টি বাংলা এবং ৩টি ইংরেজী গান গেয়ে আসর মাতিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করেন। পার্থর কণ্ঠে কেন এই নিস্ব:ঙ্গতা গানে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে নেমেছেন কলেজের অধ্যক্ষ সহ অন্যান্য শিক্ষিকারা। গান চলাকালে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান শিক্ষার্থীদের মাঝে চলে যান। পার্থ বড়–য়ার গান আর শিক্ষার্থীদের উন্মাদ নাচে সাথে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে কাছে পেয়ে অতিমাত্রায় আনন্দিত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এ সময় হাজার হাজার শিক্ষার্থী সেলিম ওসমানের সাথে সেলফি বন্দী হয়।
এর আগে সেলিম ওসমান মঞ্চে কলেজের নবীন ও প্রবীন শিক্ষার্থীর কাছ কলেজে বিরাজমান সমস্যা ও দাবী দাওয়া শুনতে চান। শিক্ষার্থীদের করা বিভিন্ন দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম ওসমান বলেন আমাদেরকে ১৬ মাসের সময় দিতে হবে। আগামী ১৬ মাসের মধ্যে কলেজে নতুন ভবন, আসন স্বল্প, কমনরুম, সাইন্সল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, আধুনিক লাইব্রেরী সহ সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে কলেজে নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। সরকারী অর্থায়ন এবং কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। যা শেষ হতে আগামী ১৬ মাস সময় রাখবে। এই সময়টুকু আমাদেরকে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পর্বে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের কুপনের মাধ্যমে র্যাফেল ড্র এর আয়োজন করা হয়। র্যাফেল ড্রয়ে মোট ১২টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। মোট ১২টি পুরস্কারকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হিসেবে ৩টি করে মোট ৪ ভাগে ভাগ করে প্রদান করা হয়। প্রতিটি পুরস্কারই ছিল অপপো কোম্পানির আকর্ষনীয় মোবাইল সেট। যে গুলো সর্বনি¤œ সাড়ে ১১ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের বলে জানা গেছে।
নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আরো উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি চন্দন শীল,নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহম্মেদ টিটু, বিকেএমইএ সহ সভাপতি(অর্থ) জিএম ফারুক,পরিচালক হুমায়ন কবির খান শিল্পী, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ফারুক বিন ইউসুফ পাপ্পু, প্রফেসর শিরীন বেগম, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না, নারায়ণগঞ্জ কলেজের পরিচলনা পর্ষদের নেতৃবৃন্দদের মধ্যে এমএ হাতেম, মোস্তফা কামাল, আরিফ মিহির, কলেজের উপাধক্ষ্য ফজলুল হক রুমন রেজা প্রমুখ।