বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
গুলশানে হলি আর্টিজম রেস্টুরেন্ট বেকারীতে হামলার সাথে জড়িত জঙ্গি গোষ্ঠির সাথে নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টস গুলো অসন্তোষ সৃষ্টির পেছনে ইন্দন দাতাতের যোগসাজস রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিকেএমইএ এর সভাপতি সেলিম ওসমান। তিনি বলেছেন, গুলশানে জঙ্গি হামলায় যে বিদেশীদের হত্যা করা হয়েছে তারা ছিল মূলত গার্মেন্টসের বায়ার। আরএমজি সেক্টর দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে। বাংলাদেশ নীটওয়্যার পন্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। আরএমজি সেক্টরকে ধ্বংস করে দিতেই ইটালিয়ান বায়ারদের হত্যা করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করতে জাপানিদের হত্যা করা হয়েছে। আমি দীর্ঘ বছর যাবত ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে জড়িত। আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি, যখনই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয় তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখতে গার্মেন্টস সেক্টরে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। সেই সময় কিছু লেজুর ভিত্তিক উদীয়মান শ্রমিক নেতা গার্মেন্টের অবুঝ, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে শহরে অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। যদি শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করতে হয় তাহলে তারা ওই কারখানার ভেতরে অবস্থান করেই কাজ বন্ধ করতে পারেন। তাহলে কেন তাদের রাস্তায় নামিয়ে আনা হয় কেন তাদের শহীদ মিনারে সভা করতে হবে? নারায়ণগঞ্জ শহরে এতো সমস্যার পরও কেন তাদেরকে শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে হবে। এ বিষয়ে তাদেরকে প্রশ্ন করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আমরা মনে করি যারা গুলশানে কিলিং করেছে তাদেরকে সহযোগীতা করতেই ওই সকল উদীয়মান শ্রমিক নেতারা উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টা করছে। আমি তাদেরকে আলোচনায় বসায় আহবান রাখলেও তারা কোন প্রকার সহযোগীতা করছেন না। আমি শেষ বারের মত তাদেরকে আলোচনায় বসার আহবান জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার বিকেএমইএ কার্যালয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। যদি উনারা সেচ্ছায় আলোচনায় বসতে না চান তাহলে গোয়েন্দার মাধ্যমে খোঁজ নেওয়া হোক এরা কারা? বহিরাগত কিছু নেতা যাদের গার্মেন্টের সাথে কোন সম্পর্ক নাই যারা আইন না জেনে আইনের কিছু বই পড়ে উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে এটা কোন উদ্যোক্তাকে ক্ষতি গ্রস্থ করা নয় এটা পুরো জাতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করা। শ্রম আইনে বোনাসের কোন আইন নাই। দুটি ঈদে শ্রমিকদের যেটি দেওয়া হয় সেটি হচ্ছে উৎসবা ভাতা। এই ভাতা মালিক শ্রমিকের সুসম্পর্কের উপর নির্ভর করে। কিন্তু এটা বার বার সেই সকল লেজুর ভিত্তিক নেতারা বোনাস বলে নিজেদের মত করে আইন তৈরি করে নিচ্ছে। সামনেই আরেকটি ঈদ আসছে সে সময় যেন এমনটি না করা হয় এ ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি রাখার আহবান রাখেন তিনি।
বুধবার ২০ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নীট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ এর প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে তিনি এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেলিম ওসমান একই সাথে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য।
সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষন ও শ্রমিক নেতাদের সহযোগীতা কামনা করে সেলিম ওসমান বলেন, শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের আমি শ্রদ্ধা করি। যারা নারায়ণগঞ্জে সম্মানের সাথে শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। অন্যান্য জায়গা গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিক অসন্তোষ থাকলেও নারায়ণগঞ্জে কোন শ্রমিক অসন্তোষ নেই। এ ব্যাপারে ওই সকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আমাদেরকে সহযোগীতা করেছেন। তাদের মধ্যে একজনের সাথে আজকেও আমার কথা হয়েছে। আগামী শনিবার থেকে নারায়ণগঞ্জে বন্ধ থাকা কারখানা গুলো চালু করার ব্যাপারে আমি শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সহযোগীতা কামনা করছি। এ ব্যাপারে বিকেএমইএ কার্যালয়ে আলোচনার মাধ্যমে কারখানা গুলো চালু করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।
কারখানার ভেতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী শ্রমিকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আইনে বলা আছে যদি কোন শ্রমিক কারখানার ভেতরে কোন প্রকার দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে তাহলে সে আর সেখানে কাজ করতে পারবে না। এমন হলে আমরা বিষয়টি ইন্টারনেটে মাধ্যমে অশান্তি সৃষ্টিকারী শ্রমিকদের তথ্য সকল উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দিতে পারি। পাশাপাশি যদি কোন উদ্যোক্তা তাদেরকে চাকরি দেন তাহলে আমরা আর ওই সকল প্রতিষ্ঠানকে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য না রাখার উদ্যোগ নিতে পারি। কিন্তু আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে এতোদিন কঠোর কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করিনি। গার্মেন্ট সেক্টরে কিছু দুষ্টু প্রকৃতির শ্রমিক রয়েছে। যারা একটি কারখানায় কয়েক মাস কাজ করে কারখানার ভেতরে একটি অশান্তি সৃষ্টি করে ২০ বা ২৬ ধারা অনুযায়ী মোটা অংকের টাকা নিয়ে অন্য কারখানায় গিয়ে চাকরি নেয়। ইদানিং এই বিষয়টিকে দুষ্টু প্রকৃতির শ্রমিকেরা পেশা হিসেবে নিয়েছে। যা কিনা উদ্যোক্তাদের সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখন থেকে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। যদি কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয় তাহলে আসামী হওয়া ওই শ্রমিকের মামলা চলাকালীন কোন প্রকার টাকা পয়সা প্রদান করা হবে না এবং তারা আর এই পেশায় থাকতে পারবে না। এ ব্যাপারে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, শিল্প পুলিশ সহ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করছি। পাশাপাশি শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের কাছে আমার অনুরোধ দুষ্টু প্রকৃতির শ্রমিকদের ব্যাপারে আপনারা কোন প্রকার তদবির করবেন না।
শ্রমিক ও মালিক পক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যে সকল শ্রমিকেরা কারখানায় তাদের উচ্চপদস্তদের মারধর করেছে এ ব্যাপারে উভয়কেই আলোচনা সাপেক্ষে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আমাদের কাছে কিছু তথ্য এসেছে মালিকপক্ষ বহিরাগতদের দিয়ে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেছে। এ ঘটনায় উদ্যোক্তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। শ্রমিক এবং মালিক উভয় পক্ষই বহিরাগতদের ব্যবহার করতে পারবে না। এটা সম্পূর্ন ভাবে বন্ধ করতে হবে। শ্রমিকদের স্বার্থে যা করনীয় তার সবই করছে বিকেএমইএ। শ্রম আইনের জন্য নারায়ণগঞ্জে শ্রম দপ্তর রয়েছে, শিল্প পুলিশ রয়েছে তাদের জন্য আইন রয়েছে। মালিক এবং শ্রমিক উভয়েই মামলা করতে পারবেন আইনের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত হবে অথবা উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে। কোন অবস্থাতেই বহিরাগতদের অর্ন্তভুক্ত করা যাবে না।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিঞার সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট(এডিএম) সারোয়ার হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দর মহিদ উদ্দিন, তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী, বিকেএমইএ এর সহ সভাপতি(অর্থ) জিএম ফারুক, পরিচালক রাশেদ সারোয়ার, হুমায়ুন কবির খান শিল্পী, নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, বন্দর উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা হোসনে আরা বিনা, নৌ পুলিশের ওসি শাহআলম সহ অন্যান্য উপজেলার সরকারী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।