নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের জহরপুর আলফাতাহ্ দারুল উলুম হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিম খানার দ্বিতীয় তলা ভবনের ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থিত দর্শকের প্রথম সারিতে বসা ছিলো জহিরুল ইসলাম নামের একজন পঙ্গু ব্যক্তি। মঞ্চে উপস্থিত প্রধান অতিথি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। পঙ্গু জহিরুলের দিকে তার চোখ পড়তেই ইশারায় মঞ্চের সামনে জহিরুলকে ডেকে আনেন তিনি। সংসদ সদস্য তাকে প্রশ্ন করেন তুমি কি করো। জবাবে জহিরুল বলেন আমার একটি গাভী আছে আমি ওই গাভী পেলে সংসার চালাই। সংসারে আর কে কে আছে জানতে চাইলেন জহিরুল বলেন তার একটি ছেলে একটি মেয়ে দুইজনেই ছোট লেখা পড়া করে। সব কিছু জেনে সংসদ সদস্য তাকে চেয়ারে গিয়ে বসতে বলেন।
আলোচনা সভায় উপস্থিত অতিথিদের বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে ডায়েসের সামনে উপস্থিত হোন সেলিম ওসমান। প্রথমেই তিনি জহিরুল ইসলামকে একজন বীর পুরুষ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন। আমি গরীর মানুষের কষ্ট বুঝি। আমি তাদের চোখের ভাষা বুঝতে পারি তাদের কষ্ট বুঝতে পারি। তখন জহিরুলের দিকে আঙ্গুলের ইশারা দিয়ে বলেন, এই ছেলেটিকে আমি দেখে তার কাছে জানতে চেয়ে ছিলাম সে কি করে কিভাবে সে পঙ্গু হয়েছে। সে আমাকে উত্তর দিয়েছে তার একটি গাভী আছে সে গাভী পালন করে। কথা গুলো সে এতটা গর্বের সাথে বলেছে যে আমার মনে হয়েছে জহিরুলই সত্যিকারে বীর পুরুষ। ছোট বেলা টায়ফয়েড জ্বরে পা হারিয়েও জহিরুল থেমে থাকেনি। একটি পা নিয়ে সে গাভী পালন করে দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। সে একজন সফল কৃষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আমিও একজন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি জহিরুলও একদিন সফল কৃষক হবে।
সাথে সাথে তিনি জহিরুলকে প্রতিদিন ১০ লিটার দুধ দেয় এমন একটি গাভী গরুর দেওয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তিনি বলনে আপনারা দেখবেন এই জহিরুল একদিন লাঙ্গলবন্দে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। আজকে তার নিজের একটি গাভী গরু, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাছে ১০টি গরু থাকবে।
রোববার ৮ মে সকাল ১০টায় বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের বার পাড়া এলাকায় জহরপুর আলফাতাহ্ দারুল উলুম হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিম খানার দ্বিতীয় তলা ভবনের ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন।
এছাড়াও তিনি জহরপুর মাদ্রাসার ছাত্র আবু সাঈদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই ছোট্ট ছেলেটির আহবানে আমি মাদ্রাসার উন্নয়নের ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে ছিলাম। যার ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধন হয়েছে। এই ছেলেটির জন্যই এই মাদ্রাসার জন্য আরও ১০ লাখ টাকার অনুদান দিবো। উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ দেওয়া যেন ঠিক ভাবে ব্যবহার হয়।
অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চ স্থল ত্যাগ করার সময় লাঙ্গলবন্দ মালিবাগ এলাকার বৃদ্ধ নূর মোহাম্মদ তার অসুস্থ পঙ্গু স্ত্রীর জন্য একটি হুইল চেয়ার চাইলে এমপি সেলিম ওসমান তাকে হুইল চেয়ার কিনে পাঠিয়ে দেন।
প্রসঙ্গত ২০১৫ সালে ৩০ এপ্রিল প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীর দোয়া অনুষ্ঠানে মাদ্রাসা ছাত্র আবু সাঈদের মুখ থেকে দোয়া শুনে সেলিম ওসমান তার কাছে জানতে চেয়ে ছিলেন সাঈদ তার কাছে কিছু চায় কিনা। তখন সাঈদ সংসদ সদস্যের কাছে তাদের মাদ্রাসাটি দ্বিতীয় তলা করে দেওয়ার দাবি জানান। আবু সাঈদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য মাদ্রাসাটি ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পর্যবেক্ষন করান। পরবতীর্তে ২৭ ডিসেম্বর পুনরায় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শীতবস্ত্র বিতরন অনুষ্ঠানে পুণরায় আবু সাঈদের দোয়া শুনে তাকে নিজের সাথে হজ্জে নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং মাদ্রাসার উন্নয়নে ১০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। ঘোষণার তৃতীয় দিনের মাথায় ৩০ ডিসেম্বর মাদ্রাসার জন্য তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকার আবু সাঈদের হাতে তুলে দেন। ওই দিন সেলিম ওসমান দুইজন অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার জন্য প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে এবং ৩ জন পঙ্গু ব্যক্তিকে একটি করে হুইল চেয়ার এবং কর্মসংস্থানের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।