বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড সুনীল রায়ের ২১ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সিপিবি’সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন ও গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮ টায় নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর শ্মশানে তাঁর স্মৃতিসৌধে এ শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের কমিউনিটি পার্টি ‘সিপিবি’ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড হাফিজুল ইসলাম, বক্তব্য রাখেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, এড. মন্টু ঘোষ, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকি মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা, সিপিবি জেলা কমিটির সদস্য দুলাল সাহা, প্রগতি লেখক সংঘ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাস, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি জেলার আব্বায়ক মনিরুজ্জামান চন্দন, সিপিবি ঢাকা-সুত্রাপুর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বী খান প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কমরেড সুনীল রায় ১৯২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার শ্যামগ্রামে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মাধ্যমিক স্কুলে পড়া অবস্থায় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে এসে চিত্তরঞ্জন কটন মিলের শ্রমিক হন। ওই সময় এ অঞ্চলে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয় নিয়ে আন্দোলনে চলছিল। সেই আন্দোলনে যুগ দিয়ে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা হয়ে উঠেন। ১৯৪২ সালে চিত্তরঞ্জন কটন মিলের শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমেই কমিউনিস্ট পার্টির সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়। কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শ-উদ্দেশ্য তাঁর ভালো লাগে যার ফলে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। কমিউনিস্ট পার্টির কাজ করতে যেয়ে তিনি বহুবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন, জেল কেটেছেন, আত্মগোপনে থেকেছেন। এ কারণে তিনি বিয়ে বা ঘর-সংসার করতে পারেননি চিরকুমার ছিলেন।
কমরেড সুনীল রায় পাকিস্তান আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ-গোদনাইল ও আদমজী শিল্পাঞ্চলে সকলের প্রিয় একজন শ্রমিক নেতা ছিলেন। এ অঞ্চলের কমিউনিস্ট পার্টিরও নেতা ছিলেন। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি অন্যতম সংগঠক হিসেবে এ অঞ্চলের শত শত যুবককে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। সুনীল রায় কৈশোরে যে লড়াই শুরু করেছিলেন তা ২০০১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সংগ্রামী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু তাঁর আদর্শ ও সংগ্রাম আজও জীবন্ত। তিনি এদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে এক উদাহরন। সততা-আদর্শ ও ত্যাগের মূর্তমান প্রতিক। সারাজীবন শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করে গেছেন। তিনি শ্রমিক শ্রেণীর সেই লড়াই-সংগ্রামের মধ্যেই অমর হয়ে থাকবেন। শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর স্বপ্ন ও জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের বর্তমান সংকটকালে আমাদের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হবে।
কমরেড সুনীল রায়ের ২১ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি, বাংলাদেশর ওয়ার্কার্স পার্টি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকি মঞ্চ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, খেলাঘর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, প্রগতি লেখক সংঘ, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সংগঠন সমূহ ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।