বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
অবশেষে জেলা প্রশাসকের মধ্যস্থতায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেল নারায়ণগঞ্জ মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। শর্ত সাপেক্ষে মেনে নেয়া হয়েছে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের দাবী। এখন তাদেরকে পছন্দ অনুযায়ী বিষয়ে দ্বিতীয়বারের মত দিতে হবে পরীক্ষা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় সার্কিট হাউজে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরদের সাথে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন জেলা প্রশাসক মো: রাব্বী মিয়া।
জানাগেছে, মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষায় তিন বিভাগ থেকে ৫৩১ জন শিক্ষার্থী দশম শ্রেণীর নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে ১৭৮ পরীক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়। তন্মধ্যে মধ্যে ১ বিষয়ে ১১৯ জন, ২ বিষয়ে ৯৫ জন, ৩ থেকে ৪ বিষয়ে ৩২ জন, ৫ থেকে ৬ বিষয়ে ৬ জনসহ বাকীরা ৭ বিষয়ে অকৃতকার্য হয় পরীক্ষার্থীরা।
এরপর অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা কৃতকার্যের দাবী স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আনোয়ার হোসেনের কাছে ধর্না দিলেও উল্টো ধমক খেয়ে উত্তেজিত হয়ে যায়।
পরবর্তীতে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দেয়ার দাবীতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।
আর এসএসসি পরীক্ষায় সুযোগ দেয়ার জন্য গত কয়েকদিন ধরেই শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা আন্দোলনও চালিয়ে আসছিল। কয়েকজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে না। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের দাবী, আমাদেরকে ইচ্ছা করেই ফেল করানো হয়েছে। কারণ এর আগে অনুষ্ঠিত সকল পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হয়ে আসছি।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসক স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরদের নিয়ে বৈঠকে বসে সকলের কথা শুনেন।
স্কুলের শিক্ষার্থী সিমলার অভিভাবক সাবেক ফুটবলার আজমত উল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের আরো একটি সুযোগ দেয়া হোক। তাদের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েন না। আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করলে তারা অবশ্যই ভাল রেজাল্ট করবে।
তানজিল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের পরীক্ষাগুলো অনেক কঠিন করে নেয়া হয়েছে। সুতরাং আমাদেরকে আর একবার সুযোগ দেয়া হোক।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আহসান হাবিব বলেন,মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অনেক ঐতিহ্য রয়েছে। এই স্কুল শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের এই স্কুল থেকে সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী পড়ালেখা করে গেছেন। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না যাতে এই স্কুলের ঐতিহ্য নষ্ট হয়। শিক্ষার্থীরা আমার মেয়ের মত।
এসব দাবীর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া সিন্ধান্ত দেন, যারা ২ বিষয়ে ফেল করেছে তাদেরকে এমনিতেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া যাবে। যারা ৩ বিষয়ে ফেল তারা নিজের পছন্দমত ১ বিষয়, যারা ৪ বিষয়ে তারা নিজের পছন্দমত ২ বিষয়, ৫ ও ৬ বিষয়ে ফেল তাদেরকে নিজের পছন্দমত ৩ টি বিষয়ে পরীক্ষ দিতে হবে। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এই পরীক্ষা নেয়া হবে। কাউকে কোন লেট ফি দিতে হবে না। এছাড়া যদি কোন অভিভাবক আর্থিকভাবে সমস্যায় পড়েন তাহলে আমাকে বলবেন আমি বিষয়টি দেখবো।
এর আগে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া বলেন, তোমাদেরকে সবসময় ৩ টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হলো-শতভাগ সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে, পিতা-মাতাদের শ্রদ্ধার পাশাপাশি সেবা করতে করতে ও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, অশৃংখলতা কখনো সফলতা দেয় না। তোমাদের আচার-আচরণ দেখে যেন কারো বিরূপ ধারণা সৃষ্টি না হয়। পড়াশোনা না করেও অনেকে বিখ্যাত হয়েছে। ভদ্র হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসিম উদ্দিন হায়দার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আব্দুল হামিদ মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শরফুদ্দিন, র্যাবের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ।