বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
ফিরে যাবো সেই একাত্তুরে; নয় মাস যুদ্ধের পর যাদের জন্য পেয়েছি স্বাধীন বাংলা, যাদের কারণে মুক্তকাশে ডানামেলে উড়ে চলে পাখি তার গন্তব্য স্থানে, তাদের একজনের কাছে। যে এখনও যুদ্ধ করে চলছে বেঁচে থাকার জন্য। আমার সাথে পরিচয় মহল্লার এক চায়ের দোকানে, একদিন জোর করে আমাকে চা খাওয়ায়; তারপর থেকে অনেক কথা, তার ফাঁকে একদিন কোন এক কথা প্রসংঙ্গে বলে বসলো…! সে একজন মুক্তিযুদ্ধা; দেশ স্বাধীন করার জন্যে সেও অংশ নিয়েছিল। সেদিন ছিল তিনি একজন তাগড়া জোয়ান আর শরিরের রক্ত ছিল গরম তাই দেশ রক্ষার জন্য হাতে তুলে নিয়ে ছিল বন্দুক আর গুলি। একথা মনে পড়তেই মনের ভেতরটায় একটা ভালো লাগার পরশ দিয়ে যায়, আর আমি তখনও চেয়েছিলাম তার দাড়িমুচে বড়া মুখটির দিকে; আমার কি যে ভালো লাগছিল হয়তো এ লেখায় বলে বুঝানো যাবে না। সত্যি খুব ভালো লাগছিল তখন আর আমি জোরগলায় বলেছিলাম আপনার সাথে; আমি সারাদিন কথা বলবো অন্য কোন দিন। ওনি হাসছিল তখন। কেন হাসছিল আমি জানি না, কিন্তু বুঝতে পারলাম সে হাসিতে একটা ভালো লাগাছিল আর কিছুটা না পাওয়ার আরজি। তার জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে। নাম মো. সোলেমান কাদির আমি যত দূর জেনেছি সে একজন মুক্তিযুদ্ধা এবং সেটাও তার মুখ থেকে শুনা একাত্তুরে সে অ¯্রু হাতে যুদ্ধ করেছিলেন। প্রথমে তিনি এক নং সেক্টরে ছিলেন যার সদস্য সংখ্যা ছিল সতের জন। এক নং সেক্টর তখন অবস্থান করছিলেন মুরশিদাবাদ সেখানে ছিলেন ষোল দিন। প্রশিঙ্গন শেষে সেখান থেকে চলে আসেন ত্রিপুরা শ্রীরামপুর আজম সদাগরেরর বাড়ি, এখানে একটা মিটিং হয়। সেই মিটিং শেষে চলে আসেন তার নিজ জন্মভূমিতে। এখানে বলে রাখা ভালো এই সতের জনের মাঝে ছয় জনেই কমান্ডার ছিলেন। তারা হলেন মায়া সরকার,ফজলুল আলম চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন ভূইয়াও নরুল ইসলাম এবং ফজলুল ইসলাম। সবাই নারায়ণগঞ্জ জেলার। এখানে এসে গ্রুপ তৈরী করে মিশন শুরু করে দেন। মিশন হল সকল রেল পথ ও রাস্তা পরিদর্শন করা ছিল মূলত তাদের কাজ। তারপর তাদের সাতজনকে কাজ ভাগ করে দেয়া হয়, সেই সাতজনের মধ্যে কমা-ার ফজলুল ইসলাম চৌধুরী। রাস্তা পরিদর্শন করা কালে সুযোগ পেলেই তারা হানাদার বাহিনীর উপর হামলা চালাতেন। তাদের একেক জনের কাছে একেক রকম অ¯্রু ছিল কিন্তু তার হাতে ছিল রাইফেল তাও সেটা অনেক পুরনো।
অনেক রক্তক্ষরণের পর সেদিন ভোর সারে পাঁচটায় একটি আওয়াজ শুনতে পায় জয় বাংলা। তখন শরিরটা কি রকম একটা ভালো লাগার শিহরণ দিয়ে যায় আর আনন্দে চোখে জল চলে তাদের। দেশ স্বাধীন হয় কিন্তু আজও এক জন মুক্তিয়োদ্ধা সাধারণ মানুষের ন্যায় না খেয়ে না পড়ে দিনাতিপাত করে যাচ্ছে। সে বলে মুক্তিযুদ্ধার পরিচয় এখানে হয়তো কিছু কথা আপনাকে বললাম সেই দিনের ভয়াবহতার কথা হয়তো এতদিন বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছি। তবে শেষ কথা হলো আমি একটি পরিচয়পত্র পাই সেটা সার্টিফিকেট কি না জানি না কারণ সেটি যদি মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট-ই হতো তাহলে তো সরকার আমাকে মুক্তিযুদ্ধের বাতা দিতেন; কই কেউতো আমারে সেই সম্মান টুকু দেয়নি। আর সেই মুক্তিযুদ্ধের লিষ্টে আমার নামটুকু আছে কিনা সেটা ও জানা নেই। জানার সেই প্রবনতা ও আমার ছিল না। আর এই শেষ বয়সে এসে ততটা আশাও করি না।
তার কথার পরিপেক্ষিতে আমি বলতে চাই এমন হাজারও মুক্তিযোদ্ধা এখনও আছে যারা এখনও তাদের সেই সম্মান টুকু পাচ্ছে না। সরকারের কাছে আকুল আবেদন সেই সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের খুজে খুজে বের কওে তাদের পাওনা সম্মান টুকু যেন তাদের জীবদ্ধসায় দিতে পারেন…
লেখক,কথাশিল্পী, সম্পাদক রৌদ্রছায়া