জাফর আহমদ, বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
(পূর্বে প্রকাশের পর)
আইভী কি জানতে হলে আইভীর পরিবারকে জানতে হবে। তাঁর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকাকে জানতে হবে। তাঁদের পরিবারের শত বছরের ঐতিহ্যকে জানতে হবে। বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়ার জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র সহ-সভপতি আলী আহাম্মদ চুনকা, যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন আবেদ শাহ্ মোজাদ্দেদী আল্-মাদানী। সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মাওলানা বাকি বিল্লাহ্। আলী আহাম্মদ চুনকার বাস ভবনে তাঁর পারিবারিক মন্ডলে বিরাজ করে এক ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি। আশেকে রসূল ও পীর মাশায়েখের গোলামী করে তিনি লাভ করেছিলেন কাদেরীয়া, চিশ্তিয়া, নক্সবন্দিয়া ও মোজাদ্দেদীয়া তরীকার একজন নিবেদিত প্রাণ খাদেম ছিলেন। ঢাকার নবাব বাড়ির পীর হযরত শাহ্ সৈয়দ নজরুল হাসান নক্সবন্দ্ আবুল উলাই তাঁকে তরীকতের খেলাফত প্রদান করেন এবং তাঁর বাসভাবনে প্রতিষ্ঠা করেন খানকা শরীফ। এই খানকা শরীফে আলোচনা হয়, বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (স.), হযরত আলী (রাঃ), খাতুনে জান্নাত হযরত মা ফাতেমা (রাঃ), হযরত ইমাম হাসান (রাঃ), হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ), হযরত খাজা মাঈনুদ্দিন (র.)-এর পীর ওসমান হারুনী (র.), হযরত আবদুল কাদের জিলানী (র.), হযরত বাহাউদ্দিন নক্সবন্দ্ আবুল উলাই সহ বিভিন্ন আউলিয়াদের নামে খানকা শরীফে প্রতি বৃহস্পতিবার বাদ মাগরেব ফাতেহা শরীফ অনুষ্ঠিত হয় এবং বিভিন্ন আউলিয়াদের ওফাত দিবস যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় পালন করা হয়।
মাটি ও মানুষের নেতা আলী আহাম্মদ চুনকা মহানবী (দঃ)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করতে গিয়ে আজীবন মাটিতে বসেই খাবার খেতেন। হয়তো মাঝে মাঝে টেবিলের উপরে বসে খাবার খেতেন, তবে কোন অনুষ্ঠানপর্ব যেমন- বিয়ে, বৌভাত ইত্যাদি ছাড়া। মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা যখন তাঁর ছায়াসঙ্গী ছিলাম তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন, আব্দুর রাশেদ রাশু, মঞ্জুরুল হক (বিকেএমই-এর সাবেক চেয়ারম্যান), তমিজ উদ্দিন রিজভী, কাশিপুরের হারুন, জল্লার পাড়ার সোহরাব হোসেন, মমতাজ উদ্দিন বাবুল, আসাদুজ্জামান আসাদ (সাবেক পিপি), হাফিজুর রশিদ ফকির, জাহাঙ্গীর আলম, বিন্দু সহ ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগ, শ্রমিক লীগের অনের নেতা কর্মী প্রতিদিন বেলা ১টায় তাঁর সাথে মাটিতে বসে দুপুরের খাবার খেতেন। সেখানে নিয়মিত ভোজ সভায় খাবার নিজ হাতে পরিবেশন করতেন আলী আহাম্মদ চুনকা নিজে। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে সাবেক জাতীয় পরিষদ ও গণ পরিষদের সদস্য এ.কে.এম সামসুজ্জোহা জোহা ভাই, সংসদ সদস্য গোলাম মোর্শেদ ফারুকী, আনসার আলী, অগ্নি সন্তান মনিরুল ইসলাম, ডাঃ সাহেদ আলী, মিজারুন রহমান, খানপুরের আব্দুল লতিফ, রিক্সা শ্রমিক নেতা সম্বল মিয়া থেকে শুরু করে, আওয়ামী পরিবারের এমন কেউ নেই যে, আলী আহাম্মদ চুনকার মাটির ঘরে মাটিতে বসে আহার করেন নি।
তাছাড়াও জাতীয় নেত্রীবৃন্দের মধ্যে বাঙালীর অহংকার বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরন্ত মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা রিবোধী দলীয় নেতা থাকার সময়। বহুবার চুনাকার মাটির ঘরে পদধুলি দিয়েছেন এবং মাটির সানকিতে খাবার খেয়েছেন। এসেছিলেন চুনকা কুটিরের মাটির ঘরে শহীদ আইভী রহমান, সাজেদা চৌধুরী, আব্দুল মালেক উকিল, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহাম্মদ, আমীর হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিম, ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সহ অনেক জাতীয় নেত্রীবৃন্দ দুপুরের খাবার খেতাম। আজকের রেল মন্ত্রী বিশিষ্ট সাংবাদিক দৈনিক বাংলার বানীর তৎকালীন সহ-সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়েদুল কাদের প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার আসতেন চুনকার পর্নকুটিরে। আমরা একসাথে ত্রিশ-চল্লিশ জন মাটিতে বসেই খাবার খেতাম।
আসন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বি.এন.পি প্রার্থী (জামাত শিবির সমর্থিত) এড. শাখাওয়াত হোসেন কোর্ট-টাই পড়ে এক বেলা মাটিতে বসে খাবার খেয়ে মিডিয়াতে ঝড় তুলেছেন। প্রচার চালাচ্ছেন তিনি গরীবের বন্ধু। বিষয়টি যদি আল্লঅকে খুশি করার জন্য হতো। সেটা ভিন্ন কথা। তিনি মিডিয়ায় প্রচার করে ধর্ম থেকে সরে এসেছেন। তার এই কৌশল নির্বাচনী বৈতরনী পাড় হওয়ার জন্য। ইসলামী পরিভাষায় যাকে বলে লোক দেখানো কর্ম (রিয়া)।
এড. শাখাওয়াত হোসেন সম্পর্কে যতটুকু যানাযায় তিনি একজন সৎ মানুষ। আমার জানার বাইরে অনেক ঘটনা থাকতে পারে যা লোক চক্ষুর অন্তরালে। আল্লাহ্ই ভাল বলতে পারবেন। তার মত ভাল মানুষ এই শহরে কয়েক হাজার থাকতেই পারে। এই নগরীর উন্নয়নে তার সামান্যতম অবদান আছে বলে আমাদের জানা নাই। ভাল মানুষ হলেই তাকে ভোট নির্বাচিত করতে হবে এমন কোন কথা নেই। তাহলেতো একজন পীর অথবা মসজিদের মোখলেছ সহি ইমামকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বানিয়ে দিলেই লেঠা চুকে যায়, নির্বাচন করে কি লাভ? স্যুট টাই পরে দু’ একটা বাড়িতে মাটিতে বসে খাবার খাওয়ার ফটোসেসন করলেই জননেতা হওয়া যায় না। গরীব দুখীর সুখ দুখে এগিয়ে আসতে হয়। তাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক ভাবে কাজ করতে হয়। আমাদের এডভোকেট সাহেব তো অর্থ লেন-দেনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের উপকার করেন। উপকার করার পূর্বেই আর্থিক লেনদেন চুকিয়ে নেন। এটা তার পেশা। আমি তার নিন্দা করি না, কারণ রাজনৈতিকদের মধ্যে অনেকেই এই পেশার মধ্যে জড়িত ছিলেন। আমর প্রশ্ন এখানে নয়, আর্থিক স্বচ্ছলতার পর দুঃখি-দরিদ্র জন সাধারণের জন্য তিনি কি অবদান রেখেছেন। সমাজের বা জনগণের জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করেছেন? আইনজীবী নির্বাচন ছাড়া অন্য কোন নির্বাচনে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে বলে আমার জানা নাই। আপনি আইনজীবী আপনার প্রতিপক্ষ একজন চিকিৎসাবিদ। আপনার প্রতিপক্ষ চিকিৎসক হলেও তা পেশা হিসাবে নেন নি। ইচ্ছা করলেই তিনি এই শহরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও। চিকিৎসক হিসাবে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন করতে পারেন। তিনি নির্দিষ্ট জায়গায় বসে চিকিৎসা না করলেও তার কাছে প্রতিদিন অনেক হত দরীদ্র রোগী আসেন। তিনি ব্যবস্থাপত্র দেন টাকার বিনিময়ে নয়। আপনার প্রতিপক্ষের দানের হাত অনেক বড়, যা আপননি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনার দলের অনেক সিনিয়র নেতারা তা জানেন। তার পিতার হাত ধরে অনেকে এই শহরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। আপনার দলের অনেকেই সেই তালিকায় আছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকা এক ফোটা রক্ত বিন্দুও ঝড়ান নি, কোন মানুষের জীবন হরণ করেন নি। কোন অসহায় মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করে এগিয়ে গেছেন বহুবার। (ক্রমশঃ)