স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। রবিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ দাবি করেন ।
ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ৪২ জন নিহত হয়েছে উল্লেখ করে রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় শিশু নিহত হয়েছে। এই লজ্জা কার? পুলিশ ভোট দিচ্ছে। এই লজ্জা কার? নির্বাচন কমিশন তাদের লজ্জার ভূষণ জাদুঘরে জমা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে ‘ভোট ডাকাতির নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে তিনি তা বাতিলের দাবি জানান।
তিনি বলেন, জনগণের ভোটাধিকার, নির্বাচন এখন এদেশে এতিম হয়ে পড়েছে। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দল নয় দেশের সুশিল সমাজও এ নির্বাচন কমিশনকে সরে যেতে বলেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের লজ্জার ভূষণ জাদুঘরে জমা দিয়ে দিয়েছেন। আজ্ঞাবাহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সকল নির্বাচন জনগন ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করেছে। তাই অবিলম্বে ভোট ডাকাতির নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়ে আবারো নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
রিজভী আহমেদ বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি ও তান্ডবে দেশজুড়ে ভয়াবহ আতংক বিরাজ করছে। ১ম ও ২য় দফা নির্বাচনে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে এ পর্যন্তু ৪২ জন। আহত ও পঙ্গু হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ। বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থকদের শত শত বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ২২ মার্চ প্রথম দফায় ৭১২টি এবং ৩১ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ৬৩৯টি ইউপি নির্বাচনে গণহারে কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ভোট ডাকাতি, বিএনপির প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে আওয়ামী সন্ত্রাসী, পুলিশ ও প্রিসাইডিং অফিসাররা মিলে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ক্ষমতাসীনদের বিজয়ী করতে জালভোটের উৎসব করেছে। বিএনপি ও সাধারণ জনগণ ভোট ডাকাতিতে বাধা দিলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে এবং সশস্ত্র অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ১ম দফা নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় পুলিশ, বিজেপি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলি ও হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ২৮ জন। ২য় দফায় নির্বাচনের দিন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে শিশু, ঢাবির ছাত্র ও মহিলাসহ ১১ জন। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে আরো ৩ জন। মাদারীপুর ও যশোরে ২ জন নিহত হয়েছে।
রিজভী বলেন, বিগত দু দফা ইউপি নির্বাচনে প্রথম দফার ৭১২টি ইউপি নির্বাচনে দেশব্যাপি কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির সহিংস তান্ডব লীলা চালানো হয়েছে। ভোটের আগেই পুলিশ, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র মহড়া দিয়ে এলাকায় এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। বিএনপি নেতা-কর্মী এবং নির্বাচনী এজেন্টদের এবং সাধারন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা হুমকি ধামকি দিয়ে বলে ভোট কেন্দ্রে গেলে তাদের লাশ ফেলে দেয়া হবে। অনেক জায়গায় ভোটের আগের রাতেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট কেন্দ্র দখল করে নৌকায় সীল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রাখে। বাকী নির্বাচনী এলাকা গুলোতে ভোটের দিন সকালে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের লোকজন মিলে বিএনপি প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে জালভোটের মহোৎসব করে। বরিশালের বানারিপাড়া, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, আগৈল ঝড়া, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া,ভান্ডারিয়া, জিয়ানগর, চাঁদপুর, কুমিল্লার দেবিদ্বার, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ,ভোলার দৌলতখান,মনপুরা,চরফ্যাশন, বোরহানউদ্দিন, বগুড়ায় দুপচাঁচিয়া, সোনাতলাসহ কয়েকটি উপজেলা, খুলনার বটিয়াঘাটা, বরগুনা সদর ও আমতলি, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা,ময়মনসিংহের ফুলপুর ও সদর, কিশোরগঞ্জ সদর, নরসিংদীর পলাশ, শেরপুর সদর ও নলিতা বাড়ি, লক্ষীপুরের রামগতি ও সদর, ফেনীর বিভিন্ন উপজেলা, মাদারীপুরের শিবচর, পাবনার বেড়া, ফরিদপুর,চট্রগ্রামের রাঙ্গুনিয়া,সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের টেকনাফে, যশোর সদর ও মনিরাম পুরে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, বাঞ্ছারামপুর, নোয়াখালির হাতিয়া সুবর্ণচর, পটুয়াকালির গলাচিপা, কলাপাড়া, বাউপল, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ ও বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জসহ ৭১২টি ইউনিয়নেই পুলিশ, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভোট ডাকাতির তান্ডব লীলা চালায়। তাদের সাথে যোগ দেয় বিজিবি।
প্রথম দফা নির্বাচনের দিন সহিংসতায় এবং বিজিবি, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের গুলিতে প্রাণ হারান ১১জন। এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রথম দফা নির্বাচন ও তার পরবর্তী সহিসংতায় প্রাণ হারিয়েছে প্রার্থীসহ মোট ২৮ জন। এদিকে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনেও দেশজুড়ে সহিংসতা ও কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় দফা ৬৩৯টি ইউপি নির্বাচনেও কেন্দ্র দখল, ব্যালট ও ভোটবাক্স ছিনতাই, জালভোট ও অনিয়ম ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি প্রিসাইডিং অফিসার, পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সিল মারার মহোৎসব করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে কেরানীগঞ্জে ১ শিশু, মাদারীপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীসহ ২জন, যশোরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৩ জন, সন্ধীপে ব্যালট ছিনতাইকালে আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে ৩ জন, মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট না দেয়ায় ১ নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, জামালপুরে মেলান্দহে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছে ১ বিএনপি কর্মী, নাটারের লালপুর ও বাগাতি পাড়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় ১ জন বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দেশজুড়ে।
তিনি অভিযোগ করেন, দু’দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেই সরকারি দলের ভোট ডাকাতি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায়। নির্বাচন কমিশন ইউপি নির্বাচন নিয়ে রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠেছে। তারা ভোট ও ভোটারদের রক্ষক না হয়ে ভক্ষক হয়ে নিজেরাই জাল ভোটের উৎসবে মেতে ওঠেছে। অনেক কেন্দ্রে দেখা গেছে প্রিসাইডিং অফিসাররা ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে দিচ্ছে। অনেক কেন্দ্রে পুলিশকে ভোট দিতে দেখা গেছে। এমন চিত্র মিডিয়ার বদৌলতে জাতি দেখতে পেয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তা, পুলিশ ও আইন-শৃঙখলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভোট তান্ডবে গোটা জাতি হতাশ হয়ে পড়ছে। হতভম্ভ হয়ে পড়েছেন দেশের নাগরিক সমাজ। নৃশংস রক্তপাতের উপর ভিত্তি করে জালিয়াতি ও জোচ্চুরির এমন নির্বাচনে ভোটারবিহীন সরকার ও তাদের আজ্ঞাবহ ইসি কি ন্যুনতম লজ্জা পান না? ভোটের নামে নিষ্ঠুর তামাশা আওয়ামী লীগেরই ঐতিহ্য, তাই তারা লজ্জা পান না। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন লজ্জায় নাকি বিএনপি নির্বাচন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমি বলি যারা মানুষের জীবন নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধি করে, যারা রক্তপাত ঘটিয়ে হোলির উৎসবের ন্যায় খেলা করে, যারা মানুষের লাশের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখতে চায়, তারাতো সহিংস রক্তপাত আর হত্যাকে নিয়ে নিষ্ঠুর রসিকতা করতেই পারে। রাজনৈতিক স্বার্থে মানুষকে আঘাত করে মুখ থুবড়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে লাশ বানিয়ে তাদের খুশির তুফান ছুটে। এরা একদিকে যেমন নিষ্ঠুর রসিক অন্যদিকে মূর্খ দাম্ভিক, দর্পি অবিমৃশ্যকারী।
রিজভী আহমেদ বলেন, ১ম ও ২য় দফায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি বার বার নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে। শাসক দল দেশজুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে। অনেক জায়গায় আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়নি। জোর করে, হামলা করে অস্ত্রের মুখে মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়েছে। এমনকি নির্বাচন কমিশন ঠুনকো অজুহাতে বহু জায়গায় আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছে। এখন চলছে ভোট ডাকাতি, কোথাও কোথাও আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ রয়েছে। ভোটের দিন বিএনপির এজেন্টরা যাতে ভোট কেন্দ্রে না যায় সেজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকির পাশাপাশি গ্রেফতার ও হয়রানি চলছে। ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করে চলে নৌকায় সিল মারার মহোৎসব। সবকিছুই চলে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায়। এই ইসি গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিজয়ী করতেই পূর্বেই মহাপরিকল্পনা করে রেখেছিল। সেই মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কমিশন সবকিছু বাস্তবায়ন করেছে। ইউপি নির্বাচন নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ছত্রছায়ায় সরকারি দলের গুন্ডারা মানুষ হত্যা করে, বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থকদের গুলি করে, হামলা করে,ভোটারদেরবাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে দেশজুড়ে যে পৈশাচিক তান্ডবলীলা চালাচ্ছে এর সবকিছুর জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী।