বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পরকীয়া প্রেমের জের ধরে নিজ শিশু সন্তান হৃদয় (৯) কে পুড়িয়ে হত্যার অভিযুক্ত মূল আসামী শিশু হৃদয়ের মা শেফালী আক্তারের পরকিয়া প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম মোমেনকে গ্রেফতার করেছে আড়াইহাজার থানা পুলিশ।
চাঞ্চল্যকর এই শিশু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক আবুল কাশেম জানান, হত্যাকান্ডের পর মামলার মূল আসামী রাশেদুল ইসলাম মোমেন পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ বিভিন্নস্থনে হানা দেয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ২২ এপ্রিল রবিবার ভোররাতে আড়াইহাজার থানা পুলিশ,নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের যৌথ প্রচেস্টায় ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানা পুলিশের সহযোগিতায় নান্দাইল থানার মেরাকোনা গ্রামে অভিযান চালান পুলিশ। সেখানে রাশেদুল ইসলাম মোমেন এর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মোসলেম উদ্দিন ফকিরের ঘর থেকে রাশেদুল ইসলাম মোমেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে নিয়ে পুলিশ রোববার দুপুরে থানায় আনলে এলাকার শতশত লোক এ নৃশংস হত্যার সাথে জড়িতকে দেখতে থানায় ভিড় করে।
প্রসঙ্গত আড়াইহাজার উপজেলার উচিৎপুরা ইউনিয়নের বাড়ৈপাড়া গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী শেফালী আক্তারের সাথে তার বৈমাত্রেয় ভাই রাশেদুল ইসলাম মোমেনের দীর্ঘদিন যাবৎ পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছিল।
প্রতিরাতেই প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম মোমেন ভাবী শেফালী আক্তারের ঘরেই রাত্রি যাপন করত। এ ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে এ নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার শালিস বসে বিচার আচার হয়।
তাদের দুজনের কুকর্ম শেফালী আক্তারের ছেলেরা দেখে ফেললে শেফালী আক্তার ও তার প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম মোমেন শিশু হৃদয় ও জিহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
সেই পরিকল্পনা মতো ১২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটার সময় শিশু হৃদয় ও জিহাদকে কাঁথায় পেঁচিয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহুর্তের মধ্যে ঝলসে যায় নিষ্পাপ দুই শিশুর দেহ। শিশুদের চিৎকারে বাড়িল লোকজন এসে হৃদয়ের সারা শরীর পোড়া নিথর দেহ ও ছোট ভাই জিহাদের অর্ধ পোড়া অবস্থায় কাতরাতে দেখতে পান। সেখান থেকে আহত জিহাদকে উদ্ধার করে প্রথমে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিহত হৃদয় ৩৫ নং বাড়ৈইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র এবং আহত ছোট ভাই জিহাদ প্রথম শ্রেনীর ছাত্র তার পরিবার সূত্রে জানাযায়। ১৩ এপ্রিল শুক্রবার এ ব্যাপারে নিহত হৃদয়ের দাদা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় শেফালী আক্তার ও রাশেদুল ইসলাম মোমেনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘাতক মা শেফালী আক্তার ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইসলামপুর এলাকার সুন্দর আলীর কন্যা বলে পুলিশ জানায়।
ঘটনার পর নিহত হৃদয়ের মা শেফালী আক্তারকে পুলিশ গ্রেফতার করে ১৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট ২য় আদালতের বিচারক মেহেদি হাসানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেন তিনি । স্বীকারোক্তিতে মা শেফালী আক্তার বলেন, প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম মোমেনের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্যই মোমেনকে সাথে নিয়ে নিজের দু সন্তানকে হত্যার উদ্দেশ্যে কাঁথায় মুড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ফলে বড় ছেলে হৃদয় (৯)এর সারা শরীর আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায়।
এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানার ওসি এম এ হক জানান, চাঞ্চল্যকর এই শিশু হত্যা মামলার অভিযুক্ত দুইজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সে প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে হত্যার সাথে জড়িত বলে তথ্যদিতে শুরু করেছে বলেও জানান।