বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
শাওতাল ও রাখাইন এটি আলাদা বৈশিষ্টের মানুষ। যাদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার সম্পূর্ন আলাদা। প্রায় পৌনে দুই লাখ শাওতাল ও প্রায় একলাখ রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস। এরা ভিন্ন পেশার মানুষ হলেও এদেশে বসবাস করে। ১৮০০ সালের আগে বাংরাদেশে এদের আবির্ভাব ঘটে। পাক ভারত উপমহাদেশের সময় এরা ছড়িয়ে পড়ে ভারত , নেপাল ও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে এদের অস্ত্র হচ্ছে তীর ধনুক। এরা তীর ধনুক দিয়ে ১৮৫৫ সালে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। আজ তারা তাদের পূর্ণ ঐতিহ্য ধরেই তীর ধনুক নিয়ে চলাফেরা করে। এখন তারা যুদ্ধ করেনা বটে তবে তারা হিং¯্র জীব জন্তুর ভয়ে এখন অস্ত্র ব্যবহার করে আবার পাখিও শিকার করে। এরা গরীব। কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কালো বর্নের মানুষের ভাষা ও আলাদা।
এরা আশক্ষিত । লেখা পড়ার জন্য এদের আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এরা বঞ্চিত শিক্ষার আলো থেকে আলাদা পরিবেশে বসবাস করে, আলাদা ভাবে ধান, আখ , সহ রবি শস্য চাষ করে। নারী পুরুষ এরা একত্রে এই কৃষি কাজ করে। তাদের একাজে সহযোগিতা করে তাদের সন্তানেরা। এরা বাঙ্গালীদের সাথে না মিলে আলাদা ভাবেই বসবাস করে। বাংলাদেশের গাইবান্দায় শাওতালদের বসবাস বেশী। তবে এছাড়াও বিভিন্ন স্থানেও এরা বসবাস করে। সম্প্রতি শাওতালদের গ্রাম জ্বালিযে দেয়া হয়। তাদেরকে উচ্ছেদ করতে চায় এক শ্রেণির লোক। তাদের চাষকৃত আলু ক্ষেত, ডাল ক্ষেত ধ্বংস করে দেয়। বলা হয় তাদের কয়েক ‘শ’ একর জমি যা তাদের দখল এ জমি তাদের নয় । শাওতালদের বাড়ি-ঘর নির্মান তা ও আলাদা। বৃট্রিশ আমলের ও আগে এদেশে তাদের আবির্ভাব ঘটলে ও আজ ও তারা আলাদা বৈশিষ্টের নিয়ে বেচে আছে। ১৯৫৫ সালে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে তাদের কয়েকজন নেতা নিহত হয় আর ২০১৬ সালে তারা তাদের বসত ভিটার কয়েকজন কে প্রান দিতে হয়। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ায় এবং ফসরের ক্ষতি করায় নারী শিশু নিয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। আদিবাসী হয়েও তারা এদেশে বসবাস করে। এরা একেবারে দরিদ্র যাকে বলে হত দরিদ্র। পাক ভারত উপমহাদেশে গেল পাকিস্তান গেল । বাংলাদেশের মত একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করেও আজ অবাধি কোন সরকার তাদের দরিদ্র দূরী করনে উদ্যেগ নেয়নি বরং উচ্ছেদের চেষ্ঠা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি তাদের উচ্ছেদ নয় বরং তাদের পূণর্বসান করা উচিত সরকারের। শাওতালেরা তাদের পূর্ব পুরুষের জমি ফেরত চায়।১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখচাষের জন্য গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় শাওতাল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এক হাজার ৮৪২ একর জমি অধিগ্রহন করে। কিন্তু চিনিকল কতৃপক্ষ ঐ জমিতে আখ চাষ না করে কিছু প্রভাবশালী লোকের কাছে লিজদেয় । তারা ঐ জমি লিজ নিয়ে আখ চাষ না করে তামাক, ধান ও রবিশষ্য আবাদ করে। লিজ নেয়া ব্যক্তির খুবই প্রভাবশালী। তাদের পেশি শক্তি বেশী। শাওতালরা তাদের বাপ দাদার জমিতে আখ চাষ না করে অন্য আবাদ করায় তারা ঐ জমি ফেরত চায় । ৬ নভেম্বর সন্ধায় মিল শ্রমিক ও পুলিশের সাথে সংঘর্ঘের এক পর্যায়ে শাওতালদের উপর গুলির নির্দেশ দেয়। এতে ৩জন নিহত ও ৮ জন আহত হয়। শাওতাল পল্লী এখন অভাবের পল্লীতে পরিনত হয়েছে। অনেকের পড়নে নেংটি নেই, তিন বেলার পরিবর্তে এক বেলাও খেতে পারছে না। বাড়িঘর পুড়ে দেয়ায় তারা খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে। গোবিন্দ গঞ্জের জয়পুর ও মাদারপুর গ্রাম সংলগ্ন ইক্ষু খামারের জমি চিনিকল কতৃপক্ষ দখল করে এক জুলাই কাটা তারের বেড়া দিয়ে দেয়। তখন থেকেই শাওতালরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে এবং দাবীকরে তাদের বাপ দাদার জমি অন্যকে লিজ না দিয়ে তাদেরকে ফেরত দেওয়া হোক। ৬ নভেম্বর ঐ এলাকা থেকে তাদের উচ্ছেদ করে। অবশ্য হাই কোর্ট শাওতাল পল্লীর ধান কাটার নির্দেশে দেয়ায় তারা আনন্দিত। তাদের গোলায় ধান ভরেছে এবং বছর জুড়ে খেতে পারবে। পাশাপাশি বাড়িঘর ধ্বংসের জন্য তাদের গৃহ নির্মানের ব্যবস্থা ও করতে হবে।
আলাদা বৈশিষ্ঠে বসবাসকারী আরেকটি সম্প্রদায় হচ্ছে রাখাইন। যাদের বসবাস দক্ষিন উপকূলে। দেড়শ বছর আগে সূদূর বার্মা থেকে রাখাইনদের কয়েকটি পরিবার সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উপকূলে আসে। তখন ও উপকূলে মানববসতি হয়নি। রাখাইনরা উপকূলে এসে ও জঙ্গল পরিস্কার করে অনাবাদী জমি আবাদী জমিতে পরিনত করে। রাখাইন নারী পুরুষ উভয় পরিশ্রমী। তারা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখনো পুরোনো খতিয়ান খুনলে দেখা যায় হাজার হাজার একর জমি রাখাইন দের নামে। উপকূলে রাখাইন দের আগমনেই সেখানে মানব বসতি শুরু হয়।প্রভাবশালীরা রাখাইনদের বহু জমি দখল করে বাড়িঘর নির্মান করেছে। বহু জমি রেকর্ড করায়ে নিয়েছে। তারা ও অনেক কষ্ঠ নির্যাতন সহ্য করে ঠিক আছে। তবে অনেকেই বার্মা ফিরে গেছে। উপকূল থেকে দিন দিন রাখাইন বিলুপ্ত হচ্ছে। ওদের ও ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি কালচার সম্পূর্ন আলাদা। আলাদা পেশার এ মানুষ গুলোর কিছু সংখ্যক উপকূলে টিকে আছে। অনেক বার্মা চলে গেছে। চলে যাওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে।
আমরা এতটুকুই বলতে চাই শাওতাল ও রাখাইন পর দেশের হলেও এদেশের নাগরিক। এদের ও অধিকার আছে।এদের মানবাধিকার যাতে লংক্ষিত না হয়। এদের স্ব স্ব ভূমিতে এরা বসবাস করে। এদের মানবতা যেন লংক্ষিত না হয় সরকার এ ব্যাপারে সহয়তা করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এম,আলতাফ মাহমুদ
সাংবাদিক ও কলামিস্ট