বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
শহরের কালীবাজারের নিখোঁজ স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষকে আর্থিক লেনদেনের কারনে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক।
মঙ্গলবার ( ১০ জুলাই ) বেলা সাড়ে এগারোটায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলনে কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মঈনুল হক।
এদিকে হত্যাকান্ডে জড়িত পিন্টু জুয়েলার্সের মালিক পিন্টু দেবনাথ ও তার কর্মচারী বাপন ভৌমিককে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ।
এসময় সংবাদ সম্মেলন আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ডিবি ) নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে আর্থিক লেনদেনের বিরোধ নিয়ে এই হত্যাকান্ডে ঘটেছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত অভিযোগে নিহত প্রবীরের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার পিন্টু এবং বাপন ভৌমিক নামের এক স্বর্ণ কারিগরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পিন্টু ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার ভাড়াটে। তার ফ্লাটেই এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে ধারণা করছে।
আরো জানান, রাত এগারোটার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল আমলাপাড়া এলাকার ঠান্ডা মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় বাড়ির নীচ তলার সেফটি ট্যাংক থেকে একে একে তিনটি বস্তায় প্রবীরের পাঁট টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় নিহতের স্বজনরা এবং শত শত এলাকাবাসী বাড়ির সামনে এসে ভীড় জমান। লাশের দূগন্ধ ছড়ালে অনেকেই তখন নাকে মুখে রুমাল চেপে ধরেন।
আরো জানান, গত ১৮ জুন প্রবীর চন্দ্র ঘোষ নিখোঁজ হলে পরিবারের জিডির ভিত্তিতে সদর থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করতে থাকে। কিন্তু পুলিশের তদন্তের অগ্রগতি না হলে গত ৫ জুলাই বিষয়টি তদন্তের ভার দেয়া হয় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে। গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে সোমবার সকালে পিন্টু ও বাপন ভৌমিককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আটককৃতরা প্রবীর চন্দ্র ঘোষকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে বলে স্বীকার করে। পরে তাদের সাথে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ পিন্টুর ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রবীরের লাশ উদ্ধার করে। স্বীকারোক্তিতে আটককৃত দুইজন জানিয়েছে নিখোজ হওয়ার দিন পিন্টু ও বাপন প্রবীরকে পিন্টুর ফ্লাটে নিয়ে আসে। ওই ফ্লাটেই হত্যাকান্ডের পর প্রবীরের লাশ তিন টুকরা করে তিনটি বস্তায় ভরে সেফটি ট্যাংকে গুম করে। আর্থিক লেনদেনের বিরোধের জের ধরেই প্রবীরকে হত্যা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন রাত সাড়ে নয়টায় নগরীর বালুরমাঠ এলাকার নিজ বাসা থেকে কালিরবাজার এসে নিখোঁজ হন প্রবীর চন্দ্র ঘোষ। রাতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। নিখোঁজের পরদিন ১৯ জুন প্রবীর ঘোষের বাবা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়রি করেন। এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর অজ্ঞাত ব্যক্তি প্রবীরের পরিবারের কাছে মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ ১ কোটি টাকা দাবী করে।
এদিকে প্রবীর চন্দ্র ঘোষ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে কালিরবাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও স্বর্ণ শিল্পী সংগঠন দোকানপাট বন্ধ রেখে কয়েক দফায় মানববন্ধন, মিছিল ও বিক্ষোভ কমূসূচী পালন করেন। প্রবীরের সন্ধানের দাবীতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে তারা স্মারকলিপিও দেন।