বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
॥সমাধী
আদিল সাদ
আজ সমাধীর স্মৃতিপথে জেগে আছে,
আঁধার ঘেষা কালো মায়া
কেন আজ হারায়ে ভাসায়
নৈশব্দ্য ঘেরা প্রভাতের ছায়া
সকালের ধসকালে স্মৃতির রজনী
মেঘের স্রোতে ভাসে,বেদনার সমাধী।
বেদনাকে সমাধী দিয়ে
আধারে মৃত মূর্তিটা দেখি
কখনও ওরা হাসে
আবার কখনও ওরা কাঁদে
শুধুই নিরবতায় চেয়ে থাকি।
আসলে সমাধীগুলো স্থির
চোখের প্রভাতের প্রস্থানে
রাতের তারাগুলো ভেসে ওঠে
আমার চেতনার অভিসারে।
আমি হারাই,আমি ভাসাই,
আমার জলন্ত প্রাণ
দুঃখের দহনে ভিজাই
আমার হিয়ার সমাধী স্থল।
কাঁদে বাবার অন্তিম প্রান
মায়ের চোখের জল
কাঁদে নীরব শিশু
আরও কত সহস্র বিষ্ময়
এরা সবাই আজ সমাধী
স্মৃতির ভালবাসার পাতা
আর আত্মাগুলো যেন
এক একটি স্মৃতির অবলীলা।
এখনও কাঁদি আমি
বায়ান্ন,ঊনষোত্তর মত
এক একটি সমাধী কাছে গিয়ে
যেন ওদের ডাকি আবার
সংগ্রাম ঘেরা নিত্যন্ত প্রহরে;
আমার ভাষা বাংলাতে
জয় বাংলার শ্লোগানে
প্রথম বাংলাদেশ দেখার স্বপনে
সোনার বাংলা গড়ার প্রেরণাতে।
প্রয়োজনে আবার সমাধীগুলোর
প্রাণ ফিরিয়ে দিব, মশাল দিব, অস্ত্র দিব
একটা মিছিলে যেতে
আবার সময় হলে ওদের ডেকে
ঘুম পড়িয়ে দিব
সমাধী ঘরে আলো জ্বালিয়ে,
তবুও মিছিল হোক
সমাধীর আত্মাগুলো জেগে উঠুক
এই আঁধারের জীর্ণ শহরে।
এর নামই ভুল!
আদিল সাদ
ভুল হিমালয়ের মত শক্তিশীল
একটা নিত্য অগ্নির কুন্ডলী
কাউকে হার মানিয়ে চোখের জলে
ঝর্ণার মত অশ্রু ঝরায়
মাশুলবাবদ অসমাপ্তি শ্রাবণে।
জীবনে ভুল লেখা হয়
ডায়রির পাতায় অজস্র আবেগে ব্যাকরন সংজ্ঞা ছাড়া
মর্মাহত করে কোন জীবনের রাতকে ধাপেধাপে;
তিলেতিলে খায় সমাজের মিশে থাকা
নির্বিষয়, নির্বিকার, নির্মমতা, নির্জনতার
অনলের কুন্ডলী ঘিরে,
কখনও আর্তনাদ হারায় ধর্ষিতা-
কাপুরুষের অশ্লীল বার্তায়।
নারীর পতিতাবৃত্তি শাসনে
আবার কোন নর হয় দেহলোভী!
সহস্র ভুলে থাকা আক্রোশে।
এর নামই ভুল! শুধু ভুল!
যার কোন পথ নেই,কোন যৌবন নেই
শুধু আছে যন্ত্রণা প্রতিটা ক্ষণেক্ষণে
নিজেকে শুকিয়ে চুকিয়ে শেষ করে
সূর্যের অস্তের মত নিভিয়ে।
রাত্রী জাগা নিস্তব্ধতা হয়
প্রেরণাশক্তির একটা অস্তিত্ব
যেন পিছনে হারানো অতীত
অতঃপরে ছিড়ে টুকরো হয়
ডায়রির সেই শেষ পৃষ্ঠায়;সেই সংখ্যায়
আর ভুলে যাই ভুল!
সুন্দর করে বাঁচতে
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিশ্বাসে বিশ্বাসে
আমার আমাকে ভালোবেসে!
নবান্ন উৎসবে,বাসন্তী মাখা রোদে
নতুন একটা স্বপ্নকে আকড়ে ধরে।
বন্ধন সূত্র
আদিল সাদ
বিশ্বাস
প্রেম
ভালবাসা
সৃষ্টি
দৃষ্টি
অনুভূতি
বন্ধন সূত্রে গাঁথা।
অকালে বহে আসা স্রোতে
আঁধারের কালো রাত যায় কেটে
ভুলে গেছো তুমি সেদিনের
ফিরে যাওয়া নৃত্যের ছন্দে
ক্যানভাসে ভেসে আসা
স্মৃতির অতৃপ্তি জ্বালাতে।
মনের মোহনার ভেসে আসা
বিরহের জলে ভাসিয়ে দিলাম তরী
আমি ছুঁয়ে দিলাম অচেনা দৃষ্টি!
হিমাদ্রীর কনকনে শীতে
আমি রেখেছিলাম হাত
সহস্র বিশ্বাসের বাঁধনে
স্মৃতির অবধি প্রেমে!
বলেছিলাম সেদিন তোমায়
উষ্ণ চুম্বনে ছুঁয়ে শেষ চিঠি লিখে
বলেছিলাম আমার স্বপ্নেরসিড়ি
লাল রাঙ্গা মেহেদী হস্তে আঁকা চিত্রে।
আসলে না তুমি সাথী হয়ে
সেই জলাশয়ে দীঘির পাড়ে
সত্যি আমি অপরাধী
এখনও ভালোবাসার নয়নোৎসবে।
বাস্তবতা আমাকে ডাকে
তোমার পথের নেশায়
তুমি আসলেও আর পারি না তোমায়
না বলা ভালোবাসা শুনাতে আবার
তবু তুমি প্রিয় আমার স্বপনে মননে
চিরদিনই বহমান
যেন আমার
জলে ভেজা চোখের ভাষায়
চিরশান্তি বহমান।।
নির্বাসিত জীবন
আদিল সাদ
কিছু প্রশ্নের কিনারা নেই
নেই কোন উত্তর
শুধু হাজার স্তব্ধতা নিয়ে
জীবনে আসে শূন্যের বিবর্তন।
সময়ের আকুতি, আবার চিন্তারাজ্য
যে আমার যৌবনের মিছিলে
আমাকে অহংকারী করে
আমি তো মিছিলে যাই না!
শুধু ঘরেরে কোনে
একা একা নিরবে থাকি
শূন্যতা প্রাপ্য নিয়ে
সব সময় স্থির হয়ে
কারও আলপনাও আঁকি,
তাহলে কেন এ বিবর্তন?
আমাকে সমাজ ক্ষমা করবে না?
আমাকে অনাহারী করে
আর কত চোখের জল
কেড়ে নিবে?
আমি জানি না,
তবু বিবর্তন ধারায় শূন্য আছি
কেউ পূন্য কর না!
আর প্রশ্নের উত্তর,
আমার কাছে ছিল না
আর কখনও থাকবেও না!
থাকলে সমুদ্রে যেতাম
শৈবালে গভীর অতলে লুকাতাম
আবার জলউদ্ভিদ হয়ে ওখানে থাকতাম
ভালবাসার মতো ও জায়গাটাও সুন্দর।
আর কোন প্রশ্নের উত্তর নেই
আমি একা একা আজ নির্বাসিত
কেউ আমাকে কখনও জিজ্ঞেস করেনি
ভাল আছি কিনা!
সবাই তার সমস্যা,
নিত্য নতুন কাজ নিয়ে প্রহর গুনছে
এটা জীবনের ধাপ,
কেউ কারও নয়।
এটার নামই আবার নিয়তি
এটার নামই নির্বাসিত জীবন।
॥অর্ধমৃত কাক
আদিল সাদ
অর্ধমৃত কাক দালানের পাশে
ধূসর কাল রঙ্গের পালক মেলে কাতরাচ্ছে
খানিকটা সময় দীর্ঘশ্বাস দেয়
জরাজীর্ণ একটা জীবনে
কিছুটা সময় ওর শব্দটা
আমার হৃদয়টাকে অধীর করে।
হাঁটিহাঁটি পা করে এক কদম এগোচ্ছি
আর একটি যোগফল বের করছি
জীবনের একটা সংকল্পে।
একটা সময় চোখের অদৃশ্য ছায়ায়
মেঘগুলো এক হয়ে যায়
খানিকটা সময় দূরে এসে
স্থির,স্তব্ধ,সংকীর্ণ হই
এক ষাটোর্ধ মানবকে দেখে
বাবা!দশটা টাকা দে না!
নিলজ্জ আমি হাতখালি!
বেকার জীবন যেন ওর মত আমি ষাটোর্ধ!
অর্ধমৃত কাক অন্ন পায় না,
নোংরা আবর্জনা স্তুপগুলো
বিনাশ হয় না,
সেই ষাটোর্ধ মানবটা আজ অর্ধমৃত
যেন আহার খুঁজে পায় না!
আমি ও অর্ধমৃত,
যৌবনের মিছিল নেই!
কোলাহল নেই,
স্বপ্নও নেই!
শুধু আছে পৃথিবীর বিন্দু বিন্দু যন্ত্রনা
সবগুলো ঈশ্বর শুধু আমাকে দেয়
ঐ দেখ কাল অনাহারী
পরশু কেউ আশ্রয়হীন
আবার কেউ পথবাসী।
শুধু আমিই নিরূপায়,
জলে ভিজে ভাসছি
কখন স্তনান্তরিত হয়ে
আবার অজস্র অশ্রুবিসর্জনে।
শুধু আলো চাই,একটা সকালের
যা আবার গ্রাস করবে এ সমাজকে
বসন্তের দোলায় সবুজের সমরোহে
কোন বুনোফাগুনে আনন্দে
আবার বেঁচে উঠবে
সেই অর্ধমৃত কাক
কোন ষাটোর্ধ মানব
অন্ন পাবে একবেলা অবশেষে,
আবার কোন তরুন মুক্তি পাবে
বেকারত্বের শৃঙ্খল থেকে।
সেই প্রতিক্ষায়,সেই দিনে, সেই সমাজে
আমি ওঠে দাঁড়াব
স্বাধীনতার কপাট উড়িয়ে
দক্ষিনার বাতাসে
এলোমেলো বাতাসের শোভিত ঘ্রাণে
মুক্তি দিব এ সমাজ ও সভ্যতাকে।