আগামী ২৪ ঘন্টায় ডিএনডি এলাকায় জলবদ্ধতা নিরসনের আশা সেনাবাহিনীর
বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে টানা বর্ষণে নারায়ণগঞ্জের ডিএনডির নিচু এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। এ অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও ব্যাপক কর্মতৎপরতায় চিরচেনা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে দিনরাত চলছে কার্যক্রম। তাদের নিয়মিত প্রচেষ্টায় দ্রুত অপসারণ হয়ে আসছে জলাবদ্ধতা। আগামী ২৪ ঘন্টায় ডিএনডি এলাকায় জলবদ্ধতা নিরসনের আশা সেনাবাহিনীর।
ডিএনডি এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, টানা প্রবল বর্ষণে ডিএনডি অভ্যন্তরে সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী, মিজমিজি, বাতানপাড়া, সাহেবপাড়া, সানারপাড়, নিমাইকাশারী, ভূইঘর, জালকুড়ি. ফতুল্লার কুতুবপুরের নয়ামাটি, পাগলা সহ ডিএনডি’র মধ্য এলাকায় পানিতে রাস্তাঘাট ও ঘর-বাড়িতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে দুর্ভোগের শিকার হয়েছে মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের পর দিন থেকেই সেনাবাহিনীর উদ্যোগে কাজ শুরু হয় পানি অপসারণের। সেদিন থেকেই শিমরাইল ও আদমজীর পাম্প হাউজের সকল পাম্প দিয়ে পানি সেচ করা হচ্ছে। এছাড়াও ফতুল্লা, পাগলা ও শ্যামপুরের পাম্পিং প্লান্টের পাম্প দিয়েও পানি সেচ দিচ্ছে। ডিএনডি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লেঃ কর্ণেল শাহাদাৎ হোসেন ও প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর এস এম সাকিব আজওয়াদ এর উদ্যোগে দুর্ভোগ লাগবে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। আগামী ২৪ ঘন্টায় জলাবদ্ধতা একেবারে কমে আসবে বলে জানায় তারা।
সিদ্ধিরগঞ্জ ঝালকুড়ি ডিএনডি এলাকার বাসিন্দা আকাশ মিয়া জানান, ঘুর্ণিঝড়ের কারনে টানা বৃষ্টিতে ডিএনডি এলাকা পানি বন্দী হয়ে পরে। এতে আমরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছি। খাল ও ড্রেনে জমে থাকা ময়লা সেনাবাহিনী ভেকু দিয়ে পরিস্কার করছে । এতে করে জমে থাকা পানি নিস্কাশন হতে শুরু করেছে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প দিয়ে তারা জলবদ্ধতা নিরসন করছে যা আমাদের পানিবন্দী থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিচ্ছে।
তথ্যমতে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা এলাকায় ১৯৬২ থেকে ১৯৬৮ সালে ৫৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে অতিরিক্ত ধানচাষ করার জন্য চারদিকে বাঁধ দিয়ে ‘ডিএনডি ইরিগেশন প্ল্যান্ট’ তৈরি করা হয়। পরে ধীরে ধীরে নগরায়নের ফলে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলে এই প্রকল্প পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালে ডিএনডি বাঁধের কাজ একনেকে পাস হলে ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প ব্যয় শুরুতে ৫৮২ কোটি টাকা হলেও পরবর্তীতে ২০২০ সালে তা বাড়িয়ে করা হয় এক হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। ফলে আরো বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে সেনাবাহিনী।
২০১৮ সাল থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের আওতায় সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এবং শিমরাইলের দুইটি হেভি পাম্প স্টেশন, ফতুল্লা, পাগলা এবং শ্যামপুরে পাম্পিং প্লান্ট, ২২টি ব্রিজ, ৬৯টি কালভার্ট, ৪টি ক্রস ড্রেন, ১টি পুশ মেথড ,৩৭টি খাল,৪৪ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করে। ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে স্বস্তি। দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো সেনাবাহিনী কর্তৃক পুনরুদ্ধারের পরে তার পাশে তৈরি করা ওয়াকওয়েগুলো যেন এখন পর্যটন স্পট। ভোর-সকালে বা বিকেলে জনসাধারণ নির্মল আবহাওয়া ও মুক্ত বাতাসের জন্য জড়ো হচ্ছে ওয়াকওয়েতে।
পাম্প হাউজ সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাশনের জন্য শিমরাইল ও আদমজী ২টি পাম্প হাউজের ১৩টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প এবং ফতুল্লা, কদমতলী ও শ্যামপুরের পাম্পিং প্লান্টের সকল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করছে। এছাড়া ডিএনডি ভেকু দিয়ে ময়লা পরিস্কার করে জলবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী রমজান আলী প্রমাণিক বলেন, এই বছরেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এবং জলাবদ্ধতাও দূর হবে। এরপর থেকে এসব এলাকার বাসিন্দারা পুরোপুরি সুফল পাবে।
ডিএনডি প্রকল্পের সিনিয়র প্রকোশলী গোলাম সোহেল জানান, দুই পাম্প হাউজে পার সেকেন্ডে সাড়ে পাঁচ কিউবিক মিটার ক্ষমতা সম্পন্ন ১৩টি পাম্প চালুর পাশাপাশি ৩টি পাম্পিং প্লান্টের পাম্প চালু রয়েছে। এই ডিএনডি প্রকল্পটি সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সেনাবাহিনী। দ্রুতই পানি কমে আসবে। তিনি ডিএনডিবাসীদের আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এই বছরেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এবং জলাবদ্ধতাও দূর হবে। এরপর থেকে এসব এলাকার বাসিন্দারা পুরোপুরি সুফল পাবে।