স্টাফ রিপোর্টার,বিজ্রয় বার্তা ২৪
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো অনিয়ম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এবং তাতে বিরোধীদলগুলোর নির্বাচন বয়কটের ঘটনাও ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার চর্চা সংক্রান্ত ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে এ পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপের শুরুতেই বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বিতর্কিত উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা এ নির্বাচনকে বিতর্কিত বলে মত প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রাখা হয়নি বলেও তারা জানান। নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি কয়েক মাস অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি পালন করে।
এতে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনের পর এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনও ব্যাপক ভোট কারচুপি ও হস্তক্ষেপের অভিযোগে তা বয়কট করে বিএনপি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিও কোন নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেনি সরকার। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, মাসের পর মাস বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর মামলা ও নির্যাতনের পর ৩০ ডিসেম্বর স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনিয়ম পসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংগঠিত হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার না কোনো সঠিক তথ্য প্রকাশ করেছে, না এ ধরনের ঘটনার কোনো তদন্ত করেছে। অথচ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়ে আসছে, বির্চাবর্হিভূত হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালনা ও গ্রেফতারের পর সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলে থাকেন, তারা সন্দেহভাজন আসামীকে নিয়ে অস্ত্র উদ্বার কিংবা আসামী ধরতে তার গোপন আস্থানায় রাতের বেলায় অভিযান পরিচালনা করতে যান। আর এ সময়ই ক্রসফায়ারে আসামী নিহত হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জি এম নাহিদ নামের এক ব্যাক্তির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ। লাশে গুলির চিহ্ন দেখতে পাওয়া য়ায়। নাহিদের বাবা জানান, নাহিদ পুলিশের কাছেই আটক ছিলো। তার মুক্তির জন্য পুলিশ ৫ লাখ টাকা দাবি করার পর থেকেই সে গুম হয়ে যায়। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে র্যাব অফিসাল দ্বারা নারাগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের তৈরি করে।
গুম প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবাধিকার সংগঠন ও মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বছরপূর্তির পর থেকে গুম ও অপহরণ অব্যাহত রয়েছে। যার কিছু ঘটছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা। গুম ও অপহরণ বন্ধে সরকারের প্রচেষ্টা কিংবা তদন্ত অতি নগণ্য বললেই চলে। গত মার্চের ১০ তারিখে সাদা পোশাকধারী লোকজন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে তার ঢাকার বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। মে মাস পর্যন্ত তিনি কোথায় ছিলেন তা জানা যায়নি। তবে এ মাসের শুরুর দিকে তাকে রহস্যজনকভাবে ভারতের শিলং এ দেখা যায়। সে দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তার এখন বিচার চলছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধানে মত প্রকাশ ও মিডিয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু সরকার এ স্বাধীনতা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে।
গত অক্টোবর মাসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, বর্তমান সংসদ একটা পুতুল নাচের নাট্যশালা। একে কার্যকর সংসদ বানাতে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। এ বক্তব্যের পরই টিআইবির উপর ক্ষেপে যায় সরকার। তারা সংস্থাটির আর্থিক হিসেব তদন্ত করবে বলে হুমকি দেয়, এ বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল বলে মন্তব্য করে, এনজিও নিয়ন্ত্রণে আইন করা হবে বলেও জানানো হয় সাংসদদের পক্ষ থেকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যে সমস্ত মিডিয়া স্বাধীনভাবে তাদের মতপ্রকাশ ও সমালোচনা করছিলো তাদেরকে সরকারি চাপের মুখে পড়তে হয়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, গোয়েন্দারা সরকারি বিজ্ঞাপন ও প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর কিছু অংশকে মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন না দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। গ্রামীণ ফোন প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ তাদের ও অন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে দেশের শীর্ষ দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিতে নির্দেশনা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ এমনকি গোয়েন্দা সদস্যরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে হেনস্থা ও নির্যাতন করেন। গত জানুয়ারি মাসে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫০ মিনিটের একটি বক্তব্য ইটিভি টেলিভিশনে প্রচারের কারণে এর চেয়ারম্যান আব্দুস সালামকে গ্রেফতার করে পুলিশ।