বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সোনারগায়ের গায়ের নির্যাতিত ছদ্মনাম পারুল সংসারের অভাব ঘোচাতে পাড়ি দিয়েছিলেন সূদুর সৌদি আরব। শুধু পেটের তাগিদে এ যেন আলোর জগতে অন্ধকারে নিজেকে ডুবে দেওয়া। তবু অজানার উদেশ্যে বুক ভরা আশা নিয়ে পারুল সৌদি আরব পাড়ি দেন। চোখে ছিল নতুন সুখের স্বপ্ন। কিন্তু চাকরি তো দূরের কথা উল্টো অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য সৌদিতে বাবা ছেলের কাছে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় পারুল।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাও উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়নের সিংলাব গ্রামে বাবা-মা, সাত বোন ও দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করতেন নির্যাতিত পারুল। সোহরাব নামে এক দালাল সৌদিতে গেলে পারুল ভাল কাজ পাবে এবং বেশী আয় করতে পারবে বলে প্রলোভন দেখায় পারুলকে। দালালের প্রলোভনে পড়ে হতদরিদ্র বাবা সিরাজুল ইসলাম পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে তার মেয়েকে সৌদিতে কাজ করতে যেতে রাজি হয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি আরব সরকারের সব নিয়মকানুন মেনে গৃহকর্মীর কাজ করার জন্য বৈধভাবে ভিসা নিয়ে চলতি বছরের ২ জুন সৌদি আরবের মদিনা প্রদেশে যান পারুল। সেখানে যাওয়ার আগে দেশে সে গৃহকর্মী কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সৌদিতে একটি ধনী পরিবারে গৃহকর্মী হিসেবে যোগদান করেন পারুল। আড়াইমাস না যেতেই বাবা- মায়ের কাছে ফোনে তার সাথে ঘটে যাওয়া পাশবিক যৌন নির্যাতনের বর্ননা দেয় পারুল। সে জানান, ওই পরিবারের প্রধান গৃহকর্তা ও তার ছেলে প্রতিনিয়ত তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাচ্ছেন। শারীরিক নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি যৌন নির্যাতন চালাচ্ছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় জ্বলন্ত সিগারেটের আগুন দিয়ে তারা তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে ছ্যাঁকা দিয়েছে ও গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে পারুলের বাবা-মা জানান, আমাদের মেয়ে সৌদিতে বাবা ছেলের কাছে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তার অবস্থা এখন খুবই আশংকাজনক। এদিকে দালাল আমার মেয়েকে এখন দেশে ফিরিয়ে আনতে ছয় লাখ টাকা চাচ্ছে। আমরা গরীব অসহায় মানুষ এত টাকা কোথা থেকে দিবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি তিনি যেন আমাদের মেয়েকে জীবিত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাই। এরপর আমি সৌদি বাংলাদেশ দূতাবাসে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করি। তারা ওই নির্যাতিত গৃহকর্মীর সৌদি আরবের বাড়িটি সনাক্ত করে তাকে ইতিমধ্যেই উদ্ধার করেছে। সে এখন বর্তমানে সৌদি বাংলাদেশ দূতাবাসের হেফাজতে রয়েছে। অতিশীঘ্রই নির্যাতিত পারুলকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে আশ^াস প্রদান করেন তিনি।
নির্যাতিত পারুল বাড়ি আসবে কবে সে অপেক্ষায় দিন গুনছেন তার বাবা-মা ও পরিবার। মাকে জীবিত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন নির্যাতিত পারুলের মেয়ে।