স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারার নির্দেশনার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিলের রায় আগামীকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে আগামীকালের কার্যতালিকায় মামলাটির ঘোষণার জন্য ২ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
এর আগে গত ১৭ মে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিলের শুনানিতে আপিল বিভাগ ইউনিফর্ম না পরে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতারের ঘটনা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেন।
আদালত বলেছেন, ইউনিফর্ম না পরে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতারের ঘটনা ভয়াবহ। কাউকে গ্রেফতার করতে হলে ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় থাকতে হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেফতার করে যেভাবে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে এটি কি গ্রহণযোগ্য? ওই দিন শুনানি শেষে ২৪ মে এই বিষয়ে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আপিলের শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারলে মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারলে মুরাদ রেজা এবং রিটকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার এম আমির উল ইসলাম শুনানি করেন।
গত ২২ মার্চ মামলাটির আপিলের ওপর প্রথম দিনের মতো শুনানি হয়। ওইদিন রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেছিলেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে ডিবি পুলিশ ঢাকার সিদ্ধেশরী এলাকা থেকে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে। ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে মারা যান রুবেল। এরপর তৎকালীন সরকার রুবেল হত্যা তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে।
এ সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে রিট করে। ওই রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে ছয়মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধন করতে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ওই ধারাগুলো সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সরকারকে বলা হয়।
এর বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল আবেদনে বলা হয়, এ দু’টি ধারা সংশ্লিষ্ট যে আইনে রয়েছে, তা যথেষ্ট ও সঠিক। এ জন্য আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই।
২০০৪ সালে আপিল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেন। তবে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনাগুলো স্থগিত করেননি। এরপর ২০০৭ সাল, ২০০৮ সাল ও ২০১০ সাল এবং গত ২০ জানুয়ারি চারবার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলেও শুনানি হয়নি বলে জানা গেছে।
হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না। কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ্রেফতারের তিনঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃতকে এর কারণ জানাতে হবে। বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতারকৃতের নিকটাত্মীয়কে একঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে, গ্রেফতারকৃতকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সাথে পরামর্শ করতে দিতে হবে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের ভেতরে কাঁচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সাথে সাথে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে, ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে তখন ছয় মাসের সময় বেধে দিয়েছিলেন আদালত।