বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
২০ হাজার নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার ও চিকিৎসকদের সহযোগীতায় ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার সহযোগীতা ঘোষণা সেলিম ওসমানের
পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ ও বন্দরের ২০ হাজার পরিবার সহ নারায়ণগঞ্জে করোনা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার ও নার্সদের সহযোগীতার উদ্যোগ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের। সেই লক্ষ্যে তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা একটি কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার ২১ এপ্রিল দুপুর ১২টায় তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উইজডম অ্যাটায়ার্স লিমিটেড এর কার্যালয়ে সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এ কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আলোচনা সভায় এমপি সেলিম ওসমান বলেন, বিশ্বব্যাপী এ দুযোর্গ মোকাবেলা করার জন্য আমি নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী ও বিত্তবানদের কাছে আবেদন রাখছি। আমাদের নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি ৪টি থানা সদর, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা যার একটি অংশ সিটি কর্পোরেশন এলাকার আওতাভূক্ত বাকি অংশ দুটি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার আওতাধীন। আমি এ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে দীর্ঘ সময় টেলিফোনে বিস্তারিত আলোচনা করছি। আমরা ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে রোজার মাসটিতে ৬০০ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও ২০ হাজার পরিবারকে ৯০০ টাকা করে আমার ব্যক্তিগত ভাবে আমার এলাকার ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ২২জন কাউন্সিলরকে অনুরোধ জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭দিনের মধ্যে এসব মানুষের সহায়তায় নিজ উদ্যোগে বিকাশ বা নগদ একাউন্ট করে দিলে আমার কার্যালয় হতে প্রত্যেকের একাউন্টে প্রেরন করা হবে।
সেই মোতাবেক সিটি কর্পোরেশনের প্রতিজন কাউন্সিলর ৫০০জন করে নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের বিকাশ একাউন্ট প্রেরণ করবেন। যার মাধ্যমে ২০ কেজি করে চালের সমপরিমান ৯০০ টাকা করে প্রদান করা হবে। কাউন্সিলরদের মাধ্যমে মোট ১১ হাজার পরিবারকে সহযোগীতা করা হবে। এছাড়াও ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ সবাই তাদের ১২জন সদস্য প্রত্যেকের মাধ্যমে ৬০জন করে প্রতি ইউনিয়ন থেকে মোট ৭২০জন নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের বিকাশ একাউন্ট প্রেরন করবেন। সেই সাথে প্রতিটি চেয়ারম্যান আরো ২৮০জনের একাউন্ট প্রদান করবেন। প্রতিটি ইউনিয়ন এলাকায় ১হাজার জন করে ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোট ৭ হাজার জনকে সহযোগীতা করা হবে। বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ এর মাধ্যমে ৭০০ জন এবং দুই জন ভাইস চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে ৪০০ জন করে ৮০০ জন, জেলা পরিষদের সদস্য আবুল জাহের এর মাধ্যমে ৫০০জন সর্বমোট ২০ হাজার পরিবারকে সহযোগীতা প্রদান করা হবে।
এ ছাড়াও রমজান মাসে প্রতি এলাকায় উল্লেখিত সকল জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মোট ৬০০ জন বেকার যুবক-যুবতীকে সেচ্ছাসেবী হিসেবে নিযোগ দেওয়া হবে। যাদের প্রত্যেকজনকে ৪৫০০ টাকা করে সম্মানী ভাতা প্রদান করা হবে। অন্যদিকে ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মৃতদের দাহ এবং দাফনের ব্যবস্থা করছেন। ইহাকে আরো সুন্দর ও জোরদার করার জন্য তাঁকে বীর বাহাদুর আখ্যায়িত করে সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানের জন্য আমার দোয়া রইল এবং সহযোগীতা হিসেবে ১০ লাখ টাকা প্রদান করছি। করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তার নার্সদের থাকা খাওয়া এবং যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের মাধ্যমে আরো ২০ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করা হবে।
এ কর্মসূচীর আওতায় আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মোট ৬৩ লাখ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ৯৯ লাখ টাকা। উপজেলা পরিষদ এলাকায় ৯ লাখ টাকা। এলাকায় সেচ্ছাসেবীদের সম্মানী ভাতা ২৭ লাখ টাকা। ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের জন্য ১০ লাখ টাকা। ডাক্তার নার্সদের জন্য ২০ লাখ সর্বমোট ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা প্রদান করা হবে।
এর আগে ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলর বৃন্দদের মাধ্যমে এলাকার নি¤œ মধ্য বিত্ত প্রায় ১৩ হাজার মানুষের মাঝে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০ কেজি করে ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চাল বিতরন করা হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনে মেয়র ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্যের প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে আমার নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এমন ১৮ হাজার এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এমন ১২ হাজার সহ মোট ৩০ হাজার অসহায় পরিবারের তথ্য পাওয়া গেছে। আমি আমার ব্যক্তিগত ভাবে ২০ হাজার পরিবারের জন্য সাধ্যমত সহযোগীতার ব্যবস্থা করলাম, একই ভাবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে অসহায় পরিবার গুলোকে সহযোগীতার ব্যবস্থা করার অনুরোধ রাখছি।
নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠন ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি তিনি অনুরোধ রেখে বলেন, আমাদের চিকিৎসকগন যারা বীরত্ব নিয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জে অনেক ডাক্তার এবং নার্স ইতোমধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অতি জরুরী ভিত্তিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তার এবং নার্সদের থাকার এবং যাতায়াতের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি অনেকে নিজস্ব উদ্যোগে সহযোগীতা করছেন, এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে এবং জনসমাগমের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই আমার সকলের প্রতি আকুল আবেদন ডিজিটাল বাংলাদেশের সব কিছু আমরা ডিজিটাল ভাবেই পালন করি। সেই সাথে আমরা চেষ্টা করছি সরকারী সহযোগীতার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান এবং ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা পাই তবে আমরা দিন মজুর মানুষদেরও সহযোগীতা করতে পারবো।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম এ রশিদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমশেদ আলী ঝন্টু, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফয়সাল আহম্মেদ সাগর, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম নবী মুরাদ, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনায়েত হোসেন, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা, ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুল আহম্মেদ, নারী কাউন্সিলর শারমিন হাবিব বিন্নী, মিনুয়ারা বেগম, শিউলি নওশেদ, হোসনে আরা বেগম, আলীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি, গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওশেদ আলী, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম।