বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গুতিয়াবো মৌজা এলাকায় মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে সরকারী অর্পিত সম্পত্তি বায়না ও ব্যপক ক্ষমতাযুক্ত আমমোক্তারনামা দলিল রেজিষ্ট্রি করার অভিযোগ উঠেছে। মোর্শেদ আলম মেম্বারসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে ওই সম্পত্তি আত্বসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অর্পিত সম্পত্তির লিজ গ্রহীতা মিম্বর আলী বাদী হয়ে বায়না ও ব্যপক ক্ষমতাযুক্ত আমমোক্তারনামা জাল দলিলের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মোর্শেদ আলম মেম্বার, রাজমুল আহসান, আপতু মিয়া, ছানাউল্লাহ, পারভেজ, মোকারম আলী ও মোহাম্মদ আলীকে আসামী করা হয়।
বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জকে হস্তান্তর করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনার সত্যতা পেয়ে পুনরায় আদালতকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলা,তদন্ত প্রতিবেদন ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গুতিয়াবো মৌজার জেএল এসএ ও আরএস ৯৭ নং দাগে সিএস ও এসএ ৮২৫নং দাগে ভিটি ভুমি ১৯.৩৬ শতাংশ জমি ভোগদখল অবস্থায় মারা যান সম্পত্তির মালিক নরেন্দ্র চন্দ্র চক্রবর্তী। পরে ওই সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি ’ক’ গ্রেজেটভুক্ত হয়। পরে বাসুর উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি অর্পিত সম্পত্তি লীজ গ্রহীতা হয়ে ভোগদখল শুরু করেন। বাসুর উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ছেলে মিম্বর আলী লীজ গ্রহীতা হয়ে ভোগদখল করে আসছেন। তারা বছর বছর লীজ নবায়ন করে সরকারের নিয়মানুয়ায়ী কার্যকম চালিয়ে আসছেন।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মিম্বর আলী জানতে পারেন, রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোর্শেদসহ তার সহযোগীরা তাদের নিজেদের নামে অর্পিত সম্পত্তিটি রেজিষ্ট্রি বায়না ও ব্যপক ক্ষমতাযুক্ত আমমোক্তারনামা দলিল রেজিষ্ট্রি করে বিক্রি করার পায়তারা করছেন। বায়না রেজিষ্ট্রি করেছেন ২০১৮ সালের ৭ জুন ও অপরটি ব্যপক ক্ষমতাযুক্ত আমমোক্তারনামা দলিল রেজিষ্ট্রি করেছেন একই বছর ৪ অক্টোবর। রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে তল্লাশি দিয়ে দেখতে পায়, মৃত নরেন্দ্র চন্দ্র চক্রবর্তীকে জীবিত দেখিয়ে ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে চক্রটি অর্পিত সম্পত্তিটি রেজিষ্ট্রি বায়না ও ব্যপক ক্ষমতাযুক্ত আমমোক্তারনামা দলিল রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছে। অথচ নির্বাচন অফিসে তল্লাশি দিয়ে এনআইডির সঙ্গে কোন মিল পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী ও অর্পিত সম্পত্তির লীজ গ্রহীতা মিম্বর আলী বলেন, আমরা কয়েক যুগ ধরে সরকারের কাছ থেকে লীজ গ্রহন করে নিয়মানুযায়ী ভোগদখল করে আসছি। ভুমিদস্যু মোর্শেদ মেম্বার জাল দলিল করে সম্পত্তি বিক্রি করার পায়তারা চালিয়ে আসছে। বেশ কয়েকজন ক্রেতাকে জমি বিক্রি করার জন্য সম্পত্তি দেখিয়েছে। অথচ ওই সম্পত্তি আমাদের দখলে রয়েছে। আমরা এখানে বসবাস করে আসছি।
গুতিয়াবো এলাকার নাম না প্রকাশ শর্তে অনেকেই জানান, মোর্শেদ আলম মেম্বারসহ তার লোকজন প্রতারণার মাধ্যমে জাল দলিল ও ভুয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেট বানিয়ে সরকারী সম্পত্তিসহ বিভিন্ন নিরীহদের সম্পত্তি আত্বসাত করেছে। এসব ব্যপারে ভুক্তভোগীসহ কেউ প্রতিবাদ করলে এলাকার প্রভাব দেখিয়ে মামলা হামলা ও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে থাকে মোর্শেদ আলম। তার একটি বাহিনী রয়েছে। আর ওই বাহিনী দিয়ে জমি-জমা জবরদখল করে থাকে। মোর্শেদ আলম মেম্বারের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে সরকারী অর্পিত সম্পত্তি বায়না ও ব্যপক ক্ষমতাযুক্ত আমমোক্তারনামা দলিল রেজিষ্ট্রি করার কথা স্বীকার করে মোর্শেদ আলম মেম্বার বলেন, আমার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে এবং ছবি ও এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে কেউ রেজিষ্ট্রি করেছে। এসব ব্যপারে আমি কিছুই জানি না। এছাড়া আমার কোন বাহিনী নেই। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য আমাদের কাছে দিয়েছেন। আমার স্বাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিত্বে সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম বিজ্ঞ আদালতের বিষয়।