বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেছেন, এই নারায়ণগঞ্জে বসে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছিল। খান সাহেব ওসমান আলীর বাস ভবন বাইতুল আমানে বসেই আওয়ামীলীগ গঠন করা হয়েছে। এই সকল ইতিহাস আমাদের জানতে হবে। কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। আপনার আমাদের এমপি সাহেবের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী, ৭০’র নির্বাচনে তার পিতা আমাদের প্রিয় নেতা বৃহত্তর ঢাকা জেলার নেতৃত্ব দানকারী একেএম শামসুজ্জোহা কিভাবে নেতৃত্ব দিয়ে ভূমিকা পালন করেছেন। এসকল ভূমিকার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে ১৯৪৮ থেকে বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে ৬ দফা, গণঅভুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৭১’র যুদ্ধ এসমস্ত সকল ইতিহাস আমাদেরকে জানতে হবে।
বৃহস্পতিবার ৮ মার্চ বিকেলে বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স তিন তলা ভবনটির উদ্বোধন কাল মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেছেন, এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের সরকার ভবিষ্যতে এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে নাকি ৭৫’র ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশকে যারা মিনি পাকিস্তানে পরিণত করতে চেয়েছিল সেই ধারায় ফেরত যাবে সেটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। বিপদের দিনে যে সকল শকুনীরা এই দেশের পতাকাকে খামচে ধরেছে আমরা কি দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করবো নাকি যারা জামায়াত যুদ্ধাপরাধীর গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে তারা দেশ চালাবে এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে। আমরা জয় বাংলা বলবো আর আমাদের সন্তানেরা অন্য কিছু বলবে এটা হতে পারে না। আগে রাষ্ট্র আপনার খবর নেয় নাই আপনিও হয়তো পরিবারের খোঁজ নেন নাই। আজকে রাষ্ট্র আপনার খোঁজ নিতে শুরু করেছে আপনাকেও পরিবারের খোঁজ রাখতে হবে। আমি বলবো শেষ হয়নি মাত্র শুরু হয়েছে। তাই বর্তমান সরকারকে আবারো আপনাদের ক্ষমতায় আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশে যতগুলো বধ্যভূমি রয়েছে সমস্ত জায়গায় সে সকল বধ্যভূমি সংরক্ষন করা হবে। যে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যে সকল রাস্তা গেছে সেই সমস্ত সকল রাস্তা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে হবে। ইতোমধ্যে এটি অনুমোদন হয়েছে। জেলা প্রশাসক বর্তমানে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বে রয়েছেন। ইউএনওরা উপজেলার দায়িত্বে রয়েছেন। আমি অনুরোধ করবো সরকারের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করবেন। কোন রাস্তা কার নামে হবে সেটা ডিসি ও ইউএনও এর পক্ষে জানা সম্ভব না। আপনারা নিজেরা কাগজে স্বাক্ষর দিলে কোন রাস্তা কার নামে হবে সেটা উনারা বাস্তবায়ন করে দিবেন।
আমাদের পাঠ্যসূচীতে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস লেখা থাকবে। একই ভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর যে ভূমিকা ছিলো কিভাবে তারা বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, মা বোনদের ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করেছে সেটাও পাঠ্যসূচীতে লেখা থাকতে হবে। দেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যত চাকরি হবে তার একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। একটি জনপ্রশাসন ও একটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে যাবে। যাতে আমারা যাচাই করে দেখতে পারি এটি সঠিক কিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের যাতে বছরের পর বছর মন্ত্রনালয়ে গিয়ে ঘুরতে না হয় তারজন্য আমরা সমস্ত তথ্য ওয়েব সাইটে দিয়ে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দুইটা জিনিস দিয়েছেন। মৃত্যুরপর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যেকের কবর একই রকম হবে এটা আগেই অনুমোদন হয়েছে। আর আমাদের একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। যেটি মেশিনের সামনে ধরলেই সকল মুক্তিযুদ্ধের সকল ইতিহাস চলে আসবে। আপনি ডিসির কাছে যান আর এমপির কাছে যান কোথাও আপনাকে দাড়িয়ে থাকতে হবে না। আপনাকে দেখা মাত্রই বসতে চেয়ার ছেড়ে দিতে হবে।
উদ্বোধন শেষে, দেশে যেসকল মুক্তিযোদ্ধার বাসস্থান নাই তাদের এই সরকার বাসস্থানের ব্যবস্থা করবেন। তার জন্য আজকে সভায় ২২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য নিয়ে ১০ মিনিটের ভিডিও ধারণ করা হবে। যা রোজ কেয়ামত পর্যন্ত সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। দেশে যে সকল স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে আমাদের যুদ্ধ হয়েছে সে সকল স্থানে একই ডিজাইনে সম্মুখ যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে দেশের যে কোন স্থানেই হোক। বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন মুক্তিযুদ্ধে নাকি এতো লোক শহীদ হন নাই বা এতো লোক যুদ্ধ করেন নাই। যা বলেছেন এটা আমি বললাম না। সে গুলো শত শত বছর পরেও সাক্ষ্য দিবে এখানে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে আমাদের যুদ্ধ হয়েছে।
এর আগে বেলা ১২টায় নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে শহরের চাষাঢ়া গোলচত্ত¡র থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে বর্নাঢ্য র্যালী বের হয়। র্যালীটি বঙ্গবন্ধু সড়ক হয়ে কমপ্লেক্স ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। র্যালীতে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ৫ (শহর ও বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। র্যালী চলাকালে রাস্তার দুপাশে দাড়িয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সহ নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের সাধারণ জনগন মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শন করেন।