স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ধর্মগুরুকে ধারালো চাপাতি দিয়ে হত্যা ও অন্যান্য পুজারীদের গুরুতর জখমের আতঙ্কসঞ্চারী ঘটনা অশুভ আগামীর ইঙ্গিত বহন করে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশে একদলীয় শাসনে জনগণকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার ভারী পাথর দিয়ে চেপে রাখলে চরমপন্থী জঙ্গী অন্ধশক্তির উত্থান ঘটার সম্ভাবনায় দেশের উৎকন্ঠিত নাগরিক সমাজ পূর্বেই বারংবার অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন। দেশে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা গেছে বর্বর বোধশক্তিহীন গোষ্ঠীর জন্ম হতে। যাদের বিবেকহীন সভ্যতা বিধ্বংসী কর্মকান্ডের বিভৎস দৃশ্য দেখতে হয় বিশ্ববাসীকে। আর যেসব দেশে এসব শক্তির উত্থান ঘটে সেসব দেশকে তারা নিয়ে যায় একেবারে খাদের কিনারায়।
তিনি বলেন, সামপ্রতিক সময়ে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা হত্যাকান্ড থেকে শুরু হয়েছে এই নিষ্ঠুরতম বর্বর পরিকল্পনার যাত্রা শুরু হয়েছে তা গত রবিবার পঞ্চগড় জেলাধীন দেবীগঞ্জে গিয়ে পৌঁছেছে। আর এইসব বর্বর পরিকল্পনার শিকার হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন অনেকগুলো মানবসন্তান। এদের মধ্যে যেমন বিদেশি নাগরিক আছেন তেমনি আছেন দেশের বিভিন্ন সমপ্রদায়ের মানুষ ও ধর্মাচার্য, ব্লগার, প্রকাশকসহ বেশকিছু ব্যক্তি।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- আমরা যেন জাতির গোরস্থানের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। এই চূড়ান্ত দুঃসময়ে জনমনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠছে, সরকার কী করছে ?
তিনি বলেন, এই সমস্ত মধ্যযুগীয় রক্তপাত থামাতে ভোটারবিহীন সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। কয়েক মাস ধরে একের পর এক হত্যাকান্ডের বিষয়ে সরকার নির্বিকার, হত্যাকান্ডের কোনো সুরাহাই সরকার করতে পারেনি। এই প্রাণবিনাশী আক্রমণ প্রতিহত করে প্রকৃত দুস্কৃতকারীদের ধরা তো দূরে থাক উল্টো ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানো এবং নেতাকর্মীদের নামে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলায় জড়ানো হচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি সরকারের আমল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রধান ও তার নেতারা বিএনপিকে জড়িয়ে বাংলাদেশে জঙ্গির অস্তিত্বের কথা তারস্বরে দেশে বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য রেখেছেন।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই আলট্রা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছেন তারা। অথচ বিএনপি সরকারের আমলেই জঙ্গী নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল, দ্রুত তৎপরতার মাধ্যমে জঙ্গিদেরকে ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী একটি সংস্থা দেশে সামপ্রতিক নৃশংস ঘটনাগুলোতে একটি জঙ্গি সংগঠনের দায় স্বীকারের বার্তার বিষয়ে বারবার উল্লেখ করলেও সরকার সেটিকে পাত্তা দেয়নি। সরকার এখন দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এটি মিথ্যাবাদী রাখালের চিৎকারের চারিত্র্যলক্ষণ। সত্যি সত্যি হিংস্র নেকড়ে এসে পড়েছে কী না তা নিয়ে জনগণের মধ্যে গভীর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশে বর্তমান একদলীয় অপশাসনে গণতন্ত্রের যবনিকাপাত ঘটেছে। একদলীয় কুশাসনে সমাজ জীবনে দুর্বৃত্তদের দুঃসহ দাপট, লুটপাট, হানাহানি, রক্তারক্তি চলছে। চলছে হিংসাকলহ চর্চা। সুতরাং গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতেই জঙ্গি অন্ধশক্তির সৃষ্টি হয়। বর্তমান অনুদার স্বৈরশাসনে বিতর্ক, সমালোচনা বা প্রতিবাদের অধিকারসহ মানুষের সকল অধিকার ও স্বাধীনতা বিলীন হয়ে গেছে। মূলত: নিবিড় নৈশব্দই ফ্যাসিষ্ট গোষ্ঠীর কাম্য হয়। অবরুদ্ধ নিরব অন্ধকারের সুযোগে হিংস্র অন্ধশক্তি রাষ্ট্রবিনাশী কাজে ধেয়ে আসে। আর এই শক্তিকে প্রতিহত করতে না পারলে জাতি হিসেবে বাংলাদেশীরা ভাবনা-চিন্তাহীন, কল্পনাহীন এবং স্বপ্নহীন হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভাষা-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সাহিত্য থেকে শুরু করে সঙ্গীত পর্যন্ত যুগ যুগ ধরে সৃজিত হয়ে আসছে বিভিন্ন ধর্ম সমপ্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য, সমপ্রীতি ও মানবপ্রেমের বাণী। সুতরাং এদেশে বিদেশি নাগরিক বা ধর্মগুরু হত্যা, উপাসনালয়ে হামলা, ব্লগার ও প্রকাশক হত্যায় জড়িত দুর্বৃত্তরা মানবতা, সভ্যতা ও আধুনিক রাষ্ট্রের বিরোধী। আমাদের আবহমানকলের সামাজিক ঐক্য ও সংহতির ঐতিহ্য বিনষ্টকারী এই সামপ্রতিক নৃশংসতা বিদ্যমান দুঃশাসনের পরিণতি।
বিএনপি চেয়ারপারসন অবিলম্বে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
তিনি দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত পুরোহিত যগেশ্বর রায়ের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং অবিলম্বে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান। তিনি মঠের আহত পুজারীদের সুস্থতা কামনা করেন।