বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যে বিশ্বব্যাংকের স্বীকৃতি বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনকে আরো বেগবান করবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বপরিমণ্ডলে তুলে ধরার জন্য বিশ্ব ব্যাংককে ধন্যবাদ। এই স্বীকৃতি আমাদের লক্ষ্য অর্জনকে আরো বেগবান করবে।’
আজ সোমবার ‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’। বিশ্ব ব্যাংক দিবসটি এ বছর ঢাকায় উদযাপন করছে। এ জন্য ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে হয়েছে ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গণবক্তৃতা।
দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য দেখিয়েছে এমন একটি দেশকে প্রতিবছর বেছে নেয় বিশ্ব ব্যাংক। ওই দেশে দিবসটির মূল অনুষ্ঠান করে থাকে। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ এবার বাংলাদেশকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৪ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এরপর থেকে অর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। দৃঢ় নেতৃত্ব ও এদেশের মানুষের কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণের সক্ষমতা বাংলাদেশকে নিন্ম-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছে। আমাদের লক্ষ্য অর্জন সহজ ছিল না। আজ আমরা অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয়।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের দরিদ্রের হার ৭০ শতাংশের উপরে ছিল, যা হ্রাস পেয়ে ১৯৯১ সালে হয় ৫৬.৫ শতাংশ। আর বর্তমানে দরিদ্রের হার ১২.৪ শতাংশের নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দেশে চরম দরিদ্যের হার ১২ শতাংশ। ২০২১ সালের মধ্যে যা ৭ থেকে ৮ শতাংশ নামিয়ে আনব এবং আমরা তা পারব। আমাদের লক্ষ্য দরিদ্র শব্দটি নির্মূল করা।’
সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে- এমন কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১০ বছরে জাতীয় আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সর্বশেষ বছরে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। যেখানে গড় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আশা করছি আমরা অর্জন করতে সক্ষম হব।’
তিনি বলেন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার দাঁড়িয়েছে। গত ৭ বছরে রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নতি হয়েছে। বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে আয় ছিল ২৮৫ বিলিয়ন টাকা, যা ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন টাকা। বিদ্যুৎ্ উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে ৫৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্থানীয় সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭১ বছরে দাঁড়িয়েছে। মানব সূচক উন্নয়নে বাংলাদেশ ২০১৪ সালে ১৪৩তম স্থানে রয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল দেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নত দেশে আইসিটি সেবা রপ্তানি করছে। সমাজে সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার। ইতিমধ্যে নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছি। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। স্থানীয় সরকারে সাড়ে ১২ হাজার নারী প্রতিনিধি রয়েছে। পোশাক খাতে ৩৫ লাখ নারী কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘দূর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসিত হলেও আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ এখনো অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এর প্রভাবে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আশা করি জলবায়ুজনিত চুক্তি বাস্তবায়ন করবে। জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি বিবেচনায় আমরা জলবায়ু সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত রেখেছি।’
জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব এখন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চ্যালেঞ্জের সন্মুখীন। যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস মোকাবিলায় আমরা সফলতা দেখিয়েছি। ইতিমধ্যে জঙ্গিবাদ দমনে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গিবাদের মূল সমাজ থেকে দূর করতে আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিমধ্যে নিন্ম-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি এবং বিশ্বাস করি সহসাই স্বল্প উন্নয়নের ক্যাটাগরি থেকে বেরিয়ে আসব। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমাদের প্রত্যাশা, আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বিশ্বব্যাংকের অংশীদারিত্ব আরো শক্তিশালী হবে।’
এর আগে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতি অনুকরণীয়। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্য দেশও সুফল পাবে। এই অভিজ্ঞতা অন্য দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য উদ্ভাবনী ধারণার প্রবর্তন যে খুবই জরুরি, তা বাংলাদেশ খুবই দ্রুত অনুধাবন করতে পেরেছে। জনগণের পেছনে বিনিয়োগ করা ঠিক ততটাই জরুরি, যতটা জরুরি অবকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ। অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সেই বিনিয়োগ বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে।’