নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীণতার কারণে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ওয়াসার পানি ব্যবহারে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বন্দর অঞ্চলের ৯টি ওয়ার্ডের জনসাধারণকে অত্যন্ত দুর্বিষহ অবস্থায় জীবন যাপন করতে হচ্ছে। পানির অপর নাম জীবন বলা হলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষের ব্যবহার অনুপযোগী পানি সরবরাহের ফলে বর্তমানে পানির অপর নাম যেন মরনে পরিণত হয়ে উঠেছে। পানির সঙ্গে এমন কিছু উপসর্গ যুক্ত হয়েছে চোখে-মুখে পানি লাগলেই জ্বালাপোড়া শুরু হয়। গোছল করার পরও শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকায় এবং চাকার মতো ফুলেও যায়। ওয়াসার এই পানি ব্যবহারে শিশুদের গায়েও চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। শুধু তাই নয়,ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি এতটাই বিষাঁক্ত হয়ে উঠেছে এ পানি ফুটিয়েও পান করা দায় হয়ে পড়েছে। যে কারণে ডায়রিয়া আমাশয়ের মতো জটিল রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। এক্ষেত্রে কার্যকর কোন উদ্যোগ না নেয়ায় দীর্ঘ দিন ধরেই ১৯ নং ওয়ার্ড হতে শুরু করে ২৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরকে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরের সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডের শান্তিনগর হতে শুরু করে মদনগঞ্জ বটতলা,লক্ষ্যারচর,বকুলতলা,টিক্কারমোড়,ইসলামপুর,নয়াপাড়া,পিএম রোড,কাঠপট্রি,গাউছ দরবার, ফরাজীকান্দা, মাহমুদনগর, বেপারীপাড়া, দড়ি সোনকান্দা, সোনাকান্দা, পশ্চিম হাজীপুর, সোনাকান্দা, চৌধূরীপাড়া, এনায়েতনগর, ঋৃষিপাড়া, ত্রিবেনী, রূপালী গেইট, রূপালী আবাসিক এলাকা, বাবুপাড়া,সালেহনগর,বন্দর শাহী মসজিদ,দত্তবাড়ী কলোনী,খালপাড়,হাফেজীবাগ কলোনী,কোর্টপাড়া,রাজবাড়ী,জামাইপাড়া,এইচ এম সেন রোড,বাড়ইপাড়া,আমিন আবাসিক এলাকা,বন্দর বাজার,র্যালি আবাসিক এলাকা,লেজারার্স আবাসিক এলাকা,ময়মনসিংহপট্রি,বন্দর সিরাজুদ্দৌলঅ ক্লাব সংলগ্ন এলাকা,খান বাড়ীর মোড়,কবরস্থান রোড,স্বল্পেরচক,একরামপুর,ইস্পাহানী বাজার,একরামপুর কলোনী(সাবেক পৌরসভা মোড়),কদমরসুল মাঠপাড়া,কবিলের মোড়,বাগবাড়ী,রসুলবাগ,কদমরসুল দরগাহ এলাকা,লতিফ হাজীর মোড়,ইসলামবাগ,নবীগঞ্জ বাজার.জিএ রোড,নোয়াদ্দা,কাইতাখালি,আমিরাবাদ,বক্তারকান্দি,দেউলি,চৌড়াপাড়া,লক্ষণখোলা,ঢাকেশ্বরী মিল এলাকা,রামনগর,ধামগড় ইস্পাহানী,সোনাচড়া,কুঁড়িপাড়া,গকুল দাসেরবাগ,ফুলহর ও সর্বশেষ ২৭ নং ওয়ার্ডের হরিপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পানির হাহাকার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে। যে কোন মুহুর্তে উল্লেখিত অঞ্চলের জনসাধারণ বিশুদ্ধ পানির দাবিতে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে বিস্ফোরন্মুখ হয়ে উঠতে পারে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক ব্যবসায়ী জানান,নারায়ণগেেঞ্জর শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ের মানুষ দীর্ঘ দিন ধরেই অবহেলিত। এ অঞ্চলের শীতলক্ষ্যা সেতুর উপর দিয়ে সেতু হওয়ার স্বপ্ন আদিকাল থেকেই দেখে আসছে তার উপরে আবার বছরের পর বছর ধরে বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষের জীবন-মরনের প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পানির অভাবে খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছে। এসব ভয়াবাহ পরিস্থিতি হতে নগরবাসীকে উত্তরণের জন্য কারো কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। বিষয়টি ওয়াসা কর্তৃপক্ষের নজরে নানাভাবে উপস্থাপনের পরও তারা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালণ করছে। আরেক ভুক্তভোগী একই শর্তে জানান,ওয়াসায় কর্মরত অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীই দায়িত্বহীণ তা না হলে শীতলক্ষ্যার বর্জ্যমলমূত্র মিশ্রিত পানি কিভাবে সরবরাহ হয়ে থাকে। অনেক সময় এসব পানির লাইন দিয়ে সাপ,কেঁচো এমনকি ব্যাঙও দেখা যায়। কোনপ্রকার রিফাউন্ড না করে এসব পানি সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা না থাকায় ওয়াসার আদি সমস্যা মহা সমস্যায় রূপান্তরিত হয়ে উঠেছে। কর্মস্থল এবং মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা সম্পর্কে তাদের কোন গুরুত্বই নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শীতলক্ষ্যা থকে যে প্রক্রিয়ায় পানি সংগ্রহ করা হয় তাতে পানি বিশুদ্ধ হয়না। তাছাড়া পানি বিশুদ্ধ করতে গিয়ে অনেক সময় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অতিমাত্রায় ক্যামিকেল ব্যবহার করে যার দরুন পানি দুর্গন্ধযুক্তই রয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে,শীতলক্ষ্যার দূষিত পানি পরিশোধন করে ওয়াসা তা কতটুকু বিশুদ্ধ করতে পারে সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। পানির মান যতই ভাল হোকনা কেনো গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর পর তা আর পানযোগ্য থাকেনা। মূলতঃ আবাসিক ভবনগুলোর রিজার্ভ বা ওভারহেড ট্যাংক নিয়মিত পরিস্কার না করার কারণে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিক যাচ্ছে। ওয়াসার পুরনো পাইপ লাইনগুলোরও পরিবর্তণ কিংবা সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে এসব সমস্যা সমস্যাই থেকে যাবে। অবধারিত দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নগরবাসী নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব একেএম সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী’র হস্তক্ষেপ কামনা করছে।